|
চীনের হাইনান দ্বীপে পর্যটকদের শুল্কমুক্ত কেনাকাটা নীতি গত বছরের ২০ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর হয়। তখন থেকে হাইনান দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু-ডো, জাপানের ওকিনাওয়া আর তাইওয়ানের ফাংহু দ্বীপের পর বিশ্বের চতুর্থ 'দ্বীপ শুল্কমুক্ত' নীতি কার্যকর করা স্থান। এখন হাইনানের সানইয়া শুল্কমুক্ত দোকান আর হাইখো মেইলান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুল্কমুক্ত দোকান আছে। হাইখো মেইলান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুল্কমুক্ত দোকান হচ্ছে চীনের প্রথম 'দ্বীপ শুল্কমুক্ত' দোকান।
হাইখো মেইলান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর
চেনচিয়াং প্রদেশের পর্যটক মি. চুয়াং গত সপ্তাহে তার হাইনান সফর শেষ করার আগে যথেষ্ঠ সময় নিয়ে শুল্কমুক্ত দোকানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য দেড় ঘন্টা আগে হাইখো মেইলান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। তিনি বোর্ডিং কার্ড নিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর সরাসরি হাইখো শুল্কমুক্ত দোকানে যান। সেখান থেকে তিনি ২৮৫ ইউয়ান রেনমিনপি মূল্যের এক বোতল ডিও ব্র্যান্ডের তরল ফাউন্ডেশন কেনেন। তিনি বলেন, 'আমি আমার স্ত্রীর জন্য এটা কিনেছি। এখানে এ রকম তরল ফাউন্ডেশনের দাম ২৮৫ ইউয়ান। অথচ চেনচিয়াংয়ের ওয়েনচৌতে এর দাম ৬২০ ইউয়ান। এখানকার পণ্যের গুণগত মানের নিশ্চয়তা আছে এবং দামও যথার্থ। এখানে কেনাকাটার পরিবেশ ভালো, জায়গা বড়। এ দোকানের কর্মীদের সেবার মান ভালো। সাড়ে ১১টা আমার ফ্লাইট। আমি হাইখো থেকে ফুচৌতে যাবো। এটা কিনে আমি চলে যাবো।'
কাউন্টারে টাকা দেওয়ার সময় মি. চুয়াং নিজের পরিচয়পত্র আর বোর্ডিং কার্ড প্রদর্শন করেন। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে টাকা প্রদান প্রক্রিয়া শেষ। তারপর তিনি সবে কেনা শুল্কমুক্ত পণ্য নিয়ে বিমানবন্দরের বিশ্রামাগারে গিয়ে বিমানের জন্য অপেক্ষা করেন।
শুল্কমুক্ত দোকানের একজন কর্মী জানান, হাইখো শুল্কমুক্ত দোকানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে কেনার সাথে সাথে পণ্য নিয়ে যেতে পারা। কারণ এ দোকান আলাদা অঞ্চলে থাকে। পর্যটকরা কেবল নিরাপত্তা পরীক্ষা অতিক্রম করার পর এ দোকানে ঢুকতে পারেন। পর্যটকরা এখানে কোনো পণ্য পছন্দ করলে সরাসরি কাউন্টারে গিয়ে টাকা দেওয়ার পর তা নিয়ে বিমান উঠতে পারেন।
মি. চুয়াংয়ের মতো পর্যটক ম্যাডাম চু বিমানের জন্য অপেক্ষা করার সময় এ পুরো শুল্কমুক্ত দোকান ঘুরে দেখেছেন এবং এখানকার নানা পণ্য দিয়ে তাঁর ঝুড়ি ভরেছেন। তিনি বলেন, 'এখানকার শুল্কমুক্ত দোকানে পণ্য অনেক আছে। আমি বন্ধুদের জন্য চকোলেট, প্রসাধন সামগ্রী ও সুগন্ধী কিনেছি।'
হাইখো শুল্কমুক্ত দোকান হাইখো মেইলান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় অবস্থিত। এ দোকানের আয়তন ২১৫০ বর্গমিটার। প্রধানত অলংকার, সুগন্ধী, প্রসাধন সামগ্রী, চকোলেট, রোদ-চশমা, কাপড়-চোপড়, ব্যাগ, ঘুড়ি ইত্যাদি বিক্রি হয় এখানে। এখন শুল্কমুক্ত দোকানের পণ্য প্রথম দিকের ১৩ ধরনের ১০৭০টি পণ্য থেকে সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে ১৮ ধরনের ৯২টি ব্র্যান্ডের প্রায় ৫০০০টি পণ্যে পৌঁছেছে। এর মধ্যে এসটি লডার, ডিওর, ল্যানকোম, ক্লিনিক, ক্লারিনস, শিসেইদো, গুচি আর বারবারিসহ ১২০টিরও বেশি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রয়েছে।
সংবাদদাতা লক্ষ্য করেন, সুগন্ধী ও প্রসাধন সামগ্রীর মধ্যে ২০০ থেকে ১০০০ ইউয়ান দামের একক পণ্য আর ৯০০ থেকে ২০০০ ইউয়ান দামের সেট পণ্য সবচেয়ে বেশি। বাক্স ও ব্যাগ আর ঘুড়ির দাম সব এক হাজার ইউয়ানের ওপর। বেশির ভাগের দাম তিন বা চার হাজার ইউয়ান। এখানকার একটি দাম ঘুড়ির দাম সাত হাজার ইউয়ান।
হাইখো মেইলান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের শুল্কমুক্ত দোকান
হাইনান এয়ারলাইন্স গ্রুপ লিমিডেটের স্থায়ী নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্ট লিউ জুন ছুন হাইখো শুল্কমুক্ত দোকানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, এ দোকানের পণ্যের দাম হংকংয়ের একই ধরনের দোকানের পণ্যের দামের চেয়ে বেশি নয়। এটা সানইয়া শুল্কমুক্ত দোকানের দামের প্রায় সমান। যেমন সুগন্ধী ও প্রসাধন সামগ্রীর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্যের দাম ৫ হাজার ইউয়ানের নিচে। হাইখো শুল্কমুক্ত দোকানে গলফ খেলাসহ কিছু ক্রীড়া ও বিনোদন পণ্য আছে।
'দ্বীপ শুল্কমুক্ত' নীতি কার্যকর হওয়ার পর ৫ হাজার ইউয়ানের মধ্যে আমদানি পণ্য কিনলে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক হার ছাড়া পাওয়া যায়। যেমন ৫০০০ ইউয়ানের প্রসাধন সামগ্রী বা পারফিউম কিনলে প্রায় দেড় হাজার থেকে ২৫০০ ইউয়ান সাশ্রয় হয়।
ম্যাডাম হো মাত্র এ দোকান থেকে একটি গুচির রোদ-চশমা কিনেছেন। তিনি কিছু দিন আগে ইতালির মিলান থেকে ফিরেছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, একটি নকশা চশমা কিনতে চাইলে বিদেশে ২০০০ ইউয়ানের বেশি দাম পড়ে। অথচ হাইখো শুল্কমুক্ত দোকানে দাম মাত্র ১৭৫০ ইউয়ান। অনেক সস্তা।
বিভিন্ন সময়ের ফ্লাইটের যাত্রীদের চাহিদা মেটানোর জন্য শুল্কমুক্ত দোকান রোজ সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত - মোট ১৭ ঘন্টা খোলা থাকে।
শুল্কমুক্ত দোকানে আমদানি পণ্য কেনার সময় ইংরেজি ভাষা না জানলেও অসুবিধা নেই। কারণ হাইখো শুল্পমুক্ত দোকানের প্রতিটি পণ্যের পিছনে চীনা ভাষার ব্যাখ্যা আছে। সেখানে পণ্যের দাম, উত্পাদনের স্থান ও পণ্যের উপাদানসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
তা ছাড়া পর্যটকের কেনাকাটার সময় কমানোর জন্য শুল্কমুক্ত দোকানে একজন কর্মী দিয়ে একজন ক্রেতাকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। হাইখো মেইলান বিমানবন্দরের শুল্কমুক্ত দোকান কোম্পানি লিমিডেটের স্থায়ী উপ-ব্যবস্থাপক সুন ইয়োং বলেন, 'ক্রেতাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা দেরিতে আসা যাত্রীদের জন্য বিশেষ কাউন্টার আর সাধারণ অভ্যর্থনা ডেস্ক স্থাপন করেছি। কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কিছু জানতে চাইলে পর্যটকরা অভ্যর্থনা ডেস্কে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তা ছাড়া আমরা ক্রেতাদের জন্য অনেক কেনাকাটার ঝুড়ি রেখেছি। ক্রেতারা ঝুড়ি নিয়ে পণ্য বাছাই করতে পারেন। ক্রেতারা এ দোকানের যে কোনো ক্যাশ কাউন্টারে টাকা পরিশোধ করতে পারেন। কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের দাম পরিশোধের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ক্যাশ কাউন্টার নেই।'
| ||||
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |