Web bengali.cri.cn   
আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে
  2010-12-14 16:59:00  cri

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এর বিপরীতে রফতানির পরিমাণ খুবই সামান্য। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ থেকে। রফতানিতে পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিভিন্ন পণ্যে অশুল্ক বাধা, পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার অভাব এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশনে পিছিয়ে পড়া। তবে আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্যে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে নেপাল।

সম্প্রতি ঢাকায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত পাকিস্তানের গবেষণা সংস্থা মাহবুবুল হক হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইদুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডি'র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। আলোচনায় অংশ নেন মাহবুবুল হক মানব উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট খাদিজা হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম রায়হান, সাবেক বাণিজ্য সচিব ড. সোহেল আহমেদ চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ সঞ্জয় কাঠুরিয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান, ড. তৌফিক আলী ও ড. রহমতউল্লাহ।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রফতানি করেছে মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ। আর আঞ্চলিক দেশগুলোর বাইরে রফতানি করেছে ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ কিন্তু এ সময়ে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানী করেছে তার ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের হিসাব থেকে দেখা গেছে, নেপাল যে পরিমাণ রফতানি আয় করেছে তার ৭৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এসেছে দক্ষিণ এশিয়া থেকে। এছাড়া আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়া থেকে আয় করেছে ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ভারত ৫ দশমিক ১ শতাংশ, মালদ্বীপ ৮ দশমিক৭৮ শতাংশ, পাকিস্তান ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং শ্রীলংকা আয় করেছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সর্বশেষ জনসংখ্যার রিপোর্ট অনুসারে যে পরিমাণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছিল, তার চেয়ে এক কোটি বেশি বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে নেগোসিয়েশন অর্থনৈতিক উন্নয়নে তেমন যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি নয়। কারণ উন্নত দেশগুলো চায় তাদের শিল্প রক্ষা করতে। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলো চায় লাভবান হতে। এছাড়া অন্যান্য বক্তারা ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। অন্য এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছরের খন্ডকালীন সময়ে বাংলাদেশ ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে রফতানি করেছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য দু'দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়।

রিপোর্টে রফতানিতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার যে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, তা হলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের অশুল্ক বাধা, পণ্যের গুণগতমান পরীক্ষার অভাব এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশনে পিছিয়ে পড়া। এতে আরো বলা হয়, ২০১৬ সালের আগে সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-সাফটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না। সাফটা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বস্ত্র, তৈরি পোশাক এবং চামড়া শিল্প লাভবান হবে। অন্যদিকে পরিবহন, ইলেক্ট্রনিক্স এবং মেশিনারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আলোচিত প্রতিবেদনে আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার মুলত: তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ কারণ অনেক। আলোচিত তিনটি কারণ অন্যতম। এ কথা সবাই জানে , সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য বিশ্বের অনেক দেশ রফতানি বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ে। তাছাড়া বাজার তৈরির কৌশলের অভাবও রফতানি বাণিজ্যের একটি অন্যতম বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ রফতানি বাণিজ্যের বাজার তৈরিতে যে সফল হয়েছে তার প্রমাণ মেলেনি আলোচিত প্রতিবেদনে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ বিশ্বে বাজার তৈরিতে নেগোসিয়েশন তেমন যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি নয়। তবে এ কথাও সত্যি যে, বতর্মান সরকারের সময় দেশের সামগ্রিক রফতানি বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশ ছাড়া অন্যান্য দেশে রফতানির পরিমাণ ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার অপর সাতটি দেশে মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বাংলাদেশের আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।(মফিজুর রহমান)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040