আজকের অনুষ্ঠানে প্রথমে পড়ে শোনাবো বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার লতা মুরশিদার লেখা। তিনি লিখেছেন: সময়টা ২০০০ সাল। আমার বিয়ে ঠিক হয় নওগাঁ জেলার এক গ্রামে। শুনেছিলাম হবু স্বামী একজন বেসরকারি চাকুরিজীবি লোক। বাবা-মার ইচ্ছা অনুযায়ী এই বিয়ে। নির্ধারিত দিনে আমার বিয়ে হয়। আমি পিতামাতার ৩য় কন্যা। আমার কোনো ভাই নেই। যথারীতি বিবাহের সব কার্য শেষ করে হবু বরের পাশে মাইক্রোবাসে করে চললাম আমার বাড়ি থেকে ঠিক ৫০ কিলোমিটার দূরে মেয়েদের আসল ঠিকানা তথা ২য় বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। আমরা সবাই জানি, একজন পূর্ণ বয়স্কা বাঙালি নারীর জীবনের সেরা রাত হল তার বিয়ের রাত বা বাসর রাত। এই রাতে দুটি অপরিচিত বাঙালি নর-নারী একই চাল বা ছাদের নিচে তাদের দীর্ঘ জীবনের সূচনা করে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। সন্ধ্যার পর শ্বশুরবাড়িতে এসে উপস্থিত হলাম। এলাকার অনেক মানুষ নতুন বৌ হিসেবে আমাকে এক নজর দেখতে এলো। আমার তখন বেশ নার্ভাস লাগছিল। আমার একমাত্র পরিচিত ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন আমার নানি আসিয়া খানম। আমি নানিকে বললাম, 'আমার স্বামী কোথায়? তাকে তো দেখছি না!' হঠাৎ একটি ছোট ছেলে এসে জানাল, আমার স্বামী রেডিও শুনছে। পরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যখন বাসরঘরে ঢুকলাম, দেখি উনি তখনও রেডিও শুনছেন! জানতে চাইলাম, 'আপনি কবে থেকে রেডিও শুনছেন?' জানালেন, গত ১৫ বছর ধরে। ঐ মুহূর্তে রেডিওতে CRIবাংলার চিঠিপত্রের আসরে উনার লেখা চিঠি পাঠ করে শোনাচ্ছিলেন একজন চীনা মানুষ। তিনি অতি মনোযোগ দিয়ে তা-ই শুনছেন। আমাকেও টেনে পাশে বসালেন; শুনতে অনুরোধ করলেন। আমিও শুনলাম চিঠির পাঠ। আমার কাছে আমার স্বামীর লেখা চিঠিটি বেশ গঠনমূলক ও অর্থবহ মনে হল। বিয়ের প্রথম রাতে আমাদের উভয়ের মধ্যে যত কথাবার্তা হয়েছিল, তার অর্ধেক ছিল CRIবাংলা বেতারকেন্দ্র ও এর সুন্দর বাংলা অনুষ্ঠান নিয়ে। নতুন স্বামী CRIবাংলা থেকে পাওয়া উপহার-সামগ্রী আমাকে আগ্রহ নিয়ে দেখালেন। আমি জানলাম, আমার স্বামী একজন বড় মাপের ডিএক্সার।
বন্ধু লতা মুরশিদা, আপনার সুন্দর লেখা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। আশা করি, আমরা আজীবন পরস্পরের বন্ধু থাকব। অন্য শ্রোতারাও আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন, আশা করি। আপনাদের লেখার অপেক্ষা করছি।
<< 1 2 3 4 >>