|
এক শুক্রবার রাতে চীনে ভারত দূতাবাসের সাংস্কৃতিক অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। লোকেজন পৃথক পৃথকভাবে সাংস্কৃতিক অফিসের ছোট্ট একটি রুম সবার আলোচনায় মুখরিত। কী কারণে তার তাঁদের সাপ্তাহিক ছুটির রাতে এখানে এসেছেন? তাঁরা এখানে কী ধরণের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছেন? আসলে আজ রাতে এখানে একজন চীনা মেয়ের ভারতের ঐতিহ্যবাহী নাচ, কত্থক নাচের একক অনুষ্ঠান। এ মেয়েটির নাম হচ্ছে চাং চিং হুই।
ভারতের নৃত্যগীত প্রসঙ্গে আপনাদের মনে কি রঙ্গিন পোশাক, চমত্কার গহনা, বিশেষ সঙ্গীত বা নৃত্যশিল্পীর বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তিসম্পন্ন সেই মুখ দেখতে পাচ্ছেন? আসলে ভারতের সংস্কৃতি অনেক সুগভীর ও প্রগাঢ়। এর মধ্যে ক্লাসিক্যাল নাচগান গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ক্লাসিক্যাল নাচগান হচ্ছে বিনম্র সংস্কৃতির উন্নয়নের ফল। এর আটটি প্রকার আছে। কত্থক হচ্ছে উত্তর ভারতের ক্লাসিক্যাল নৃত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তা ভারতের মন্দির থেকে চালু হয়েছে। এর আসল অর্থ হলো গল্প করা মানুষ। সর্বপ্রথম গল্প করা মানুষজন বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতেন। তাঁরা মন্দিরে অনুসারীদেরকে দেবতার গল্প ব্যাখ্যা করতেন। অধিকাংশ ভারতীয়রা দেবতায় বিশ্বাসী। পরে আরো ভালো পূণ্য অর্জনের জন্য তাঁরা সঙ্গীত, নাচগান ও বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ যোগ করায় কত্থক নৃত্যের আদিরূপ সৃষ্টি হয়েছে। কত্থক নৃত্যের পরিবেশনায় বিশেষ করে অনুভূতি প্রকাশের ওপর সবচে' বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
সে রাতের পরিবেশনা মোট ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। পরিবেশনার শেষে দর্শকরা পৃথক পৃথকভাবে মঞ্চে চাং চিং হুইয়ের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
নৃত্য আমার কাছে একটি সুন্দর স্বপ্নের মতো। ছোটবেলা থেকে নৃত্যের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে এখন পর্যন্ত আমি নৃত্যকে ছেড়ে দিতে পারবো না। আমি মনে করি, ভারতের এই ক্লাসিক্যাল নৃত্য অনেক সুন্দর। বড় হওয়ার পর আমি নৃত্য শেখার সুযোগ আবার পেয়েছি। তাই আমি এ সুযোগের বেশির মূল্যায়ন করেছি।
ভারতের ক্লাসিক্যাল নৃত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হিসেবে কত্থকের বড় বৈশিষ্ট্য হলো ঘূর্ণন এবং মাটিতে পা দিয়ে আঘাত করা। দর্শকরা নৃত্য উপভোগের সময় নৃত্যশিল্পীর দ্রুত ঘূর্ণন ও মাটিতে সঙ্গীতের তালে তালে পদাঘাতের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। চীনে একটি প্রবাদ আছে। তা হলো মঞ্চে এক মিনিটের পরিবেশনার জন্য দশ বছরের প্রশিক্ষণের প্রয়োনজ। মঞ্চে নৃত্যশিল্পীর জন্য পরিবেশনা কত বার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে মনোরম হয়ে ওঠতে পারে। সে সম্পর্কে চাং চিং হুই আমাদেরকে জানান: প্রথমে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না। দুই বা একবার নিজেকে আবর্তিত করলেই আমার মাথা ঘুরে যেতো। কিন্তু নিষ্ঠার সাথে চর্চার পর এখন অনেকবার পারছি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনঘন নানা আকারের বড় অনুষ্ঠানে চাং চিন হুই অংশ নিয়েছেন। যেমন, ২০০৮ সালে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পেইচিং হোটেলে অনুষ্ঠিত উদযাপনী অনুষ্ঠান, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ভারতের দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হোলি দিবসের উদযাপনী অনুষ্ঠান, ২০০৯ সালে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের হিন্দি সার্ভিসের বার্ষিকী উদযাপনী অনুষ্ঠান, ২০১০ সালে ভারতের পর্যটন ব্যুরোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত 'অবিশ্বাস্য ভারত' শীর্ষক বড় আকারের পরিবেশনা এবং ২০১০ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৬০তম বার্ষিকী উলপক্ষে অনুষ্ঠিত পরিবেশনা প্রভৃতি। চীনের নানা ধরণের মঞ্চে সক্রিয় থাকা ছাড়াও, তিনি চীন থেকে ভারতে গিয়েও নৃত্যে অংশ নিয়েছেন। ২০১০ সালে ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিষয়ক কাউন্সিলের আমন্ত্রণে চাং চিং হুই নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক নৃত্য উত্সবে অংশ নিয়েছেন। নৃত্য উত্সবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভারতীয় নৃত্যের অনুরাগীরা যার যার একটি করে নৃত্য পরিবেশ করেছেন। চাং চিং হুই-এর পরিবেশনা সবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেয়েছে। এবারের পরিবেশনায় চাং চিং হুই বেশি কথা বলেন নি। বরং চাং চিং হুইয়ের বাবা নিজের গৌরব লুকিয়ে না রেখে মেয়ের প্রশংসা করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, বলা যায়, এই আন্তর্জাতিক নৃত্য উত্সব হলো ভারতে নৃত্য শেখা বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের একটি পার্টি। যারা এ উত্সবে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন হলুদ চুলের ইউরোপীয় এবং আফ্রিকার নিগ্রোও। যদিও এবারের উত্সব এক ধরণের বিনিময়, আসলে একবার প্রতিযোগিতার মতো। চাং চিং হুই অনেক ভালো করেছেন এবং সবার প্রশংসা পেয়েছে। তা সহজ নয়। সে আমাদের চীনের গর্ব। ক্রীড়াবিদরা প্রতিযোগিতায় পদক পেয়ে চীনের জন্য গর্ববোধ করেন। সেও আন্তর্জাতিক উত্সবের মাধ্যমে চীনের জন্য গর্ববোধ করেছেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |