Web bengali.cri.cn   
শ্রীলংকার প্রাচীন রাজধানী অনুরাধাপুর
  2011-11-18 18:29:36  cri

অনুরাধাপুর শ্রীলংকার প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তিভূমি এবং পুরাতাত্বিক স্থাপনা সমূহের জন্য বিখ্যাত ।ইউনেসকো একে বিশ্ব সভ্যতার একটি উত্তরাধিকার হিসাবে ঘোষণা করেছে ।শ্রীলংকার বর্তমান রাজধানী কলম্বো থেকে ২০৫ কিলো মিটার উত্তরে ঐতিহাসিক মালভাথু ওয়া নদীর তীরে এই শহর অবস্থিত ।প্রাচীন কাল থেকে এখনও জনবসতি রয়েছে পৃথিবীর এমন শহরগুলোর মধ্যে অনুরাধাপুর অন্যতম ।খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে ১১শ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত এই শহর শ্রীলংকার রাজধানী ছিল । এই সময় কালে রাজনৈতিক,বাণিজ্যক ও নাগরিক সুবিধার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী শহর ছিল অনুরাধাপুর । প্রায় ষোলো বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত প্রাচীন শহরটি বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র বলে গণ্য ।

প্রত্নতাত্বিক খননের ফলে জানা গেছে খ্রীস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে ইতিহাসের ঊষালগ্নেই এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে ।এই এলাকার মানবসমাজ লোহার ব্যবহার আয়ত্ব করেছিল ।তারা মৃত্পাত্র গড়তে জানতো,ঘোড়া ও অন্যান্য পশু পালন করতো এবং ধানচাষ করতো ।৭০০ থেকে ৬০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে এখানে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে কারণ নদী অববাহিকায় অবস্থিত এই এলাকার জমি ছিল উর্বর এবং এখানে সেচ সুবিধা ছিল ।

৫০০ থেকে ২৫০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে এখানে নগর গড়ে ওঠে। রাজা পান্ডুকাভয় এই নগরের পরিকল্পনা করেন বলে শ্রীলংকার ইতিহাস গ্রন্থ মহাবংশে উল্লেখ করা হয়েছে । মহাবংশতে অনুরাধাপুর সম্পর্কে বলা হয়েছে রাজা পান্ডুকাভয় এখানে দীঘি খনন,সাধারণ সমাধিক্ষেত্র,বধ্যভূমি,রাণীর মন্দির,মহাবলিস্থান,প্রভৃতি নির্মাণ করেন ।তিনি সন্ন্যাসীদের জন্য একটি অতিথিশালা নির্মাণ করেন । ব্রাহ্মণদের জন্য একটি আশ্রম এবং রোগীদের জন্য চিকিত্সালয় ও বিশ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন ।বলা হয়ে থাকে মহারাজ পান্ডুকাভয় খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে অনুরাধাপুরে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন ।তিনি একটি সুসংহত পরিকল্পনা অনুসারে রাজধানী ও নগরীর উপকন্ঠ নির্মাণ করেন ।তিনি অভয়বাপী নামে একটি জলাধার নির্মাণ করেন ।তিনি কালবেলা ও চিত্তরাজা নামে যক্ষের উদ্দেশ্যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।তাঁর রাজত্বকালে দাস ও চন্ডালরা নগরের উপকন্ঠে আলাদা গ্রামে বাস করতেন ।তিনি নগর ও গ্রামের সীমানা নির্ধারণ করেন ।তাঁর ছেলের রাজত্বকালে অনুরাধাপুরের আরো উন্নতি হয় ।তিনি মহামেঘবন উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেন যা পরকর্তীকালে শ্রীলংকায় বৌদ্ধধর্মের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।২৫০ থেকে ২১০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে রাজা দেবনামপ্রিয়র সময়ে শ্রীলংকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয় ।রাজা দেবনামপ্রিয় ছিলেন ইতিহাসখ্যাত ভারতীয় সম্রাট অশোকের সমসাময়িক । বৌদ্ধধর্মের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নগর হিসাবে অনুরাধাপুরের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পায় ।এই সময় থেকেই গড়ে উঠতে থাকে বিখ্যাত সব স্থাপনা ।রাজা কূটকন্বাতিশ্যর সময় নগর প্রাচীর নির্মিত হয় । পরে রাজা বাসবের সময় প্রাচীরের উচ্চতা বাড়ানো হয় ও প্রহরী ঘর নির্মিত হয় যার ধ্বংসাবশেষ আজও আছে ।পর্যটকরা অনুরাধাপুরের যেসব স্থাপনা দেখে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হন তার মধ্যে ৮ টি স্থানকে বলা হয় আট মহাস্থাপনা । এই আট মহাস্থাপনা হলো শ্রীমহাবোধি, রুয়ানওয়েলিশ্ব,থুপারামায়া,লোভমহাপয়,অভয়গিরি,দাগব,জেতবনরাম,মিরিসাভেটিস্তূপ এবং লংকারাম ।রাজা বাসব অনুরাধাপুরের নাগরিক সুযোগ সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেন । তিনি নাগরিকদের জন্য পচুর দীঘি খনন করেন । এই জলাশয়গুলোতে পানি সরবরাহের জন্য ছিল বাঁধানো নালা । নগরে ছিল উদ্যান ।এই সব উদ্যানের মধ্যে রনমাসু উদ্যান শুধুমাত্র রাজপরিবারের সদস্যরাই ব্যবহার করতে পারতেন ।সাধারশ নগরবাসীর জন্য আলাদা উদ্যান ছিল । সাধারণ মানুষের চিকিত্সার জন্য বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ছিল ।চতুর্থ খ্রীস্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় উপতিশ্য প্রতিবন্ধীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন ।পরবর্তী রাজা বুদ্ধ্যশ্য ছিলেন চিকিত্সা বিদ্যায় পারদর্শী । তিনি প্রজাদের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন । এই হাসপাতালের ধ্বংসাবশেষ আজও পর্যটকদের বিস্মিত করে ।রাজা বুদ্ধ্যশ্য পশুদের চিকিত্সার জন্যও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।দশম শতাব্দীতে রাজা কশ্যপ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও জমি সেচের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করেন ।নগরবাসীর পানীয় জলের জন্য তিনি যে জলাশয়গুলো নির্মাণ করেছিলেন তার বাঁধানো ঘাটের কারুকার্য এখনো দৃষ্টি নন্দন ।অনুরাধাপুরের প্রাচীন স্থাপনাসমূহের মধ্যে পর্যটকরা এখনো যেগুলোর প্রতি বিশষ আগ্রহ বোধ করেন সেগুলো হলো রত্নপ্রাসাদ,দক্ষিণা স্তূপ,ইশুরুমুনিয়া,মাগুল উয়ানা,রাণীর প্রাসাদ ও মন্দির,সেলা সেটিয়া,কিরিবাথ বিহার,নাক বিহার,কুট্টাম পকুনা,সমাধি মূর্তি,তোলুইলা মূর্তি ইত্যাদি ।ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তিন ধরণের স্থাপনা রয়েছে ।প্রথম ধরনের স্থাপনা হলো ঘন্টাকৃতির উপাসনালয় ভবন,দ্বিতীয় ধরণের স্থাপনা হলো প্রাসাদ আর তৃতীয় ধরণের স্থাপনা হলো কারুকার্য করা বাঁধানো ঘাটসহ দীঘি ।ঘাটে রয়েছে বসার বেদী ও বিভিন্ন ভাস্কর্য ।এই দীঘিগুলো নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং আশেপাশের জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে ।

প্রাসাদগুলোর নির্মাণ শৈলীর বৈশিষ্ট্য হলো পাথরের ভিত্তিভূমি এবং কারুকার্যকরা পাথরের স্তম্ভ । প্রাসাদগুলোর মধ্যে ১৬৪ খ্রীস্টপূর্বাব্দে রাজা দুতুগামুনুর নির্মিত ব্রজেন প্রাসাদ সবচেয়ে বিখ্যাত । এই শহরে একটি পবিত্র বৃক্ষ রয়েছে । বলা হয় বৃক্ষটি ২৪৫ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ থেকে এখানে রয়েছে ।বর্তমানে অনুরাধাপুরে সিংহলী,শ্রীলংকান তামিল,ভারতীয় তামিল,শ্রীলংকান মুরসহ বিভিন্ন জাতির প্রায় ৫৬হাজার ৬শ ৩২ জন অধিবাসী রয়েছে ।

প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এই প্রাচীন নগরে আসেন এবং শ্রীলংকার প্রাচীন সভ্যতার অতুল কীর্তি দেখে বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হন ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040