উ জে থিয়ানের তৃতীয় অবদান ছিলো, সীমান্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা। তিনি ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিকে সীমান্ত অঞ্চল নিরাপদ ছিলো না। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে পশ্চিম টার্কস এবং তিব্বত প্রায় আক্রমণ করতো। এছাড়া উত্তর দিকে টার্কস ও উত্তর-পূর্ব দিকের ছিতান জাতি প্রায় হামলা করতো।
এই পরিস্থিতিতে উ জে থিয়ান পাল্টা আক্রমণ সংগঠনের পাশাপাশি সীমান্ত অঞ্চলে থানা স্থাপন করেন। সেখানে স্থায়ীভাবে সৈন্য বাহিনী মোতায়েন করেন। সীমান্ত অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নের সংস্কার করেন। তিনি সংযমী সাংস্কৃতিক নীতির মাধ্যমে বহুবিধ সংস্কৃতির উন্নয়ন ধারা গ্রহণ করেন। এভাবে সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি ধাপে ধাপে নিরাপদ হয়ে ওঠে।
তার চতুর্থ অবদান ছিলো, নিজ রাজ্যের সংস্কৃতির উন্নয়নের অগ্রসর করা। তিনি সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগে রাজকীয় পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। প্রথমবার পরীক্ষার সময় তিনি নিজেই পরীক্ষার স্থানে উপস্থিত থাকতেন এবং পরীক্ষা পরিচালনা করতেন। তিনি কর্মকর্তা নির্বাচনের সময় প্রার্থির পারিবারিক অবস্থা না দেখে প্রার্থীর মেধা ও রাজনৈতিক দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেন। এ ব্যবস্থা প্রবর্তণের ফলে সমাজের সাধারণ ছাত্রদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কারণ এর আগে নিয়ম ছিলো উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের পুত্ররাই শুধুমাত্র বাবাকে অনুসরণ করে সরকারি বড় বড় পদে চাকরি করার সুযোগ পাবে। সম্রাজ্ঞি উ জে থিয়ান এ প্রথা বিলুপ্ত করে সাধারণ ঘরের মেধাবী ছেলেদের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন।
উ জে থিয়ানের আমল থেকে গোটা সমাজে সংস্কৃতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সংস্কৃতির সার্বিক উন্নয়ন হয়। সে সময় চীনের ভাস্কর্য ও ছবি আঁকার মান অভূতপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছায়।
অভিনেত্রী লিউ সিয়াও ছিং
বন্ধুরা, চীনের চলচ্চিত্র সহযোগিতা কোম্পানি ও কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্র ১৯৯৫ সালে 'উ জে থিয়ান' নামে ৩০ পর্বের একটি টিভি নাটক তৈরি করে। চীনের বিখ্যাত অভিনেত্রী লিউ সিয়াও ছিং উ জে থিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি অন্য টিভি নাটকেও আরো দু'বার উ জে থিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এখন শুনুন এই নাটকের প্রধান গানটি। গানের নাম 'তিনি মেকআপ ভালোবাসেন না, ভালোবাসেন বিশ্বকে'। গেয়েছেন লি না। গানে বলা হয়েছে, 'চীনের প্রথম ও একমাত্র সম্রাজ্ঞী উ জে থিয়ান। মেকআপ পছন্দ করতেন না। দেশ শাসন করতে পছন্দ করতেন। চীনে পুরুষকে সম্মান করা এবং নারীকে অপমান করার পর কয়েক হাজার বছর পার হয়ে গেছে। উ জে থিয়ান নারীদের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন এবং ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।
উ জে থিয়ান চীনের সংস্কৃতির ব্যাপক সংস্কার করেন। তিনি জে থিয়ান অক্ষর সৃষ্টি করেন। পরবর্তিতে সে অক্ষরগুলো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। জে থিয়ানের সৃষ্টি করা কিছু কিছু অক্ষর এখনো জাপানী ভাষায় ব্যবহার করা হয়।
২০১৩ সালে চীনের চলচ্চিত্র গ্রুপ কর্পোরেশন এবং থাংদে আন্তর্জাতিক মিডিয়া লিমিটেড কোম্পানি 'উ জে থিয়ান' নামে একটি টিভি নাটক তৈরি করে। ৮২ পর্বের এই নাটক নির্মান করতে ২০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ব্যয় করা হয়। চীনের অনেক বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রী এ নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে চীনের মূলভূখণ্ড ও তাইওয়ানে প্রচারিত হয়। এখন শুনুন এ নাটকের প্রধান গান। গেয়েছেন সুন নান।
উ জেন থিয়ান রাজ্য শাসনে বিশেষ অবদান রাখলেও তাকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক মূল্যায়নও করা হয়েছে। যেমন বলা হয়, তিনি ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে গুপ্তচরদের সুযোগ দিতেন এবং নিষ্ঠুর কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দিতেন। এ কারণে চীনের মহান নেতা মাও জে তোং বলেছেন, 'উ জে থিয়ানের সত্যিকার অর্থেই দেশ পরিচালনার সামর্থ্য ছিলো। তার সহনশীলতা ছিলো। লোকজনকে জানার প্রখর বুদ্ধিও ছিলো। কর্মকর্তা নিয়োগ করার কৌশলও তিনি বেশ নিপুনভাবে জানতেন। নিজের রাজত্বকালে তিনি অনেক দক্ষ কর্মকর্তা বাছাই করেছেন। অবশ্য অনেক লোককে হত্যাও করেছেন তিনি।'
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, 'সুর ও বানী' আসরে আপনারা চীনের একমাত্র সম্রাজ্ঞি উ জে থিয়ানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানলেন। শুনলেন তার জীবনী সম্পর্কিত টিভি নাটকের কয়েকটি গানও। অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের কোনো মতামত থাকলে আমাকে লিখে জানাবেন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা : ben@cri.com.cn। আমার ফেসবুকের নাম : Anandi Yu. (ইয়ু/মান্না)