Web bengali.cri.cn   
চীনাদের খাওয়া-দাওয়ার রীতিনীতি(ছবি)
  2009-11-13 19:57:23  cri

 চীনের একটি প্রবাদ আছে , ওষুধ সেবনের চেয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই ভালো। এর মানে নিজেকে আরো স্বাস্থ্যবান করার জন্য দৈনন্দিন খাবার ও খাওয়ার অভ্যাস আরো উপযুক্ত করা দরকার । যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো , তারা নিজেদের খাওয়া-দাওয়া ক্ষেত্রে অধিকতর বেশী মনোযোগ দেন । চীনে সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে খাওয়া দাওয়ার বিশেষ রীতি আছে । যেমন উত্সবের খাবার , বিয়ে অনুষ্ঠান ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের খাবার , বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের খাবার , জন্মবার্ষিকীর খাবার ও নতুন সন্তান জন্ম হওয়ার বিশেষ খাবার ইত্যাদি।

চীনের ঐতিহ্যিক খাবার--চিওচি

 আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আদান-প্রদানের সময় লোকেরা পরস্পরের সাথে উপহার বিনিময় করেন । যেমন আত্মীয়ের বাচ্চা হয়েছে বা বাড়ী বদল হয়েছে , তাদের বাড়ীতে যাওয়ার সময় সাধারণতঃ কিছু উপহার নেওয়া হয়। অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য স্বাগতিক ভালো ভালো খাবার দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন । ব্যবসা করার সময়ও ব্যবসায়ীরা সাধারণতঃ রেস্তোঁরায় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলাপ করেন , খাওয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার আলাপও শেষ হয় ।

চীনারা চপস্টিকস দিয়ে খাবার খায়

খাওয়ার ব্যাপারে চীনের বিভিন্ন জায়গার রীতিনীতিও একই নয় । পেইচিংয়ে প্রাচীনকালে অতিথিদের নুডুল্সখাওয়ানো হত । যদি মেহমান স্বাগতিকদের বাসায় থাকেন , তাহলে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য 'চিয়াও চি ' নামে এক ধরনের মাংসের পুর দেয়া পিঠা খাওয়ানো হয় । বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে আট ধরনের কেক- জাতীয় খাবার উপহার হিসেবে দিতে হয় । দক্ষিণ চীনের পল্লী অঞ্চলে অতিথি আসলে চায়ের কাপ দেয়ার পর অতিথিদের দু-তিনটা ডিমের সুপ বা অন্যান্য জল খাবার দেওয়ার রীতি আছে , জল খাবার খাওয়ার পর দুপুর বা সন্ধ্যাবেলার খাবার তৈরী করা হয় ।

দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের ছুয়েন চৌ শহরে স্থানীয় অধিবাসীরা অতিথিদের ফল খাওয়ান । তারা এই ফলকে ' থিয়েন থিয়েন ' বলেন , তার মানে মিষ্টি । ফলগুলোর মধ্যে কমলা থাকে , কারণ স্থানীয় ভাষায় কমলালেবুর উচ্চারণ ' চি ' কল্যান উচ্চারণের সামিল . কাজেই তারা মেহমানদের কমলালেবু খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের কল্যাণ আর তাদের জীবন কমলালেবুর মতো মিষ্টি হবে বলে কামনা করেন।

মেহমানদের আপ্পায়ন করার সময় তরি-তরকারীর সংখ্যাও একই নয় । পেইচিং শহরে সাধারণতঃ কমপক্ষে দুটি ঠান্ডা আর আটটি গরম তরকারী থাকতে হয় । উত্তর পূর্ব চীনের হেইলুঙচিয়াং প্রদেশে একই তরকারীর দুই প্লেট থাকতে হয় । কোনো কোনো অঞ্চলে তরকারীর মধ্যে মাছ থাকতে হয় , এর অর্থ হলো জীবনে কোনো অভাব না থাকা । নাগরিকদের জীবনে বিয়ে সম্পর্কিত ভোজানুষ্ঠান সবচেয়ে বেশী । যেমন বিয়ে প্রস্তাব ভোজ , বর-কনে দেখা-সাক্ষাতের ভোজ , বাগদান ভোজ , বিয়ে অনুষ্ঠানের ভোজ আর বিয়ের পর কনের বাপ-মার বাড়ী প্রত্যাবর্তন ভোজ ইত্যাদি । এই সব ভোজানুষ্ঠানের মধ্যে বিয়ে অনুষ্ঠানের ভোজ সবচেয়ে আড়ম্বর । যেমন পশ্চিম চীনের শানসি প্রদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রতিটি তরকারীর নাম আছে । যেমন প্রথম তরকারীর নাম হলো 'লাল মাংস' , চীনে লাল রংয়ের অর্থ হলো আনন্দ , এই তরকারীর অর্থ হলো গোটা পরিবার আনন্দে ভরপুর । দ্বিতীয় তরকারীর নাম হলো ' ছুয়েন চিয়া ফু ' , এর অর্থ হলো গোটা পরিবারই মহাসম্মীলন ও সুখশান্তিতে থাকা । তৃতীয় পরিবেশন এক মিষ্টি , এই মিষ্টি আঠা-চাউল , কুল , শুকনা ফল , পদ্মফুলের বীজ প্রভৃতি আট ধরনের খাবার দিয়ে তৈরী করা হয় , এর অর্থ হলো স্বামী-স্ত্রী পক্ককেশ পর্যন্ত সুখী জীবন যাপন করবেন । পূর্ব চীনের চিয়াং সু প্রদেশের পল্লী অঞ্চলে বিয়ে অনুষ্ঠানে ১৬টি তরকারী , ২৪টি তরকারী অথবা ৩৬টি তরকারী থাকার অভ্যাস আছে । বয়োবৃদ্ধদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ভোজানুষ্ঠানে দীর্ঘ নুডুল্স থাকতে হবে । পূর্ব চীনের হানচৌ শহর আর উত্তর চিয়াং সু অঞ্চলে বৃদ্ধদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর বেলায় দীর্ঘকায় নুডুল্স খাওয়া হয় আর সন্ধ্যায় ভোজানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । হানচৌশহরের অধিবাসীরা নুডাল্স খাওয়ার সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য নিজের বাটি থেকে দু-একটি নুডুল্স বের করে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে দেন , এর মানে হলো আয়ু বাড়ানো । তা ছাড়া সেদিন নুডুল্স এক বাটি খেলে হবে না , প্রত্যেককেই দুই বাটি নুডুল্সখেতে হবে , অর্ধেক বাটি হলেও দু বার খেতে হবে , তা না হলে অকল্যান বলে মনে করা হয় ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040