|
ক. তোমরা কিভাবে ওয়েইফাংয়ে গেছ? ট্রেনে না বিমানে?
খ.আমরা দ্রুতগামী ট্রেনে বসে ওয়েইফাং গেছি। প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে এখানে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উত্সব আয়োজিত হয়। প্রাচীনকাল থেকে ওয়েইফাং চীনের ঘুড়ি উত্পাদনের স্থান। ওয়েইফাংয়ের হাতের তৈরী ঘুড়ি বিশ্ব বিখ্যাত। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘুড়ি খেলোয়াড় ও প্রতিনিধি দল এখানে এসে ঘুড়ি উত্সবে অংশ নেন।
ক.আমরা তো জানি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। ঘুড়ি মানুষের মনে একটি রোম্যান্টিক জিনিস। কারণ মানুষ পাখির মতো উড়তে পারে না, তবে ঘুড়ি উড়ানোর মাধ্যমে আকাশে যাত্রা করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে।
খ. তুমি খুবই ভালো বলেছো। আমারও একই রকম মন্তব্য আছে। প্রাচীনকালে প্রায় ২০০০ বছরেরও আগে চীনের ছুনছিউ আমলে চীনা লোকরা বাঁশ ও কাগজ দিয়ে ঐতিহ্যিক ঘুড়ি তৈরী করতো। তা হল প্রাচীনকালে চীনের সবচেয়ে পুরনো ঘুড়ি।
ক.এতক্ষণ আমরা ঘুড়ি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়েছি। তাহলে আমরা শ্রোতাবন্ধুদের জন্য ঘুড়ি সম্পর্কে একটি গান শোনাবো কেমন?
খ. আচ্ছা, গানের নাম ঘুড়ি, গায়িকা হলেন সিংগাপুরের বিখ্যাত শিল্পী সুন ইয়ান জি। চলুন একসাথে গানটি শুনি।
(রে ১ ঘুড়ি)
ক. সুন্দর গানটি শোনার পর এখন আমরা চীনের ঘুড়ির ইতিহাস সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য জানাবো, কেমন?
খ.আচ্ছা। প্রাচীনকালের ছুনছিউ আমলে কাগজের ঘুড়ি আবিষ্কৃত হওয়ার পর লোকজন বসন্তকালে বাইরের মাঠে ঘুড়ি উড়াতে শুরু করে। থাং ও সোং রাজবংশের অনেক কবিতায় লোকজনের ঘুড়ি উড়ানোর দৃশ্যের বর্ণনা করা রয়েছে।
ক.ঘুড়ি উড়ানো সম্পর্কে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। ছোটবেলায়—
খ. আমার মাধ্যমিক স্কুলে তখন চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসতো। আমার বাবা আমার চোখের জন্য প্রতি সপ্তাহে আমাকে নিয়ে ঘুড়ি উড়াতে যেতেন। তখন আমার দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যায়।
ক.আরেকটি কথা ঘুড়ি উড়ানো মাথা ও মেরুদন্ডের অসুস্থতা প্রতিরোধ করার জন্য অনেক সহায়ক। যারা সবসময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন তারা প্রতি সপ্তাহে ঘুড়ি উড়তে পারলে অবশ্যই শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবে।
খ. আচ্ছা, তাহলে ঘুড়ি উড়ানোর ভুমিকা বলার পর আমরা আরেকটি গান শুনবো, কেমন?
ক.—গানের নাম ঘুড়ি ও বাতাস। গানের গায়িকা চীনের হংকংয়ের একটি বিখ্যাত গায়িকা দল টুইনস্
(রে ২ ঘুড়ি ও বাতাস)
খ.ওয়েইফাং শহরে আসার পর রাস্তার দু'পাশে নানা স্থানে ঘুড়ি সম্পর্কিত উপাদান দেখা যায়। যেমন ঘুড়ি চত্বর, ঘুড়ি বিক্রির দোকান এবং ঘুড়ির কারখানা ইত্যাদি। ওয়েইফাং শহরের পুরনো নাম ওয়েই জেলা। এটি চীনের চারটি পুরনো ঘুড়ি তৈরী স্থানের অন্যতম। ওয়েইফাং অঞ্চলের লোকরা প্রাচীনকাল থেকে ঘুড়ি তৈরী ও ঘুড়ি উড়ানোর রীতিনীতি বজায় রেখেছে।
ক. আমি শুনেছি ওয়েইফাং শহরের মাটি ভাষ্কর্য্য, বয়ন প্রকৌশল ও কাঠ খোদাইসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের প্রযুক্তি অনেক উন্নত এবং কাঠ খোদাই স্টাইলের ঘুড়ি ওয়েইফাং শহরের ঘুড়ির সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
খ. হ্যাঁ,তুমি ঠিক বলেছ। এবার আমাদের সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় ওয়েইফাং ঘুড়ির কারখানার জন্মস্থান--ইয়াংচিয়াবু রীতিনীতি গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে কাঠ খোদাই কারখানা, ঘুড়ি তৈরীর কারখানা, বয়ন হস্তশিল্পকর্মের দোকান সবই দেখা যায়।
ক.তাহলে সেখানে গিয়ে কেমন লাগল?
খ.খুবই ভালো লেগেছে। আমরা বাসে বসে ইয়াংচিয়াবু গ্রামে যাই। ৫ নম্বর বাসে বসে ওয়েইফাং শহর থেকে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। এ গ্রাম হানথিং এলাকায় অবস্থিত। এ গ্রামের বাইরে প্রাচীনকালের স্থাপত্যের ডিজাইন অনুযায়ী স্থাপনা করা হয়। রাস্তার দু'পাশে সবই ধূসর রঙয়ের দোয়াল এবং নানা রঙয়ের সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে আছে।
ক. এ গ্রামের গ্রামবাসীরা কি সবাই ঘুড়ি তৈরী করতে পারেন?
খ. না, তবে অধিকাংশ লোক ঘুড়ি তৈরীর প্রকৌশল জানে।
ক. তোমরা সেখানে কি ঘুড়ি কারখানায় ঘুড়ি তৈরীর পদক্ষেপ দেখেছ?
খ.হ্যাঁ,অবশ্যই। ছালাউদ্দিনও অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলেছেন। আমি ঘুড়ি শিল্পীর সাথে কথাবর্তা বিনিময় করেছি। উনি আমাকে জানিয়েছেন যে, ইয়াংচিয়াবু গ্রামের ঘুড়ি সবই হাত দিয়ে তৈরী করা হয়। একটি ঘুড়ি তৈরী করতে কমপক্ষে ৬১টি পদক্ষেপ লাগে এবং দুই তিনজন কর্মী একসাথে তা সম্পন্ন করতে পারে। একদিনের মধ্যে পেশাগত কর্মী ও শিল্পীরা শুধু দুই বা তিনটি মাঝারি সাইজের ঘুড়ি তৈরী করতে পারেন।
ক.---তা তো খুবই কঠিন ব্যাপার। কথাবার্তা বলতে বলতে সময় দ্রুত চলে যায়। আমরা এখন শ্রোতাদেরকে আরেকটি ঘুড়ির গান শোনাবো,কেমন?
খ. আচ্ছা, ঠিক আছে। এ গানের নামও ঘুড়ি,তবে গায়িকা হল চীনের নতুন একজন শিল্পী, তার কন্ঠও খুবই মিষ্টি, গায়িকার নাম স্যুয়ান জি।
(রে ৩ ঘুড়ি)
ক. সুন্দর ও মিষ্টি গান,তবে শুনে একটু দুঃখ লাগে। এ গানের মাধ্যমে প্রেমিক ও প্রেমিকার বিচ্ছেদের পর মনের দুঃখ বর্ণনা করা হয়। তাহলে এবার ২৯তম আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উত্সবের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো?
খ. খুবই ভালো। বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৫০টিরও বেশি প্রতিনিধি দল এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরাও অংশ নিয়েছি। ঘুড়ি সম্পর্কে একটি সুন্দর নাচ গান অনুষ্ঠান প্রদর্শন করা হয়েছে। তুমিও জানো এ বছর হল চীনের ড্রাগন বর্ষ। এ কারণে অনুষ্ঠানে মঞ্চে দুটি বড় সাইজের ড্রাগন মাথার কয়েক দশক মিটার লম্বা ঘুড়িকে সাজানো হয়েছে।
ক. তাই নাকি? আমি শুনেছি বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দলও ওয়েইফাংয়ে চলে এসেছেন এবং ঘুড়ি উড়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।
খ. হ্যাঁ, তাদের সাথে আমাদেরও দেখা হয়েছে। বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের প্রধান বেনু সাহেব হলেন আমার পুরনো বন্ধু। উনি বারবার চীনের ঘুড়ি উত্সবে অংশ নিয়েছেন এবং চীনা ঘুড়ি সম্পর্কে অনেক মজার কথা বলেছেন।
ক.তোমার কথার মাধ্যমে আমি এ অনুষ্ঠানের মজার ধারণা কিছু বুঝতে পেরেছি। আগামী বছর সময় পেলে আমিও সেখানে যাবো এবং ঘুড়ি উড়াবো।
খ. হ্যাঁ,সেখানে অবশ্যই যেতে হবে। এখন ঘুড়ি শুধু এক রকম খেলাধুলা নয়, তবে চীন ও বিশ্বের ঘুড়ি খেলোয়াড় ও ফ্যানদের মধ্যে আদান-প্রদান ও মৈত্রীর প্রতীক। বাংলাদেশের ঘুড়ি ফেডারেশনের একজন সদস্য আমাকে বলেছেন, মানুষ আকাশে উড়তে পারে না, তবে ঘুড়ি উড়তে পারে। আমরা হাতের সুর দিয়ে ঘুড়ি নিয়ন্ত্রণ করি এবং আকাশে উড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি,একটা খুবই মজার ও স্বাধীনর ব্যাপার।
ক. হ্যাঁ,উনি খুবই ভালো কথা বলেন। সময় দ্রুত চলে যায়, ঘুড়ি সম্পর্কে আমরা অনেক কথা বলেছি,তবে অনুষ্ঠান শেষের আগে আমি শ্রোতাবন্ধুদের জন্য আরেকটি সুন্দর গান শোনাতে চাই।
খ.আচ্ছা, এ গানের নাম হল শান্তভাবে বসে থাকা। গায়িকা হলেন চীনের তাইওয়ান প্রদেশের বিখ্যাত শিল্পী লিউ রুও ইং।
চলুন একসাথে গানটি শুনবো আমরা। সুবর্ণা/আবাম।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |