|
বন্ধুরা, এ বছরের ৪ অক্টোবর হচ্ছে চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী। ৩৫ বছরে চীন আর বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়েছে, দু'দেশের জনগণের মৈত্রী আরো গভীর হয়েছে। দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে সিআরআই'র সংবাদদাতা ইয়াং ওয়েই মিং বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত চাং সিয়ান ঈ'র এক বিশেষ সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। সাক্ষাত্কারে রাষ্ট্রদূত চাং দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা সম্পর্কে মন্তব্য রেখেছেন।
সাক্ষাত্কারে রাষ্ট্রদূত চাং সিয়ান ঈ বলেন, চীন ও বাংলাদেশ হচ্ছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু'দেশের সম্পর্ক সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হয়ে আসছে এবং ধাপে ধাপে তা পরিপক্ক হয়েছে। দু'দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত চাং বলেন, '২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফর করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘকালীন মৈত্রী, সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এ বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে চীন ও বাংলাদেশ যুক্ত বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। এর ভিত্তিতে দু'দেশের সার্বিক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং দু'দেশের পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা আরো বেড়েছে। বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে অবিচল থেকে চীনের মৌলিক স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যাপারে সবসময় চীনকে মূল্যবান সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চীন সর্বদাই বাংলাদেশকে সম্মান করে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূভাগের অখন্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রয়াসকে সমর্থন করে। তা ছাড়া অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যায় দু'দেশের অবস্থান প্রায় একই। আন্তর্জাতিক ব্যাপারে দু'দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে যৌথভাবে সমন্বয় করে।
রাজনৈতিক সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নয়ন দু'দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা ও বিনিময়ের জন্য মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে। রাষ্ট্রদূত চাং সিয়ান ঈ মনে করেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতাও খুব ভালো। তিনি বলেন, 'দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সম্পর্ক নিরন্তরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মূল্য ছিল ৪৫৮ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। চীন নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে দু'দেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছে। এ বছরের ১ জুলাই থেকে চীন বাংলাদেশের ৪৭৬২ ধরনের পণ্যকে করমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। এটা বাংলাদেশ থেকে চীনের রপ্তানী পণ্যের ৬০ শতাংশ। তা ছাড়া টানা কয়েক বছর ধরে চীন বাংলাদেশে ক্রয় দল পাঠিয়েছে এবং ইতিবাচকভাবে বাংলাদেশের শিল্প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনে আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার পণ্য মেলাসহ নানা বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তা ছাড়া চীন সরকার সবসময় শক্তিশালী ও মানসম্পন্ন চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উত্সাহিত করছে। জানা গেছে, ২০০৯ সালে চীনের বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।'
সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দু'দেশের লেন-দেন ও সহযোগিতাও দিন দিন বাড়ছে এবং এর মধ্য দিয়ে দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা ও মৈত্রী অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রদূত চাং সিয়ান ঈ বলেন, '২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী চীনে আয়োজিত এশিয় দেশগুলোর সংস্কৃতি মন্ত্রীদের গোল টেবিল সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং এ সময় বাংলাদেশের একটি শিল্পী দলও এশিয় সাংস্কৃতিক উত্সবে অংশ নিয়েছিল। চীন প্রতি বছর বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কয়েক ডজন বৃত্তি দিচ্ছে এবং বাংলাদেশে উসু, টেবিল টেনিস, সাঁতার ও শুটিং কোচ পাঠিয়ে খেলাধূলার উন্নয়নে সাহায্য করছে। বেসরকারী মৈত্রী সংস্থাগুলোও দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য ইতিবাচক অবদান রেখেছে।'
চীন ও বাংলাদেশ উভয়েই কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকীর ওপর গুরুত্ব দেয়। এ উপলক্ষে দু'দেশের সরকার বৈচিত্র্যময় উদযাপনী কর্মসূচীর আয়োজন বন্দোবস্ত করেছে। রাষ্ট্রদূত চাং জানিয়েছেন, 'দু'দেশের সরকার ও বেসরকারী সংস্থা উভয়েই এ বিশেষ দিবসটিকে খুব গুরুত্ব দেয়। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দু'পক্ষ একটি যুক্ত বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে পেইচিং ও ঢাকায় নানা উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দু'পক্ষ এ সুযোগে দু'দেশের মৈত্রীর ভিত্তিকে আরো মজবুত করতে ইচ্ছুক। চীনের আয়োজিত কর্মসূচীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চীন ও বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চীনের শিল্পী দলের বাংলাদেশ সফর, চীনা দূতাবাস আর বাংলাদেশের গবেষণা সংস্থা ও মৈত্রী সংস্থাগুলোর যৌথ আয়োজনে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ক সেমিনার, চীনের চিকিত্সা দলের বাংলাদেশের চোখের ছানি রোগীদের বিনামূল্যে চিকিত্সা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়। বাংলাদেশের শিল্পী দল ও অন্যান্য প্রতিনিধি দলগুলোও চীনে এসে ৩৫তম বার্ষিকী উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। রাষ্ট্রদূত চাং সিয়ান ঈ বিশ্বাস করেন, এ কর্মসূচীর মাধ্যমে দু'দেশের মৈত্রী আরো গভীর হবে। বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত চাং সিয়ান ঈ'র দেয়া চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩৫তম বার্ষিকী সম্পর্কিত সাক্ষাত্কার শুনলেন। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |