Web bengali.cri.cn   
ঢাকার বিখ্যাত লালবাগ দুর্গের কথা
  2011-10-14 10:40:38  cri

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লালবাগ দুর্গের ইতিহাস। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা । জনপদ হিসেবে ঢাকার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। বহু প্রাচীন কাল থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জনবসতি ছিল। বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবেও ঢাকা ছিল বিখ্যাত । তবে মোগল শাসনামলে সুবে বাংলা অর্থাত্ বাংলা অঞ্চলের রাজধানী করা হয় ঢাকাকে । মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় নির্মিত হয় লালবাগ দুর্গ। এর আসল নাম আওরঙ্গবাদ দুর্গ। লালপাথরে তৈরি বলে স্থানীয় জনগণের মুখে এর নাম হয়ে যায় লালবাগ।

ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে ১৬৭৮ খ্রীস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখন অবশ্য বুড়িগঙ্গা নদী অনেকটা দূরে সরে গেছে। সে সময় সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা মুহম্মদ আযম মাত্র এক মাসের জন্য বাংলার সুবেদার হয়ে এসে এই দুর্গ নির্মাণ শুরু করেন। বাদশাহ আওরঙ্গজেব শাহজাদা আযমের পরিবর্তে নিজের মামা শায়েস্তা খানকে বাংলার শাসনকর্তা বা সুবেদার নিযুক্ত করেন। শায়েস্তা খানের সময় লালবাগ দুর্গের অধিকাংশ অংশ নির্মিত হয়। শায়েস্তা খানের মেয়ে ইরান দুখতের সঙ্গে শাহজাদা আযমের বাগদান হয় । পরীর মতো সুন্দর দেখতে বলে ইরান দুখতের ডাকনাম ছিল পরীবিবি। বিয়ের আগেই পরীবিবির অকাল মৃত্যু হলে শায়েস্তা খানের কাছে লালবাগ দুর্গকে অপয়া বলে মনে হয়। ১৬৮৮ সাল পর্যন্ত ঢাকায় থাকলেও তাই লালবাগ দুর্গের নির্মাণ কাজ তিনি শেষ করেননি ।

১৮৫৭ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে সিপাহীসহ জনসাধারণ কোম্পানির নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে । সিপাহী-বিদ্রোহের সেই উত্তাল সময়ে লালবাগ দুর্গ ছিল ঢাকায় স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী সিপাহীদের প্রধান ঘাঁটি ।

এরপর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত লালবাগ দুর্গ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে । ১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পর পুরাতাত্বিক বিভাগের উদ্যোগে লালবাগ দুর্গ আবার নতুন জীবন পায় । লালবাগ দুর্গের ভিতর এখন রয়েছে সুন্দর বাগান ও জাদুঘর । লালবাগ দুর্গের ভিতর মূলত তিনটি বড় স্থাপনা রয়েছে । এর অন্যতম হলো দিওয়ানি আযম এবং এর পূর্বদিকে হাম্মামখানা বা স্নানাগার । দিওয়ানি আযম একটি দোতলা প্রাসাদ । এটি ছিল সুবেদারের বাসভবন । এর পূর্বদিকে হাম্মামখানার মেঝে ও দেয়ালে রয়েছে মার্বেল পাথরের অপূর্ব কারুকাজ । মোগল বিলাস ও ঐশ্বর্যের পরিচয় পাওয়া যায় এই হাম্মামখানা ও দিওয়ানি আযমে । এখানে এখন একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে । জাদুঘরে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন মোগল আমলের অস্ত্র-শস্ত্র,অলংকার ও তৈজষপত্র ।

লালবাগ দুর্গের কেন্দ্রে রয়েছে পরীবিবির মাজার বা সমাধি সৌধ । আটটি ঘর নিয়ে পুরো সমাধি স্থাপনাটি গড়ে উঠেছে । মাঝখানের ঘরে রয়েছে পরীবিবির কবর । ঘরের দরজা ব্রোঞ্জের জাফরিকাটা ও কারুকার্যময় ।ঘরের ভিতরে সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি দেয়ালে রয়েছে মোগল ও সুলতানী রীতির নকশা । পরীবিবির কবর ছাড়াও এখানে আরো দুটি কবর রয়েছে। একটি শামশাদ বেগম নামে শায়েস্তাখানের কোনো আত্মীয়ার আর অন্যটি একটি শিশুর কবর । পরীবিবির সমাধি সৌধের সামনে রয়েছে ফোয়ারা ও প্রশস্ত চত্বর । লালবাগ দুর্গের পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি মসজিদ । মসজিদের তিনটি গম্বুজ মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি । এ মসজিদে এখনো নিয়মিত নামাজ পড়েন মুসল্লীরা । তিনটি স্থাপনার সামনেই রয়েছে ফোয়ারা যা মোগল স্থাপত্যরীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ।এছাড়া রয়েছে একটি বিশাল চতুষ্কোণ জলাধার । লালবাগ দুর্গের দেয়াল ঘিরে রয়েছে সৈনিকদের থাকবার জন্য নির্মিত পাথরের ঘর,ঘোড়ার আস্তাবল এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত ঘর ।দুর্গের দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে ছাদের বাগান । এখানেও রয়েছে ফোয়ারার ব্যবস্থা । প্রত্নতাত্বিক খননের ফলে লালবাগ দুর্গের ভিতরে একটি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ আবিষ্কৃত হয়েছে ।জনশ্রুতি অনুযায়ী এই সুড়ঙ্গের আরেকটি মুখ রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে । লালবাগ দুর্গের তিনটি ফটক বা তোরণও দর্শনীয় । বিশাল এ তোরণ তিনটি দুর্গের তিনদিকে অবস্থিত । বাইরে থেকে দেখলে তিনতলা মনে হলেও আসলে দোতলা ।দুর্গের উত্তর দিকের সীমানা প্রাচীর আজও অসমাপ্ত অবস্থায় আছে । ভারতের রাজস্থান থেকে লাল বেলে পাথর নদীপথে নিয়ে এসে এই দুর্গের তোরণ ও প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল । ভিতরের স্থাপনাগুলো একই ধরণের লাল বেলে পাথর ও নকশা করা মার্বেল পাথরে তৈরি । বর্তমানে লালবাগ দুর্গের এলাকা ১৮ একর হলেও আগে আরো বেশি এলাকা এর অন্তর্গত ছিল । দুর্গের সামনে ছিল একটি বিশাল গোলাপ বাগান । বর্তমান শায়েস্তা খান রোডের পুরোটাই ছিল লালবাগ দুর্গের এলাকা । প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী লালবাগ দুর্গে আসেন । পুরোনো ঢাকার কোলাহল মুখরিত এলাকায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লালবাগ দুর্গ মনে করিয়ে দেয় বাদশাহী আমলের ঢাকা নগরীর গৌরবগাঁথা ।(শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040