|
ফুসফুস ক্যান্সার এমন একটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ক্ষতিকর টিউমার যা ফুসফুসে হয়। বেশির ভাগ ফুসফুস ক্যান্সার ব্রংক্যাসের মিউক্যাসে হয় বলে একে ব্রংক্যাস ক্যান্সারও বলা হয়। গত ৫০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর হার দুটোই দ্রুতগতিতে বেড়ে গেছে এবং ক্যান্সারে মারা যাওয়া পুরুষ রোগীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের স্থান প্রথম।
মানবজাতির স্বাস্থ্যের ওপর ফুসফুস ক্যান্সার গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়ালেও এখনও সারা বিশ্বেরপ্রায় এক-তৃতীয়াংশ ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর আগাম পর্যায়েকোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। সাধারণভাবে বলতে গেলে ফুসফুস ক্যান্সারের জায়গা, আকার, জটিলতা আছে কিনা বা ছড়িয়ে পড়েছে কিনা - সে অনুযায়ী এ ক্যান্সারের আগাম পর্যায়েরলক্ষণ ভিন্ন হয়। সাধারণত ফুসফুসের চারপাশে যে ক্যান্সার হয় তার আগাম পর্যায়েকোনো লক্ষণ থাকে না আর ফুসফুসের কেন্দ্রস্থলে যে ক্যান্সার হয় তার লক্ষণ আগে ধরা পড়ে এবং স্পষ্ট হয়।
ফুসফুস ক্যান্সারের আগাম পর্যায়েযে লক্ষণগুলো বেশি দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে জ্বর, গ্রন্থির ব্যথা, ত্বকে পরিবর্তন, এন্ডোক্রাইনেভারসাম্যহীনতা, কাশি, রক্তযুক্ত থুথু ও বুক ব্যথা। উল্লেখ করা দরকার যে, কোনো কোনো রোগীর শরীরে আগাম পর্যায়ে অল্প কিছু লক্ষণ দেখা দিলেও এর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় না বা ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় বলে এর চিকিত্সায়দেরি হয়। এ ব্যাপারে ডাক্তার ইয়াং কোওয়াং বলেন, সকলের উচিত প্রচলিত ফুসফুস ক্যান্সারের আগাম পর্যায়ের লক্ষণকে গুরুত্ব দেয়া এবং আগে নির্ণয় ও চিকিত্সা করানো।
বেশ কিছু রোগী সাধারণ শ্বাসনালী প্রদাহের সঙ্গে ফুসফুস ক্যান্সারের আগাম পর্যায়ের লক্ষণের পার্থক্য করতে পারে না। এ ব্যাপারে ডাক্তার ইয়াং বলেন, "সর্দি ও শ্বাসনালী প্রদাহের কারণে শ্বাসনালির বেশির ভাগ লক্ষণের সৃষ্টি হয়। কিন্তু যদি সে লক্ষণ বারবার দেখা দেয়, সেরে না গিয়ে বরং বেড়ে যায় এবং কাশির সাথে রক্তযুক্ত থুথু যায়, তাহলে সতর্ক হওয়া দরকার।"
ক্যান্সার প্রতিরোধেরআগে পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার কারণটা কী এ সম্পর্কে ডাক্তার ইয়াং বলেন, "ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ নানা ধরনের। অভ্যন্তরীণ কারণের দিক থেকে ক্যান্সারটি বংশগত কারণসহ রোগীর শারিরিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাইরের কারণ হলো ৯৯ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রমণে ধূমপান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।"
ডাক্তার ইয়াং বলেন, ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ এখন পর্যন্তও সম্পূর্ণ স্পষ্ট না হলেও বিপুল পরিমাণে চিকিত্সাগত তথ্য থেকে প্রমাণিত, ফুসফুস ক্যান্সারের বিপজ্জনক কারণের মধ্যে রয়েছে সিগারেট, অ্যাসবেস্টোস, রেডন, আর্সেনিক ও আয়নায়ন বিকিরণ। এগুলোর মধ্যে ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ। তাছাড়া আবহাওয়া দুষণ, পেশাগত কারণ এবং ফুসফুসের পুরাতন ব্যাধি ও বংশগত কারণ ফুসফুস ক্যান্সার ঘটাতে পারে।
ফুসফুস ক্যান্সারের ধরণ অনুযায়ী ডাক্তার ইয়াং কয়েকটি প্রতিরোধ পদ্ধতি তুলে ধরেন। এক, ধূমপান নিষিদ্ধকরণ বা নিয়ন্ত্রণ। দুই, আবহাওয়া দুষণ নিয়ন্ত্রণ। তিন, পেশাগত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যরক্ষা কাজ জোরদার করা এবং চার, দীর্ঘকালীন শ্বাসনালী প্রদাহ প্রতিরোধ করা। তাছাড়া মদ কম খাবেন, পচা-বাসি খাদ্য খাবেন না। লবনযুক্ত খাবার কম খাবেন। আস্তেআস্তে চিবিয়ে খাবেন এবং অতি গরম খাদ্য খাবেন না।
এছাড়া অতিরিক্ত চর্বিগ্রহণ করবেন না। এর পরিমাণ গ্রহণ করা মোট ক্যালরির ৩০ শতাংশের নিচে রাখতে হবে অর্থাত প্রতিদিনেরমাংসজাত চর্বি গ্রহণ ৫০-৮০ গ্রামেরমধ্যে নিয়ন্ত্রিতরাখতে হবে। টাটকা সবজি ও ফল খাবেন এবং প্রতিদিন ১০ গ্রাম আঁশ ও সাধারণ ভিটামিন গ্রহণ করবেন।
বর্তমানে ফুসফুস ক্যান্সার চিকিত্সায় পাশ্চাত্যে শল্যচিকিত্সা, রেডিওথেরাপি এবং রাসায়নিক থেরাপি বেশি প্রয়োগ করা হয়। বেশিদিন ধরে রেডিও থেরাপি এবং রাসায়নিক থেরাপি গ্রহণে রোগীর ওপর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিত্সা ও পাশ্চাত্য চিকিত্সা ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের প্রথম পছন্দ। ফুসফুস ক্যান্সার চিকিত্সায় চীনা চিকিত্সাবিদ্যার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ডাক্তার ইয়াং বলেন, "মুখে খাবার জন্য তরল ওষুধ। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিত্সাবিদ্যাগত দ্বান্দ্বিকতারভিত্তিতে চিকিত্সা করার ব্যাপারে বলা যায়, ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিত্সাবিদ্যার দ্বারা ক্যান্সার চিকিত্সায় মুখে খাবার তরল ওষুধ প্রধান উপায়। চীনা ডাক্তারির চোখে প্রত্যেক রোগীর ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ এবং অবস্থা ভিন্ন, তাই ওষুধের ব্যবস্থাপত্রও ভিন্ন হওয়া উচিত।"
এখন অধিক থেকে অধিক সংখ্যক ডাক্তার টিউমারের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি রোগীর জীবিত থাকার সময় এবং জীবিত থাকার গুণগতমানেরও ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। টিউমার সঙ্গে নিয়ে জীবিত থাকা এমনকি দীর্ঘকাল ধরে জীবিত থাকা এখন ক্যান্সার চিকিত্সা গবেষণার এক প্রধান দিকে পরিণত হয়েছে, যার ফলে ক্যান্সার চিকিত্সায় চীনা ভেষজ ওষুধের বিশেষ ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
যেমন ঐতিহ্যবাহী চীনা ডাক্তারি শুধু ক্যান্সারের কথা নয়, বরং রোগীর শারিরিক অবস্থারদিকও বিবেচনা করে। তাছাড়া ভেষজ ওষুধ সুস্থ সেলের ক্ষতি সাধন করে অপেক্ষাকৃতভাবে কম। আবার পাশ্চাত্য চিকিত্সার রাসায়নিক থেরাপিতে যে ক্ষতিকর ফল সৃষ্টি হয়, তা কমাতে চীনা ভেষজ ওষুধ বিশেষ ভুমিকা পালন করে এবং রোগীর জীবিত থাকার মেয়াদ ও গুণগতমান বাড়ায়। বিশেষ করে যেসব রোগীর অবস্থা মাঝামাঝি বা শেষ পর্যায়ে রয়েছে অথবা যারা রেডিও থেরাপি বা রাসায়নিক থেরাপি সহ্য করতে পারে না, তাদের পক্ষে ঐতিহ্যবাহী চীনা ভেষজ ওষুধের চিকিত্সা সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য, যা লক্ষণ প্রশমিত করতে, জীবিত থাকার মেয়াদ বাড়াতে এবং জীবিত থাকার গুণগতমান উন্নত করতে পারে।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |