Web bengali.cri.cn   
"চীনের স্বেচ্ছাসেবক সিরিয়া ৪" গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ---' শিক্ষক' সেন পিং
  2011-11-10 19:55:56  cri
স্কুলের গ্রীষ্মকালের ছুটির দিন। দুপুরের পর গাওলি গ্রামের একটি কোণে বই পড়ার আওয়াজ ভেসে আসছিল। আওয়াজের দিকে এগিয়ে দেখা গেল একটি "ক্লাসরুম"। একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে বিশ জনেরও বেশী ছাত্র-ছাত্রী নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ্য বই পড়ছে। এ শিক্ষক হলেন গাওলি গ্রামের একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ছাত্রী । তার নাম সেন পিং । বয়স ২৪ বছর। গ্রামের কৃষকরা তাকে আদরভাবে ' ছোট সেন'ডাকে।

গাওলি গ্রাম চিয়াংসু প্রদেশের শিনহুওয়া শহরের ছেনবাও নগরে অবস্থিত। চীনের অন্যান্য গ্রামের মতো যখন এ সব ছেলে-মেয়ে জন্ম গ্রহণের অল্প সময়ের পর তখন তাদের বাবা-মা চারকির জন্য নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করে দেশের অন্য জায়গায় চলে যান। দাদা-দাদিরা এ সব বাচ্চাকে দেখাশুনা করেন। তারা হয়তো সারা বছরে নিজেদের বাবা-মাকে দেখতে পারে না। তারা কেবলমাত্র টেলিফোনে বাবা-মার সঙ্গে কথা করতে সম্ভব হয়। তাদেরকে ' বাসায় পড়ে রাখা শিশু' গণ্য করা হয়।

একটি জরীপ অনুযায়ী, বতর্মানে চীনের গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা ৫ কোটি ৮০ লাখেরও বেশী। এদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশের পরিবারে হয় বাবা নয় মার বাইরে চাকরি খুঁজতে গেছে। এ সব শিশুর মধ্যে ৮০ শতাংশ দাদা-দাদির কাছে থাকে। ১৩ শতাংশ আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের বাসায় থাকে। ৭ শতাংশ অনির্দিষ্ট অভিবাবকের বাসায় থাকে। তাদের মধ্যে অনেকের অভিবাবক নেই। গাওলি গ্রামে প্রায় ৩০জন শিশুর বাবা-মা এক বছরে বাসায় এক বার ফিলে আসে। এমন কী কেউ কেউ দু'তিন বছর পর এক বার বাসায় ফিরে আসে।

বাবা-মার কাছে অল্প সময় থাকা ও দাদা-দাদীদের শিক্ষায় অনেক সমাস্যা দেখায় বলে এ সব শিশু সাভাবিক পরিবারের যত্ন পেতে পারে না। দীর্ঘকাল ধরে বাবা মার কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে তাদের মধ্যে অনেকেই মানসিক সমস্যা হয়েছে। সুতরাং এ সব শিশুর বাস্তব সমস্যা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এ সব ছেলে-মেয়ের সমস্যার সমাধানের জন্য অনেক লোক চেষ্টা করছে। সেন পিং তাদের মধ্যে একজন। ২০০৯ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর বড় শহরে না থেকে গাওলি গ্রামে এসে এখানের কমিউনিষ্ট যুব লীগের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। ২০১০ সালে স্কুল যখন শ্রীষ্মকালীণ ছোটি শুরু হয় তখন তিনি উপরোল্লেখিত ছেলে-মেয়েদের জন্য ' আশা ইংরেজি' শিরোনামে একটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছেন।

একটি স্বাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, বতর্মানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মোট ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। প্রতি দিন বিকেল দু'টা থেকে ক্লাস শুরু হয়। এই কেন্দ্রে তারা কেবল ইংরেজী ভাষা নয় অন্যান্য জ্ঞানও শিখতে পারে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ সব ছেলে-মেয়ের সার্বিক গুণগতমান বেড়েছে। স্বাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, জ্ঞান নিয়তি পরিবর্তন করতে পারে। তিনি বলেন, তিনি মাঝে মাঝে আমি খুব ক্লান্ত লাগে, তিনি যখন সে সব ছেলে-মেয়ের হাসি মুখ দেখেন তিনি মনে মনে খুব আন্দিত। তার স্থাপিত এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর ছেলে-মেয়েরা এক দিকে পড়াশুনা করতে পারে অন্য দিকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। তাদের বাবা-মাও ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য অস্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে পারে। তিনি বলেন, স্থানীয় জনসাধারণের জন্য কিছু বাস্তব কাজ করা তার সবচেয়ে বড় আশা-আকাংক্ষা। এ সব ছেলে-মেয়ের দৃষ্টিদিগন্ত সম্প্রসারণ করার জন্য তিনি ইংরেজ ভাষাভাষি দেশগুলোর রীতিনীতিও ব্যাখ্যা করেছেন।

তার উদ্যাগে এই গ্রামের ছেলে-মেয়ের জীবন বদলে গেছে। ছেলে-মেয়ের বাবা-মার মধ্যে অনেকেই দূর থেকে তাকে টেলিফোনে ধন্যবাদ জানান।

ছোট ছেলে-মেয়েদের মুখে সেন পিং নিজের পরিশ্রমের মূল্যবোধ দেখেছেন। তার কাজকর্ম গ্রামের কৃষকদের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১০ সালের নভেম্বর গ্রামের কমিউনিষ্ট পাটির শাখা কমিটির সদস্য ও গ্রামের কৃষক কমিটির নির্বাচরে তিনি এই গ্রামের কমিউনিষ্ট পাটির শাখা কমিটির উপ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040