|
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬ মে প্রকাশিত প্রাথমিক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটের ফলে বামপন্থী সমাজবাদী দলের প্রার্থী ফ্রান্সোয়া ওলোঁদ ৫১.২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অল্প ব্যবধানে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজিকে পরাজিত করেছেন তিনি। তিনি হচ্ছেন ফ্রান্সের গত ১৭ বছরে প্রথম সমাজবাদী দলের প্রেসিডেন্ট। এর মাধ্যমে ১৯৯৫ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ডানপন্থী রক্ষণশীল দলের শাসন শেষ হলো।
এবারের নির্বাচনে ওলোঁদ ফ্রান্সের মানুষের মনোভাব বুঝেছেন। তিনি জানেন যে গত পাঁচ বছরে ফ্রান্সের মানুষ সাকোর্জি সরকার সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তিনি নতুন ধারণা পেশ করেছেন, তা হচ্ছে 'সংস্কার'। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে 'বিকল্প' ও 'পরিবর্তন'খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রান্স এখন গুরুতর ঋণ ও বেকারত্ব সংকটে পড়েছে। ফ্রান্সের মানুষ প্রবল পরিবর্তন চায় বলে এবারের নির্বাচনে ওলোঁদ সাকোর্জির চেয়ে এগিয়ে আছেন। তাঁর অভিযানের শ্লোগান হচ্ছে 'পরিবর্তন, অম্লানবদনে'। ৪১ পৃষ্ঠার প্রচারাভিযানের তালিকায় ওলোঁদ ৬০টি অভিযান কর্মসূচী লিখেছেন। এতে রয়েছে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাস ও করসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র। তিনি বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, চাকরি বাড়ানো, কল্যাণ উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায় ত্বরান্বিত করা এবং ধনীদের কর বৃদ্ধি। সংকটে থাকা ফ্রান্সের মানুষের প্রতি ওলোঁদের প্রতিশ্রুতি চিত্তাকর্ষক।
দেশের অর্থনীতি উন্নত করার ব্যাপারে ওলোঁদ বলেছেন, সংকোচনের আগে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রাখা আরো বেশি প্রয়োজনীয়। গণ-ব্যয় বৃদ্ধির সমর্থক তিনি। বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১ শতাংশ বজায় থাকবে। দেশের ভোক্তা বাজার সম্প্রসারণ করে ফ্রান্সের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ দ্রুত হবে। যাতে ফ্রান্সের অর্থনীতি ২০১৭ সালে আয় ও ব্যায়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে ওলোঁদের প্রচারাভিযান উপদেষ্টা পিয়েরে মস্কোভিচি বলেছেন, ওলোঁদ শপথ গ্রহণ করার পর, জার্মানি হবে তাঁর সফর তালিকার প্রথম দেশ। তিনি জার্মানির প্রধানমন্ত্রী অ্যানজেলা মার্কেলের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। যাতে ফ্রান্স-জার্মানি সম্পর্ক ভাঙ্গার উদ্বেগ দূর হবে। আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়েনের বিষয়ে ওলোঁদ বলেন, ২০১২ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে ফ্রান্সের সব সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে।
ওলোঁদের নেতৃত্বধীন বামপন্থী সমাজবাদী দলের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অতীতে ভালো ছিল না।। তবে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক বলেছেন যে, ফ্রান্সের সমাজবাদী দলের মধ্যে অনেক উত্থান পতন ঘটেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে এ দলের সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে, চীনের প্রতি ওলোঁদের দল বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করেছে। যেমন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে, ফ্রান্সের ১৩টি এলাকায় বসন্তকালীন প্রসাধনী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ১৩টি অঞ্চলের চায়না টাউনে এসে অধিবাসীদের প্রতি প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন ওলোঁদ। ওলোঁদ একজন বিশেষ কর্মকর্তা পাঠিয়ে ৩০ এপ্রিল প্রচারাভিযানের কেন্দ্রস্থলে চীনা মিডিয়ার জন্য একটি বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। এতে চীনের প্রতি তাঁর ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া, ওলোঁদের মুখপাত্র চীনা গণমাধ্যমের সংবাদদাতাদের বলেছেন, যদি ওলোঁদ ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট হন তাহলে চীন-ফ্রান্স সম্পর্ক হবে জার্মানি-ফ্রান্স সম্পর্কের পর ফ্রান্সের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে চীন-ফ্রান্স সম্পর্ক ওলোঁদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করছে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |