|
ফ্রান্স বিপ্লবের শত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ১৮৮৯ সালের বিশ্ব মেলার স্থান হিসেবে প্যারিসকে বেছে নেয়া হয়েছিল । দেশবিদেশের দর্শকদের আকর্ষণের লক্ষ্যে প্যারিস বিশ্ব মেলার সাংগঠনিক কমিটি একটি উঁচু টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ৫৪ বছর বয়সী স্থপতি গুস্টাভ ইফেলের আঁকা নকশা টেন্ডার আহ্বান সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সাংগঠনিক কমিটির সদস্যরা মনে করেন , উনবিংশ শতাব্দি যখন শেষ হয়ে আসছে তখন ধাতব ও যন্ত্রকে বিজয়ের নিদর্শন হিসেবে যে গণ্য করা দরকার তা গুস্টাভ ইফেলের আঁকা নকশায় প্রতিফলিত হয়েছে।
কিন্তু সাংগঠনিক কমিটির সদস্যরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি যে, গুস্টাভ ইফেলের টেন্ডার পাওয়া নকশাটি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হতে পারে । ফ্রান্সের তিন শ' জনেরও বেশী শিল্পী ও স্থপতি যৌথভাবে যে একটি প্রতিবাদ লিপি প্রকাশ করেছিলেন তাতে বলা হয়েছিল যে , এ ইস্পাতের টাওয়ার একটি কুত্সিত দানব এবং একটি অদ্ভুত কালো চিমনি যাকে দেখে মানুষ ভয়ে কেঁপে উঠবে । এমন কি বিখ্যাত ঔপনাসিক ডে মোপাসান্ট এ কথাও বলেছিলেন যে ,এ টাওয়ার নির্মিত হলে আমি চিরকালের জন্য প্যারিস ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাবো ।
গণিতবিদ্যার সীমিত জ্ঞান সম্পন্ন একজন অধ্যাপক ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে , এ ইস্পাতের টাওয়ার ২২৮ মিটার উচ্চতায় নির্মিত হলে তা নিশ্চয়ই ধ্বসে পড়বে। তার কথা শুনে টাওয়ারটির নির্মাণস্থলের আশপাশের কিছু সংখ্যক বাসিন্দা প্রাণের ভয়ে জিনিষপত্র গুটিয়ে আতীয়সজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ।
গুস্টাভ ইফেলের নকশা করা ইফেল টাওয়ারের উচ্চতা তিন শ'মিটার ,কেন না , এ উচ্চতাই প্যারিসের তখনকার কয়েকটি প্রসিদ্ধ অট্টালিকা ,যথা ৬৮ মিটার উঁচু নোটর ডেম , ৫৪ মিটার উঁচু অপেরা প্রেক্ষাগৃহ , ৫২ মিটার উঁচু সেইন্ট জ্যাকস টাওয়ার , ৪৯ মিটার উঁচু বিজয় তোরণ , ৪৭ মিটার উঁচু জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ , এবং ২৭ মিটার উঁচু ক্লিওপেট্রা নিডলের মোট উচ্চতা অর্থাত ২৯৭ মিটারের চেয়েও বেশী হবে ।
ইফেল টাওয়ারের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। ১৮৯৯ সালের প্যারিস বিশ্ব মেলা চলাকালে প্রায় বিশ লাখ দর্শক ইফেল টাওয়ারের শীর্ষস্থানে উঠে চার দিকের সৌন্দর্য উপভোগ করেছিল । এখন ইফেল টাওয়ার শুধু প্যারিসের প্রতীক নয় , একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের পর্যটন শিল্পের আয়েরও একটি প্রধান উত্সও।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |