প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারছি এতেই আমার খুব ভাল লাগছে
2010-03-05 15:04:53 cri
বাংলাদেশের সুনামগন্ঞ্জ জেলার শরিফা আক্তার পান্না রচনায় আমাদেরকে তাঁর একটি খুবই মজা গল্প জানিয়েছেন। এখন আমি আপনাদেরকে এ মজা গল্প বলবো। তিনি এমন লিখেছেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগ কর্তৃক আমি ও সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠান শীর্ষক নিবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় আমার খুবই ভাল লাগছে। কেননা এর ফলে আমি আমার হৃদয়ের লুক্কায়িত কথাগুলো বলতে পারব। আমি জানিনা আমি বিজয়ী হতে পারব কিনা। বিজয়ী হতে না পারলেও কোন ক্ষতি নেই। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারছি এতেই আমার খুব ভাল লাগছে। ৯ অক্টোবর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ। আমার জীবনের এক বিশেষ দিন। আমার বিয়ের দিন। চাইনিজ খাবারের প্রতি আমার দুর্বলতার কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানটা করা হয়েছিল ঢাকার একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। বিকেলেই 'কবুল' বলে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। প্রায় হঠাত্ করেই বিয়ের তারিখটা ঠিক হয়েছিল। তাই বরপক্ষের সাথে কথা ছিল 'আকদ' এরপর বর চলে যাবে তার নিজে বাসায়, আমি চলে যাব আমাদের বাসায়। আমার মানসিক প্রস্তুতিও ছিল সেরকম। কিন্তু 'কবুল' কলার পরই কথা পাল্টে গেল। বরের ক'জন বন্ধু আব্দার ধরল: বর সহ তারা আজ আমাদের বাসায় বেড়াতে যাবে। পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না বলে আমরা তাদের আব্দারে রাজী হইনি। বিন্তু বর নিজে আগ্রহ প্রকাশ করায় আমার ভাবী তাদেরকে রাতের দাওয়াত দিল। এখন শ্রোতাবন্ধুদেরকে চুপি চুপি বলছি, সেদিন সারাক্ষণ মুখে না বললেও আমাদের বাড়িতে বর অর্থাত্ আমার স্বামীর আগমনে আমি খুশীই হয়েছিলাম। ফুল ছাড়াই ফলশয্যা। সন্ধ্যে বেলাতেই আমাদেরকে বাসরঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হল। আমরা দু'জন বিছানায় বসে গল্প করছি। একটু পর পর ভাবী মজাদার সব নাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। দু'জনেরই প্রিয় সব খাবার, তবু বার বার নাস্তা নিয়ে আসায় ভাবীর প্রতি দু'জনই বিরক্ত হচ্ছিলাম। কিন্তু আমার জন্য যে আরো বড় বিরক্তি অপেক্ষা করছিল, তা কে জনত? সন্ধ্যের একটু পরেই আমার স্বামী ঘড়ির দিকে নজর পড়াতে হঠাত্ করেই উঠে গেলে। ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা রেডিও বের করে অন করল। আমি শুনলাম, মিষ্টি কন্ঠে একটি মেয়ে কথা বলছে। কি বলছে তা শুনার আগেই আমার বুকটা ধ্বক করে উঠল। আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। এমন সুললিত কন্ঠে একটি মেয়ে কথা বলছে, আর আমার স্বামী আমাকে ফেলে মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে কেন? কে সে মেয়ে? সে কি আমার স্বামীর বন্ধু? আগের প্রেমিকা? তার প্রেমিকাই যদি থাকবে, তাহলে আমাকে বিয়ে করল কেন? আর প্রেমিকা যদি নাই বা হবে, তাহলে এই ফল শয্যার রাতে আমাকে বসিয়ে রেখে তার কথা এত মনোযোগ দিয়ে শুনছে কেন? এমনই হাজার প্রশ্ন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাগে, আতংকে, দুঃখে, উত্তেজনায় আমার শরীর কাঁপতে লাগল। কার কথা শুনছে এবং কি শুনছে তা জানার জন্য আমি উঠে আমার স্বামীর কাছে গেলাম। স্বরটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। মেয়েটা বাংলায় কথা বলছে, কিন্তু তাকে কোন বাঙ্গালী বলে মনে হচ্ছে না। কেমন যেন একটা অদ্ভূত উচ্চারণের চমত্কার বাংলা। শব্দগুলো যেন সঙ্গীকের সুর, অতি সুমধুর। হঠাত্ করেই আমার রাগ পড়ে গেল। বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনে বুঝলাম, মেয়েটি চীন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পড়ছে। এরপর দু'জনে একত্রে ঐ অনুষ্ঠান শুনলাম। অনুষ্ঠান শুনা শেষ করে স্বামীর কাছ থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এভাবেই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানের সাথে আমার প্রথম পরিয়ে। এই রেডিও পাগল মানুষটির সাথে সংসার করতে করতে নিজেও সিআরআই'র বাংলা অনুষ্ঠান শুনা শুরু করেছিলাম। এখনো শুনছি। দীর্ঘদিন ধরে আমি সিআরআই'র নিয়মিত শ্রোতা। অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে চিঠি পত্রও লিখি। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান আমার খুবই ভাল লাগে। প্রায় সব অনুষ্ঠানই আমার প্রিয়। সন্ধ্যায় এসব অনুষ্ঠান শুনার জন্য আমি সারা দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। একটা ঘন্টা আমার সুখের ঘন্টা। যে কন্ঠে শুনে একদিন রেগে গিয়েছিলাম, সে কন্ঠেই এখন আমার রাগ কমানোর মহৌষধ। কোন কারণে স্বামীর সাথে ঝগরা বিবাদ হলেও সন্ধ্যায় সিআরআই'র অনুষ্ঠান শুনার সময় কিভাবে যেন তা মিটমাট হয়ে যায়। চা নাস্তা খেতে খেতে ঝগরা ভুলে দু'জনে এক সাথেই অনুষ্ঠান শুনি। তাই সিআরআই এখন এ পরিবারের একটি অংশ হয়ে গেছে। শরিফা আক্তার পান্না, আপনি আমাদেরকে একটি খুবই মজা গল্প জানিয়েছেন। আপনি আমাদের অনুষ্ঠানকে পছন্দ করার জন্য আমাদের অনেক গর্বিত লাগে। আপনাকে আমাদেরকে আপনাদের পরিবারের মত দেখানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, চিরদিন আপনি আমাদের বন্ধু হিসেবে আমাদের অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে শুনবেন এবং মতামত দেবেন।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা