|
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল ১৩তম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা থেকে নিজ জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর জনগণের স্বীকৃতি প্রতিফলিত হয়। সম্প্রতি চীনের ওয়েবসাইটে অনেক নেট নাগরিক নিয়মমাফিকভাবে চীনা ভাষা লেখার বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। কেউ কেউ উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন যে, কয়েকটি চীনা অক্ষর ৯৮ শতাংশ মানুষ ভুল করে লেখেন। এ প্রসঙ্গে চীনের একজন জ্যেষ্ঠ চীনা ভাষা শিক্ষক - ফাং ইন চিয়াং সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, চীনা ভাষার মধ্যে অনেক শব্দ লিখতে খুব সহজে ভুল হতে পারে। সেজন্য এর ওপর সত্যি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সঠিকভাবে চীনা ভাষা লেখার ওপর শিশুদের লেখাপড়ার সময় থেকে গুরুত্বরোপ করা দরকার। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই মাতৃভাষাকে ভালোবাসি, মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিই। মাতৃভাষা হচ্ছে মানুষের নানা জ্ঞান ও বুদ্ধির প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা। ফলে আমাদের ভালোভাবে মাতৃভাষা শেখা ও ব্যবহার করা দরকার।'
আমাদের সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন যে, চীনের চেচিয়াং প্রদেশের নিংপো শহরের কিছু কিন্ডারগার্টেনে নিংপোর স্থানীয় ভাষা শেখার কোর্স চালু হয়েছে, যাতে শিশুরা ছোট বেলা থেকে নিংপোর বৈশিষ্টপূর্ণ ভাষার সংস্কৃতি উপলব্ধি করতে পারে। এ কিন্ডারগার্টেনগুলোতে 'আলানিংপো' অর্থাত্ 'আমি নিংপোবাসী' নামে' একটি পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়। শিক্ষকরা নিংপোর স্থানীয় ভাষা দিয়ে শিশুদেরকে ছোট গল্প ও ছড়া শিখান। একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান ইয়াও চিয়ে বলেন, 'নিংপোর স্থানীয় ভাষা হচ্ছে সংস্কৃতির অন্যতম। এখন অনেক বাবা-মা কেবল ম্যান্ডারিন সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, কিন্তু নিংপোর স্থানীয় ভাষার অস্তিত্ব উপেক্ষা করেছেন। এ স্থানীয় ভাষার সংস্কৃতি যাতে বিলীন না হয়, সেজন্য আমরা পাড়া কমিটি থেকে প্রবীণদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে শিশুদেরকে স্থানীয় ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করেছি।'
মাতৃভাষা জনগণের বিনিময়ের হাতিয়ার এবং সংস্কৃতি ও মর্যাদার প্রতিনিধি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বের প্রায় ৬০০০টি ভাষার মধ্যে ৯৬ শতাংশ ভাষার ব্যবহারকারী কেবল মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ। অর্থাত্ হাজার হাজার ভাষা মৌলিক শিক্ষা ব্যবস্থা, তথ্যমাধ্যম, প্রকাশিত পুস্তক বা গণস্থানে আসতে পারে না। যদি কোনো ফলপ্রসূ উদ্ধার ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে বিশ্বের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ভাষা বিলীন হয়ে যাবে।
এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এক ভাষণে বলেন, গত ১২ বছর ধরে ইউনেস্কো প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করে এবং ভাষার বৈচিত্র রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এবারের ১৩তম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে বহু ভাষা ব্যবহার করে সর্বক্ষেত্র অন্তর্ভুক্তমূলক শিক্ষা এগিয়ে নেয়া। ভাষার বৈচিত্র হচ্ছে আমাদের অভিন্ন উত্তরাধিকার এবং একটি দুর্বল উত্তরাধিকার। কোনো ভাষা বিলীন হওয়া হচ্ছে গোটা মানবজাতির জন্য লোকসান। প্রতিটি ভাষা আমাদের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব বহন করে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র আর প্রাকৃতিক জগতে প্রাণীর বৈচিত্র একই রকমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ভাষার মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের সুপ্ত শক্তি আছে। ভাষার প্রাণশক্তি সকল ব্যবহারকারী আর সক্রিয় সংরক্ষণকারীদের ওপর নির্ভর করে। ইউনেস্কো এ সব মানুষকে শ্রদ্ধা করে এবং শিক্ষানীতি প্রণয়ন আর সামাজিক সংহতি উন্নয়নের সময় সবাই তাদের কণ্ঠস্বর শোনার প্রচেষ্টা চালায়।
সম্প্রতি আমরা আমাদের সিআরআই'র বাংলা ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে কয়েকজন শ্রোতাদের কিছু মন্তব্য পেয়েছি। এ সুযোগে আপনাদের সঙ্গে সেটাও ভাগ করতে চাই।
বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার জজ আদালতের অ্যাডভোকেট খালিদ বিন চৌধুরী লিখেছেন, 'আপনাদের সকলের জন্য অত্যন্ত সুখী আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস কামনা করি। আপনাদের যেন সাফল্য আসে, সারা জীবন।'
বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার ঝাকুনীপাড়ার বন্ধু মাহফুজ রহমান লিখেছেন, 'ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার নিয়ে পরিবেশনাটি দারুণ হয়েছে। প্রাণবন্ত ও তথ্যবহুল একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের সবার জন্য রইল অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।'
(সংগীত)
বন্ধুরা, প্রত্যেক মানুষেরই একটি মাতৃভাষা আছে। তাহলে আমরা নিজের মাতৃভাষাকে ভালোভাবে ব্যবহার করবো, এবং নিজের মাতৃভাষা উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাবো। 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানের তালে তালে আজকের 'মুক্ত মন মুক্ত চিন্তা আসরটি' শেষ করছি। সবাই ভালো থাকুন। সুষ্ঠু থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |