Web bengali.cri.cn   
চীনের বসন্ত উত্সব
  2012-01-23 18:49:34  cri
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা,

আপনারা পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আপনাদের চীনের বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের 'নতুন আলোয় চীন' অনুষ্ঠান। পরিবেশন করছি আমি রুবী। আজ এ অনুষ্ঠানে আমার সাথে স্টুডিওতে উপস্থিত আছেন দু'জন বিশেষ অতিথি। তাঁরা হলেন আমাদের বাংলা বিভাগের বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং কবি ও গীতিকার আবাম ছালাউদ্দিন এবং আমাদের প্রবীণ সহকর্মী, তাঁর রয়েছে বাংলাভাষার ওপর দারুণ দখল এবং তিনি অনুবাদ করছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম সেই শি চিং উ সাহেব। আসুন, আমরা আজ তাদের সাথে কিছুক্ষণ সুন্দর সময় কাটাই। আমি প্রথমেই তাদের স্বাগত জানাই আমাদের এখানে আসার জন্য ।

ছালাউদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ আমাদের এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই আমাদের সকল শ্রোতা বন্ধুদের।

রুবী: ছালাউদ্দিন, আজ চীনের চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী ২০১২ সালের প্রথম দিন, আপনি জানেন কি?

ছালাউদ্দীন: হ্যা অবশ্যই জানি। , আমিতো বেশ কয়েক বছর ধরে চীনে আছি এবং এসময় প্রতিটি বসন্ত উত্সব মহা আনন্দের মধ্য দিয়ে এখানে এ উত্সবকে উপভোগ করেছি। আসলে বসন্ত উত্সবের সময় চীনে না থাকলে এটা যে কত জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় তা ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না।

রুবী: তাহলে চীনের বসন্ত উত্সবের রীতিনীতি সম্পর্কে আপনি অবশ্যই কিছু জানেন, তাই না? তাহলে এখানে আপনার বসন্ত উত্সব কেমন কেটেছে তা একটু বলবেন কি?

ছালাউদ্দিন: জি, বসন্ত উত্সব হলো চীনাদের আদি ঐতিহ্যিক ও চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান। চীনা পঞ্জিকা অনুযায়ী চীনা নববর্ষ। ঠিক যেমন আমাদের ১লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ। বসন্ত উত্সবের সময় প্রতিটি চীনা মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। কারণ এটা তাদের আগামী দিনের পথ চলার দিক নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে। তাদের জীবনে পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে আনন্দে থাকার এক শক্তিশালী অনুপ্ররণা। এ দিন যে যেখানে, অর্থাত্ যত দূরেই থাকা হোক না কেন, সবাই বাড়ি ফিরে আসে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। তাই না শি ভাই?

শি: আপনি সঠিক বলেছেন, এছাড়া, বসন্ত উত্সবের সময় আমরা আরও অনেক কিছু করি। যেমন, নানান রংয়ের ও নান ধরনের বড় বড় অক্ষরে লেখা কবিতার ছত্র দরজায় বা দেয়ালে এটে দেয়া। ঘরের দেয়ালে বিভিন্ন আকারের ও ডিজাইনের রঙিন ছবি টানানো, পটকাবাজি ফাটানো, ড্রাগণ লন্ঠন জ্বালানো ও সিংহ নৃত্যসহ আরো অনেক কিছু। এর মধ্যে একটা সুন্দর আবেগ কাজ করে থাকে।

রুবী: শি' সাহেবের এ কথা শুনে আমার মনে পড়ছে একটি ঐতিহ্যবাহী ছড়া। 'হাজার হাজার পরিবার পুনর্মিলিত হয়ে আনন্দের সঙ্গে বসন্ত উত্সব কাটায়। বসন্ত উত্সব সাধারণ কিছু নয়। পুর্বপুরুষদের আয়োজন থেকে শুরু করে এ রীতিনীতি আজ পর্যন্ত জনপ্রিয়তার সাথে চলছে। চীনের পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার, ২৪ ডিসেম্বর সুখের সব শব্দ লেখার দিন, ২৫ ডিসেম্বর বাড়িঘর সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছিন্ন করে তোলার দিন, ২৬ ডিসেম্বর গরুর মাংস রান্না করার দিন, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর গম গুড়া করার দিন, ২৯ ডিসেম্বর হলো বড় বড় অক্ষরে শৈল্পিক রেখায় লেখা কবিতার ছত্র এটে দেয়ার দিন আর ৩০ ডিসেম্বর সারা রাত জেগে নববর্ষের সূচনা লগ্ন থেকে প্রথম দিনের আনন্দময় নাচে গানে জীবনকে উপভোগ করা। শি সাহেব আপনি নিশ্চয়ই এ ছড়াটি শুনেছেন। তাই না?

শি: জি, অনেক শুনেছি।

রুবি: এ ছড়ায় যে কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। এখন ৩০ ডিসেম্বর রাতে পরিবারের সবাই মিলে ডিনার করেন এবং নববর্ষের ছুটিতে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ দু' ধারার রীতিনীতি ছাড়া অন্যগুলো আর এতো প্রচলিত নেই এখন আর।

শি: জি। আমার যৌবনকালে আমি নিজের হাতে কত যে সুখ শব্দ লিখেছি এবং এসব ছত্র দেয়ালে টাঙিয়েছি, তা মনে হলে এখনো আমার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। এখনকার দিনে এ সব কবিতার ছত্র ছাপানো হয়। জানেন ছালাউদ্দিন সাহেব আমাদের তরুণ প্রজন্ম আর আগের মত মজা না করে নতুনভাবে আনন্দ করছে। একটু পরিবর্তন হয়েছে।

ছালাউদ্দিন: আমার কাছে বসন্ত উত্সব ঠিক যেন আমাদের পবিত্র ঈদের মত, খৃস্টানদের ক্রিসমাসের মত আর পশ্চিম বাংলার দূগা পূজার মত। আমি আগেও দেখেছি, এবারও দেখলাম ভীড় কাকে বলে। এ দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের গুলিস্তান, নিউমার্কেট ও গুলশানের কথা এবং কলকাতার গড়িয়াহাটের কথা। লাইনে দাঁড়িয়েও যেন কেনা যাবে না মনে হয়। এখানেও তাই দেখছি। বসন্ত উত্সবের সময় সুপার মার্কেটসহ সব দোকান পাটে নতুন জিনিসে ভরে যায়। ইলেক্ট্রোনিক মার্কেট গুলোও নতুন নতুন আধুনিক পণ্যে ভরে যায়। ফলমূল ও এত বেশি বৈচিত্রময় খাবার থাকে যে বলে শেষ করা যাবে না। এত বেশি সুস্বাদু খাবার থাকে যা দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। কেনাও হয় প্রচুর। তাই না, রুবি?

রুবী: হ্যা,, অনেক অনেক রকমের খাবার থাকে। একটা কথা বলতে হয়, একালে অনেক পরিবর্তন ঘটলেও বসন্ত উত্সবের মূল জিনিসটা যেটা,, সেটার পরিবর্তন হয় নি। মূল জিনিস হলো এ উত্সবের মাধ্যমে চীনাদের আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলন, বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গে মৈত্রী জোরদার এবং শান্তি ও সুখ কামনাসহ সাংস্কৃতিক মর্ম। অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে যে, বসন্ত উত্সবের ঐতিহ্য ও তাত্পর্য হারিয়ে যেতে বসেছে। আসলে তা ঠিক নয়। মূল জিনিস ঠিক আগে মতই রয়েছে। তাই না, শি সাহেব?

শি: জি, চীন সরকার বসন্ত উত্সবের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন এর আগে বসন্ত উত্সব শুধু তিন দিনের ছুটি থাকতো। ২০০০ সালে ছুটির দিন বাড়িয়ে সাত দিন করা হয়েছে। সবাই যাতে পরিবারের সদস্যের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আনন্দ করতে পারেন।

রুবী: ছুটির দিনের কথা উল্লেখ্য করায় আমি জানতে চাই। আপনাদের দু'জনের কোন পরিকল্পনা আছে কি? কোথাও বেড়াতে যাবেন কি?

ছালাউদ্দিন: আমি মেলা দেখতে যাবো। এসব মেলা বেশ বৈশিষ্টপূর্ণ। দারুণ ভালো লাগে। পেইচিংয়ে অনেক মেলার আয়োজন করা হয়। যেমন, থিয়ান থান মেলা, ছাং তায়ান মেলা এবং লুং থান হু মেলা। এ ছাড়া আমদের রেডিওর সামনেই চীনের সবচেয়ে বড় ভাষ্কর্য পার্ক। সেখানেও বেশ বড় মেলার আয়োজন করা হয়। আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসব মেলায় যাবো এবং আনন্দময় পরিবেশের মধ্য দিয়ে বসন্ত উত্সবের আয়োজনগুলো উপভোগ করবো।

শি: আমি সে কয়েক দিনে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাবো এবং একসাথে খাওয়াদাওয়া করবো। আর আমার গিন্নিকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাবো।

রুবী: আসলে, বসন্ত উত্সব একটি বিশাল কর্মকাণ্ডের বিষয়। এসম্পর্কে অনেক কিছুই বলার আছে। অনুষ্ঠানের সময় সীমা নির্ধারিত থাকায় আরো বেশি আলোচনা করতে চাইলেও পারবোনা। তাই আমাদের আলোচনা এ পর্যন্তই।

(একসাথে সবাই) শুভনববর্ষ, সিন ছুন খুয়াই লে

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040