Web bengali.cri.cn   
ইয়াংসি নদীর তিন গিরিখাতের কাহিনী
  2011-05-09 20:14:52  cri

ইয়াংসি নদীর তিন গিরিখাত

ইয়াংসি নদী চীনের দীর্ঘতম আর এশিয়ার তৃতীয় দীর্ঘতম নদী। ইয়াংসির উপর ও মধ্য ভাগে তিনটি গিরিখাত আছে। এগুলো হলো ছুথান গিরিখাত, উ গিরিখাত ও সিলিন গিরিখাত। এই তিনটি গিরিখাতই চীনের বিখ্যাত তিন গিরিখাত। এই তিন গিরিখাতের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় দু শ' কিলোমিটার। তিন গিরিখাত বরাবর অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম, এটা বিশ্ববিখ্যাত দর্শনীয় এলাকা।

তিন গিরিখাতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছুথান গিরিখাতে আছে 'পাইতিনছেন' নামে একটি দর্শনীয় স্থান। 'পাইতিনছেন' সম্পর্কে একটি কাহিনীও আছে, যার নায়কের নাম কোনসুনসু ।

২৫ খ্রিষ্টাব্দে সালে চীন বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিলো। কৃষকরা অভুত্থানের মধ্য দিয়ে পশ্চিম হান রাজবংশের পতন ঘটায়। কিন্তু নতুন রাজবংশ তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্থানীয় সামরিক কমান্ডার কোনসুনসু দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থান করছিলেন। তিনি আশা করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন পরিবর্তন দেখা দেবে।

একদিন কোনসুনসু রাতে একটা স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে একজন লোক তাকে বলেন, আপনি আগামী বারো বছরের মধ্যে রাজা হবেন। জেগে উঠে কোনসুনসু এই অদ্ভুত স্বপ্ন নিয়ে ভাবেন। পরদিন সকালে কোনসুনসু নিজের উঠোনে হাঁটাহাঁটি করার সময় দেখেন বাগানের কুয়ো থেকে সাদা রংয়ের হাওয়া বের হচ্ছে, যেন একটি সাদা রঙের ড্রাগন আকাশে উঠছে। কোনসুনসু মনে করেন, রাতের স্বপ্ন ও সামনের এই সাদা ড্রাগন তার রাজা হওয়ার ইঙ্গিত। তাই তিনি এক অনুষ্ঠানে নিজেকে পাইতি রাজা বলে ঘোষণা করেন এবং ছুথান গিরিখাতের নিকটবর্তী ছোট শহরকে পাইতি শহর নাম দেন।

পাইতি নগরের দ্বার

কোনসুনসুর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম ছিল মা ইউয়েন। মা ইউয়েন ছিলেন এক বুদ্ধিমান ও দক্ষ ব্যক্তি। কোনসুনসু রাজা হয়েছেন শুনে মা ইউয়েন দূর থেকে কোনসুনসুর কাছে যান। তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর রাজ্যে কাজ করতে চান। কিন্তু কোনসুনসু নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর প্রতি আগের মতো ভালো ব্যবহার করেন না। তিনি মা ইউয়েনের জন্য এক সেট সুতি কাপড়ের সাধারণ পোশাক তৈরির নির্দেশ দেন। তারপর কোনসুনসু মা ইউয়েনকে তাঁর দেওয়া এই সাধারণ পোশাক পরে রাজ্যের এক বিশাল অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে দেখা করার আদেশ দেন। সেই অনুষ্ঠানে কোসুনসু মা ইউয়েনকে তার সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের পদ দেন। যারা মা ইউয়েনের সঙ্গে কোনসুনসুর কাছে গিয়েছিলেন, তারা সবাই বেজায় খুশি। তারা আশা করেন, কোনসুনসুর জন্য মা ইউয়েন কাজ করবেন। কিন্তু মা ইউয়েন তাদের বলেন, 'এখন সমগ্র দেশ বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। কে সমগ্র দেশ একত্রিত করতে পারেন, তার কোনো ঠিক নেই। এই অবস্থায় কোনসুনসু আন্তরিকতার সঙ্গে দক্ষ ব্যক্তিদের সংগ্রহ না করে, বরং নিজেকে বড়লোক হিসেবে মনে করে শুধু কি ধরনের কাপড় পরা উচিত – এমন ছোটখাট ব্যাপারকে গুরুত্ব দেন। কোনসুনসু দেশশাসনের বড় কাজ কিছুই জানেন না। এই ধরনের লোক কিভাবে দক্ষ লোককে রাখতে পারবেন'। এই কথা বলে মা ইউয়েন বিদায় নিয়ে চলে যান।

ওই সময় মধ্য-চীনের লিউসিউ ইতিমধ্যে লোইয়াং শহরে পূর্ব হান শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কোনসুনসুকে চিঠি লিখে দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তাঁকে আত্মসমর্পনের পরামর্শ দেন। কোনসুনসু মনে করেন, আমি রাজা হয়েছি, কিভাবে আত্মসমর্পন করবো ? তাই তিনি লিউসিউয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ৩৭ খ্রিষ্টাব্দে লিউসিউয়ের বাহিনী কোনসুনসুর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায় । কোনসুনসু লিউসিউয়ের সৈন্যদের হাতে নিহত হন।

কোনসুনসু সত্যি বারো বছরের মধ্যে রাজা হয়েছিলেন। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে মোট ২৮ বছর স্থানীয় শাসক ছিলেন। এই ২৮ বছরে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ছিলো। রাজা হিসেবে কোনসুনসু কৃষি ও জলনিষ্কাসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে জনগণের কল্যাণে অনেক কাজ করেছিলেন। তাই কোনসুনসুর মৃত্যুর পর স্থানীয় অধিবাসীরা তার স্মৃতির জন্য পাইতিছেনে পাইতি মন্দির নির্মাণ করেন।

ইয়াংসি নদীর তিন গিরিখাত বরাবর অঞ্চলে পাইতিছেন ছাড়াও আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে; রয়েছে সে জায়গা সম্পর্কে অনেক উপকথা। তিন গিরিখাত অঞ্চলের পাহাড়ে বারোটি সুন্দর চূড়া আছে, স্থানীয় অধিবাসীরা এই বারোটি চূড়াকে 'সেননুইচূড়া' বলে ডাকেন এবং প্রতিটি চূড়ার একটি করে নাম দিয়ে সুন্দর সুন্দর রূপকথা প্রণয়ন করেন।

  

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040