|
চৈত্রসংক্রান্তিতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে চড়ক পূজার মেলা বসে। এসব মেলায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজ শিল্পীরা আসেন। কারুশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত সামগ্রী পাওয়া যায় এসব মেলায়। চড়কের মেলায় বাউল,মুর্শিদী,মারফতি,গম্ভীরা ও গাজন গানের আসর বসে। চৈত্রসংক্রান্তিতে স্নান, ঘরদুয়ারে অষ্টধাতুর পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন লোকাচার পালন করা হয় গ্রামবাংলায়। চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠির মধ্যে শুরু হয় বিজু উত্সব। প্রথম দিন ফুল বিজু,দ্বিতীয় দিন মুল বিজু ও শেষ দিনে বিজু নাচ অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে মার্মা জনগোষ্ঠি সাংগ্রাই উত্সব পালন করেন আর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি পালন করেন বৈশাখী। এ তিনটি উত্সব মিলে হয় বৈসাবি।
পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের উত্সবে মেতে ওঠে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। ঢাকার রমনার বটমূলে শুরু হয় বর্ষবরণের মূল উত্সব। সূর্য ওঠার সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসো হে বৈশাখ গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ছায়ানট,বুলবুল ললিতকলা একাডেমি,নজরুল একাডেমি, উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। রমনায় লাখো জনতার সমাবেশ হয় এ অনুষ্ঠানে। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত হয় বর্ষবরণের শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন লোকজ প্রতীক যেমন, লক্ষ্মী পেঁচা, ময়ূর,কুলা,টেপা পুতুল,হাতি, ঘোড়া,পাখি,মুখোস ইত্যাদির প্রতিকৃতি শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ । চারুকলার বকুলতলা,রবীন্দ্র সরোবর,বাংলা একাডেমী,প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক উত্সবের আয়োজন করা হয়। বর্ষবরণ উত্সবের রয়েছে বিশেষ পোশাক । এদিন মেয়েরা লাল সাদা রংয়ের শাড়ি পরেন। কপালে লাল টিপ,হাতে কাচের চুড়ি,চুলে ফুলের মালা জড়িয়ে সাজসজ্জা করেন তারা। ছেলেরা পাঞ্জাবী,কুর্তা বা ফতুয়া পরেন। বাংলা একাডেমীসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসে বৈশাখী মেলা। চৈত্র বৈশাখ মাসে সারা দেশ জুড়েই মেলা বসে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বসে চারু ও কারুশিল্পমেলা।
চট্টগ্রামের বলী খেলা ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী উত্সবের অন্যতম আকর্ষণ। এ উপলক্ষ্যে বসে বৈশাখী মেলা।
পহেলা বৈশাখে বাংলার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পুরোনো বছরের হিসেব মিলিয়ে এদিন নতুন হিসেবের খাতা খোলা হয়। এ উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখে বাংলার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় গণেশ পূজার আয়োজন করেন।
বর্ষবরণ উত্সব উপলক্ষ্যে গ্রামবাংলায় আয়োজিত হয় নৌকাবাইচ,ষাঁড়ের লড়াই,মোরগ লড়াই,কাবাডিসহ বিভিন্ন খেলা,জারি, সারি, কবিগানের আসর,মেলা,পুতুলনাচ ও যাত্রাপালা।
বর্ষবরণ উত্সবের রয়েছে বিশেষ খাবার। পান্তাভাত, ইলিশ মাছ ভাজা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী খাবার। এ ছাড়া রয়েছে তিলভর্তা, কালোজিরার ভর্তা, রসুন, আলু, বেগুন, শুটকিমাছসহ বিভিন্ন রকম ভর্তার আয়োজন। নতুন চালের পায়েস এ দিনের অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ। আর রয়েছে বাংলার বিশেষ ঐতিহ্যবাহী পিঠা। নকশী পিঠা,চিতই পিঠা, পাটিসাপটা,চন্দ্রপুলি, মুগপুলি, পাকানপিঠা, ক্ষীরপুলি, ক্ষীরসা, চই পিঠা, গোকুলপিঠাসহ বিভিন্ন রকম পিঠা বানানো হয় গ্রাম বাংলায়।নববর্ষে মুড়ির মোয়া,চিঁড়ার মোয়া,তিলের নাড়ু,বাতাসা,তিলের খাজাসহ বিভিন্ন রকম মিষ্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। পহেলা বৈশাখে কলকাতার সবচেয়ে বড় মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় নন্দনের রবীন্দ্রসদনে। এর নাম সংগীতমেলা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এ মেলাটি আয়োজিত হয়।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলা ১৪১৯ সালকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ জুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রাম ও শহরের ঘরে ঘরে চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের উত্সব চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠিও পালন করছেন ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উত্সব।
পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উত্সব বাংলাভাষাভাষী জনসাধারণের প্রাণের উত্সব। বিগত বছরের সব হতাশা,দুঃখ,কষ্ট ভুলে ১৪১৯ সালকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশের মানুষ মেতে উঠেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য পর্বে আপনারা কী শুনতে চান তা আমাদের জানাতে পারেন। আপনাদের পরামর্শ ও শুভেচ্ছা আমাদের প্রেরণা দেবে। তাহলে জেনে নিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ben@cri.com.cn
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |