|
১৮৯৩ সালের চিকাগো বিশ্ব মেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য ।
উনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে যে ভোগবিলাসিতার প্রবণতা দেখা দেয় তা চিকাগো বিশ্ব মেলায় প্রমোদ পার্ক সৃষ্টির প্রধান কারণ । যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের প্রধান ধারার জীবন-মূল্যবোধ আমোদ-প্রমোদ ও বিলাসিতার দিকে মোড় নেওয়ায় যারা প্রমোদ শিল্পের সংগে জড়িত তাদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায় এবং তারা বিশ্ব মেলায় তাদের ব্যবসার স্থান পাওয়ার দাবি জানায় । তাদের এ দাবী যথাসময় পুরণ করা হয় ।
চিকাগো বিশ্ব মেলা উদ্বোধনের প্রথম মাসেও প্রমোদ পার্কের নির্মানকাজ সম্পন্ন হয় নি । প্রতিদিন বিশ্ব মেলার দর্শকদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিরিশ হাজার । প্রমোদ পার্ক চালু হওয়ার পর দর্শকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে ।শেষ দু'মাসে দর্শকদের সংখ্যা এক লক্ষ পঞ্চশ হাজারে পৌঁছে । কী দিনে , কী রাতে ,কী রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ,কী বৃষ্টিপাতের দিন , প্রমোদ পার্ক সবসময় লোকে লোকারণ্য ।
এ প্রমোদ পার্কের কেন্দ্রস্থলে দণ্ডায়মান আকাশচুম্বী ঘুরন্ত চাকা হলো চিকাগো বিশ্ব মেলার প্রতীক । চিকাগো বিশ্ব মেলায় বিশ্বের এ প্রথম আধুনিক আকাশচুম্বী ঘুরন্ত চাকার খেলাই সবচেয়ে সমাদৃত ছিল । প্রায় ১৬লক্ষ দর্শক এ আকাশচুম্বী ঘুরন্ত চাকার ছোটো ছোটো ঘরে কিছু ক্ষণ বসেছিল।
আনন্দস্ফুর্তি ছাড়া চিকাগো বিশ্ব মেলার প্রমোদ পার্ক বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও নানা ধরনের সংস্কৃতির আদান প্রদানকে ত্বরান্বিত করেছিল ।
প্রমোদ পার্কে পরিবেশিত উদ্দাম পেট নৃত্য দেখে অসংখ্য দর্শক মুগ্ধ হয় । বিদেশ থেকে আসা এ নৃত্য নিয়ে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্ব মেলার মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে প্রচলিত হয়ে ওঠে ।অর্ধ শতাব্দি পর এই নৃত্য মাঝে মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রডওয়ের অনুষ্ঠান ও হলিউডের চলচ্চিত্রেও দেখা যায় ।
চিকাগো বিশ্ব মেলার সার্থক প্রমোদ পার্ক যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী বিশ্ব মেলার জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বিশ্ব মেলার উদ্যোক্তরা এ কথা বুঝতে পেরেছে যে ,জনপ্রিয় প্রমোদই বিশ্ব মেলার সাফল্যের একটি অপরিহার্য শর্ত ।
তবে প্রধানত: উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মেলায় জাকজমকপূর্ণ প্রমোদ পার্ক খোলা হয় ।অন্যান্য মহাদেশে বিশ্ব মেলা অনুষ্ঠিত হলে প্রমোদের রঙ অনেকটা ফিকে হয়ে যায় ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |