Web bengali.cri.cn   
পশ্চিম হ্রদের কাহিনী
  2011-01-24 17:03:34  cri

পূর্ব চীনেরহানচৌ শহরের পশ্চিম হ্রদের মনোরম দৃশ্য প্রাচীন ও আধুনিক চীন আর দেশবিদেশের অসংখ্য পর্যটককে মুগ্ধ করে। চতুর্দশ শতাব্দীতে সময় ইতালির বিখ্যাত পর্যটক মার্কোপোলো হানচৌয়ে পৌঁছে পশ্চিম হ্রদের মনোরম দৃশ্যের প্রশংসা করে বলেছেন , মানুষ এই হ্রদে এসে চার পাশের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে মনে করেন যেন স্বর্গে উঠেছে।

পশ্চিম হ্রদ হচ্ছে পূর্ব চীনের চেচিয়ান প্রদেশের রাজধানী হানচৌ শহরের একটি উজ্জ্বল মুক্তা। পশ্চিম হ্রদের তিন দিকে পাহাড় , হ্রদের সচ্ছ পানির উপর চীনের বিখ্যাত দুজন কবি সুতুংফো ও পাইচুইর নামকরণ করা দুটি পরিখা আছে। এই দুটি পরিখা যেন দুটি সবুজ রংয়ের রেশমী ফিতার মতো হ্রদের উপর ভাসে। পর্যটকরা এই দুটি দীর্ঘ পরিখার উপরে দাড়িয়ে দূরের পাহাড়, কাছের সচ্ছ পশ্চিম হ্রদ আর চার পাশের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পছন্দ করেন। চীনের বিভিন্ন রাজবংশের কবিরা হানচৌর পশ্চিম হ্রদের দৃশ্য সম্বন্ধে অনেক কবিতা লিখেছেন। থান রাজবংশের নামকরা কবি পাইচুই তার কবিতায় লিখেছেন, হানচৌকে ছেড়ে যেতে পারি নি, এই মনোরম পশ্চিম হ্রদই আমার মন আকড়ে ধরেছ। সুং রাজবংশের কবি সুতুংফো পশ্চিম হ্রদকে প্রাচীন চীনের সুন্দরী সিশির সঙ্গে তুলনা করে লিখেছিলেন, পশ্চিম হ্রদের তিন দিকের পাহাড় সুন্দর, হ্রদের সবুজ সচ্ছল পানি আরো সুন্দর। এই হ্রদ সিশিরের মতো সবসময়ই সুন্দর। তার এই কবিতা পশ্চিম হ্রদ সম্পর্কিত একটি সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতায় পরিণত হয়েছে।

পশ্চিম হ্রদেরদশটি বিখ্যাত দৃশ্য দেশেবিদেশে বিখ্যাত। পশ্চিম হ্রদের এই দশটি বিখ্যাত দৃশ্য হলোঃ বসন্তের ভোরবেলার সু পরিখা, ছুইউনের পদ্মফুল, পশ্চিম হ্রদের পূর্ণিমা চাঁদ, ভাঙ্গা সেতুর বরফ, উইলোগাছের পাখি, হুয়াকানের সোনালী মাছ, হ্রদের পানিতে চাঁদের প্রতিবিম্ব ছবি, সুর্যাস্তের আলোয রেইফোং টাওয়ার, নানফিংয়ের ঘন্টা আর দুই শৃঙ্গের মধ্যে রঙীন মেঘ।

পশ্চিম হ্রদ সম্পর্কে অনেক সুন্দর সুন্দর রূপ কথা আছে। যেমন দশটি দৃশ্যের মধ্যে ভাঙ্গা সেতুর বরফ নামে দৃশ্যে ভাঙ্গা সেতুটি চীনের খ্যাতনামা রূপ কথায় ' শ্বেত সাপের কাহিনীতে ' নায়িকা পাইনিয়ানচি ও নায়ক সুইসিয়েনের মিলন স্থল।

এই উপকথায় বলা হয়েছে, একটি শ্বেত সাপ এক হাজার বছর প্রার্থনার পর পাইনিয়ানচি নামেএক সুন্দরী নারীতে পরিণত হয়। অন্য এক সবুজ রঙের সাপ পাঁচ শ'বছর প্রার্থনা করে সিয়াওছিন নামে এক চঞ্চল যুবতী মেয়েতে পরিণত হয়। একদিন তারা দুজন এক সঙ্গে পশ্চিম হ্রদে বেড়াতে যান। তারা যখন ভাঙ্গা সেতুতে পৌছেন, পাইনিয়ানচি সেখানে এক সুদর্শন যুবককে দেখতে পান, তাকে দেখেই পাইনিয়ানচি মনে মনে তাকে পছন্দ করতে শুরু করেন। এটা দেখে সবুজ সাপ থেকে মানুষে পরিণত সিয়াওছিন মন্ত্র পড়ে মুষলধারে বৃষ্টি সৃষ্টি করেন। যুবক সুইসিয়েন ছাতানিয়ে পশ্চিম হ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে নৌকায় ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

এই সময় সুইসিয়েন দেখেন পাইনিয়ানচি ও সিয়াওছিনের বৃষ্টির পানিতে গায়ের কাপড় ভি গেছে। তাই সুইসিয়েন হাতের ছাতা তাদের দিয়ে নিজে দূরেবৃষ্টির মধ্যে দাঁড়ান। পাইনিয়ানচি সুইসিয়েনের এই কাণ্ড দেখে মনে মনে তাকে আরো ভালোবাসেন। সুইসিয়েনও পাইনিয়ানচিকে ভালোবাসেন , তাই সিয়াও ছিনের সাহায্যে সুইসিয়েন ও পাইনিয়ানচি বিয়ে করেন এবং পশ্চিম হ্রদের তীরে একটি ওষুদের দোকান খুলে রোগীদের চিকিত্সা শুরু করেন। তারা আশেপাশের অধিবাসিদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করেন।

তাদের সুখী জীবন বেশি দিন টেকে নি। চিংসান মন্দিরের সন্ন্যাসী ফাহাই মনে করেন পাইনিয়ানচি মানুষ নয়, তাই স্থানীয় অধিবাসিদেরদুঃখ ডেকে আনবে। তাই ফাহাই গোপনে সুনিয়েনকে জানালেন যে পাইনিয়ানচি মানুষ নয়, শ্বেত সাপ থেকে মানুষে পরিণত হয়েছে। সুসিয়েন একথা বিশ্বাস করেন নি। ফাহাই সুসিয়েনকে বলেন, চান্দ্রবর্ষের পঞ্চম মাসের পঞ্চম দিনতুয়ান উ উত্সব। এইদিন স্থানীয় অধিবাসীদের সুনহুয়ান মদ পানের রীতি আছে। ফাহাই সুসিয়েনকে বলেন, তুমি জোর করে পাইনিয়ানচিকে এই মদ খেতে বলবে, পাইনিয়ানচি এই মদ পান করে আসল রূপ দেখাবে। উত্সবের দিন সুসিয়েন স্ত্রী পাইনিয়ানচিকে সুনহুয়ান মদ পানের জন্য জেদ ধরে। এই সময় পাইনিয়ানচি ছিল গর্ভবর্তী। স্বামীর বার বার অনুরোধে পাইনিয়ানচি মদ পান করে ফেলেন। মদ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইনিয়ানচি একটি শ্বেতসাপে পরিণত হয়। নিজের স্ত্রীকে সাপে পরিণত হতে দেখে সুসিয়েন ভয়ে প্রাণ হারান। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য পাইনিয়ানচি হাজারকিলোমিটার দূরের কুলুন পাহাড়েলিংচি ঘাস চুরি করতে যায়। সেখানে পাইনিয়ানচি লিংচি ঘাসের রক্ষীদের সঙ্গে লড়াই করা শেষে রক্ষীরাও পাইনিয়ানচির সাহস ও বীরত্বের জন্য মুগ্ধ হয়, তারা লিংচি ঘাস পাইনিয়ানচিকে উপহার দেয়। এই লিংচি ঘাস মৃত মানুষকে আবার জীবিত করতে পারে। সুসিয়েন এই যাদুর ঘাস খেয়ে জ্ঞান ফিরে আবার জীবিত হন। সুসিয়ান যখন জানতে পারেন যে তার স্ত্রী তাকে বাঁচানোর জন্য এতো কষ্ট করে হাজার কিলোমিটার দূরের কুনলুন পাহাড় থেকে এই যাদুর ঘাস এনেছে, তখন সুসিয়েনমুগ্ধ হন , এরপর তাদের জীবন আগের চেয়ে আরো সুখী হয়।

কিন্তু সন্ন্যাসী ফাহাই পাইনিয়ানচিকে সহ্য করতে পারে নি। তিনি সুসিয়েনকে চিনসান মন্দিরে নিয়ে তার চুল কেটে সন্ন্যাসী হতে বাধ্য করেন। পাইনিয়ানচি ও সিয়াওছিনরেগে সৈন্যদের নিয়ে চিনসান মন্দিরে ঢুকে সুসিয়েনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তারা মন্ত্র পড়ে বন্যার পানি ডেকে চিনসান মন্দিরকে বন্যার পানিতে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পাইনিয়ানচির গর্ভে বাচ্চা আছে বলে সিয়াওছিনের সাহায্যে পালিয়ে যান। তারা যখন ভাঙ্গা সেতুতে পৌঁছেন, তখন চিনসান মন্দির থেকে পালিয়ে আসা সুসিয়েনের সঙ্গে দেখা করেন। ভাঙ্গা সেতুতে পাইনিয়ানচিরৱ একটি ছেলের জন্ম দেয়। ঠিক এই সময় সেখানে সন্যাসী ফাহাই এসে পড়েন। ফাহাই পাইনিয়ানচিকে পশ্চিম হ্রদের পাশের রেইফোং প্যাগোডার নীচে মেরে ফেলে অভিশাপ দিয়ে বললো, যতোদিন পশ্চিম হ্রদের পানি না শুকায় এবং রেইফোং প্যাগোডা ভেঙ্গে না যায়, ততোদিন পাইনিয়ানচি পৃথিবীতে থাকতে পারবে না।

অনেক বছর পর সিয়াও ছিন আবার পশ্চিম হ্রদে ফিরে যান। তিনি সন্ন্যাসী ফাহাইকে পরাজিত করার পরপশ্চিম হ্রদের পানি চুষেরেইফোং প্যাগোডা ভেঙ্গে পাইনিয়ানচিকে উদ্ধার করেন।

পাইনিয়ানচি ও সুসিয়েনের পশ্চিম হ্রদে সাক্ষাত ও বিচ্ছিদের কাহিনী চীনারা সবাই জানেন। এই কাহিনী হানচৌয়ের পশ্চিম হ্রদকে আরো স্মরনীয় করে তুলেছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040