চীনের দক্ষিণ সমুদ্রের পূর্ব তীরে বো আও নামে ছোট্ট একটি শহর আছে। শহরটির আয়তন মাত্র ২ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১০ হাজারের কিছু বেশি। ২০০২ সাল থেকে 'বো আও এশিয়া ফোরাম'-এর নিয়মিত বার্ষিক সম্মেলন এখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে সময় ছোট্ট শহরটি বিশ্ব তথ্য মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বো আও চীনের হাইনান প্রদেশের ছুং হাই শহরের অধিনে থাকে। পৌর সরকারের কর্মকর্তা ওয়াং ই শুরু থেকেই ফোরামের প্রস্তুতি কাজে অংশ নেন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, যখন তিনি প্রথম বারের মতো বো আও-য়ে আসেন তখন এখানকার দৃশ্য দেখে চীনের প্রাচীনকালের কবি থাও ইউয়ান মিং-এর বিখ্যাত কবিতা 'পল্লীস্বর্গ'-এর কথা তার মনে পড়ে যায়। তিনি বলেন,
১৯৮৫ সালে আমি ছোট্ট বো আও শহরে আসি। ছোট নৌকায় করে তোং ইউ দ্বীপে পৌঁছে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে ভাবছিলাম, এটা সত্যিই পল্লীস্বর্গ। সারা তোং ইউ দ্বীপ পল্লীস্বর্গের মতো সুন্দর। এখানকার মানুষও খুবই সরল।
এই প্রাকৃতিক দৃশ্য একই কারণে শিল্পপতি ও সমাজকর্মী চিয়াং সিয়াও সোংকেও আকর্ষণ করে। তিনি অর্থ বিনিয়োগ করে বো আও'-এর উন্নয়ন ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বো আও ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর চিয়াং সিয়াও সোং একেবারেই নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইন এই তিনটি দেশের সাবেক শীর্ষ নেতাদেরকে সেখানে গলফ খেলতে আমন্ত্রণ জানান। শেষ পর্যন্ত তারা স্থায়ী বো আও এশিয়া ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বো আও এশিয়া ফোরাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বো আও-কে সম্মেলনের স্থায়ী ভেন্যু হিসেবে ঠিক করা হয়। দ্বিতীয় বছর থেকে প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে সেখানে বড় আকারে ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শীর্ষ রাজনীতিকরা সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নিয়ে এশিয়া ও বিশ্বের উন্নয়নের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। চিয়াং সিয়াও সোং বলেন,
আসলে প্রায় বিনা কারণেই তখন বো আও-য়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতো ভালো প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনের ভেতরে একটা আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠলো। অনেক কাজই সেখানে শুরু হলো। তবে মোটেও এশিয়া ফোরামের কারণে বো আও-কে বাছাই করা হয়নি, বরং বো আও'এর কারণে এশিয়া ফোরামের জন্ম হয়েছে। পাশাপাশি এশিয়া ফোরামের জন্ম সে সময়ে পুরো এশিয়ার দাবি মেটাতেই।
গাড়ি করে ছুং হাই শহর থেকে ছোট্ট বো আও-য়ে যেতে মাত্র আধঘন্টা লাগে। বো আও এমন একটা জায়গা যেখান থেকে সব জায়গায় যাওয়ারই পথ আছে। সুতরাং বো আও-এর বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকলো। এ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে এ পর্যন্ত, শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। আগেকার কৃষি ও মত্স্য শিল্প কালক্রমে পর্যটন শিল্পে রূপ নিয়েছে, যা এখন সেখানকার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। এখন ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর শতাধিক বড় ও ছোট সম্মেলন এখানে অনুষ্ঠিত হয়। তারকা মানের হোটেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় কৃষকদের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা ৩৫টি হোটেলে প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ পর্যটককে আপ্যায়ন করা হয়। পর্যটন মৌসুমে ছোট শহর বো আও'এর ইউ তাই থান জাহাজঘাট থাকে জমজমাট।
1 2 3
|