|
চীনের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ইতিহাস বলে, বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডেরই একজন ধর্মগুরু অতীশ দীপংকর হাজার বছর আগে চীনের তিব্বতে গিয়েছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। অন্যদিকে চীনের তরফেও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয় চতুর্দশ শতাব্দির একেবারে গোড়ার দিকে। ১৪০৫ সালে ইউনান প্রদেশের তখনকার সম্রাট ইয়াং লে তার একজন প্রতিনিধি পাঠান এ অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে। ওই প্রতিনিধি এ অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির দেশ সফর করেন। জানা যায়, গৌড়ের স্বাধীন সুলতানের সময়ে তিনি বাংলাদেশ ভূখন্ড সফর করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর দেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন। সেই সময় তিনি একজন কুটনীতিককে পেইচিং পাঠান। তবে তার সময়ে দু'দেশের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত না হলেও বাংলাদেশ চীনে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়। দু'দেশের সম্পর্ক গভীর হয জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র পরিচালনাকালে। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশী সরকার প্রধান হিসেবে চীন সফর করেন। সেই সময় দু'দেশের সম্পর্কের যে ভিত্তি রচিত হয়েছিল তা ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে এবং চীন বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত আরো প্রসারিত করতে থাকে। ১৯৯১-৯৬ বেগম খালেদা জিয়ার শাসনকালে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো জোরদার হয় এবং এরপর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহনের মাত্র ৩ মাসের মাথায় চীন সফর করেন। সে সফরকালে চীনের সঙ্গে সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বেশ ক'টি চুক্তি সম্পাদিত হয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এ পথ ধরে ২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি চীনের সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী জু রং চি ৩ দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশ যান। সে সময় দু'দেশের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০০২ সালের ২৩-২৭ ডিসেম্বর চীন সফর করেন। সে সফরকালে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি ও কারিগরি বিষয়ে ৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ২০০৫ সালের এপ্রিলে চীনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বাংলাদেশ সফর করেন। সেসময় দু'দেশ অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা, বিশেষ করে এ অঞ্চলের পানি সম্পদের সুরক্ষা ও স্থলপথ ব্যবহার, বিষয়ে একমত হয়। চীনা নেতার সফর শেষে ঘোষিত যৌথ ইশতিহারে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায় বাংলাদেশ ।
চীনের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে বহু সংখ্যক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি মৈত্রী সেতু ও বঙ্গবন্ধু মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র। এগুলো দু'দেশের বন্ধুত্বের মাইলফলক হিসেবে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে পূর্বমুখী কূটনীতি বা "লুক ইস্ট" নীতি অনুসরণ করছে। বলা বাহুল্য, এ নীতির মূল কেন্দ্র হলো চীন। বাংলাদেশ চীনের কুনমিং উদ্যোগকেও সমর্থন জানিয়েছিল। এ উদ্যোগের আওতায় চীন তার ইউনান প্রদেশ, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনামের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিল। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ব্যাপক সুবিধা লাভ করবে বলে আশা করা যায়। কারণ এর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার সৃষ্টি হবে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কেবল ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে এ ঘাটতির পরিমান ছিল ২শ' কোটি ডলারের উপরে। চীন থেকে বাংলাদেশ বস্ত্র ও বস্ত্রজাত পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, রাসায়নিক ও প্লাস্টিক দ্রব্য এবং যানবাহন আমদানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে চীন আমদানি করে পাট ও চামড়া।
এশিয়া প্যাসিফিক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের সাপটা ব্যাংকক চুক্তির আওতায় কতগুলো বাংলাদেশী পণ্যের ২০০৬ সাল থেকে চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা, যদিও শুল্কমুক্ত এসব পণ্যের খুব একটা রফতানি নেই বাংলাদেশের। যৌথ বিনিয়োগ এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। কারণ চীন এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি। আশা করা হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। -- শিয়াবুর রহমান
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |