Web bengali.cri.cn   
তিব্বতের স্বেচ্ছাসেবক দেং ইউজুয়ানের গল্প
  2015-11-21 17:00:30  cri

তিনি ওয়েবসাইট থেকে সম্প্রতি একটি গিটার কিনেছেন। তিব্বতে পরিবহন-ব্যবস্থা তেমন ভাল না। যেমন, আলি এলাকায় গ্রীষ্মকালে ওয়েবসাইট থেকে জিনিস কিনে ডেলিভারি পেতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। যদি শীতকালে তুষারপাত হয়, তাহলে এক থেকে দুই মাসও লাগতে পারে। তিনি বলেন,

(রে ৩)

'আমার প্রতি মাসের বেতন ৩১৪৯ ইউয়ান রেনমিনপি। এর মধ্যে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার আমাকে দেয় ১ হাজার ইউয়ান এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দেয় ২১৪৯ ইউয়ান। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। কিন্তু সিনেমা টিকিটের দাম কম। সেজন্য এখানে আমি ধনীও না, আবার দরিদ্রও না।'

তিব্বতে আসার পর এক বছর দেং ইউজুয়ান কখনও বাড়ি যেতে পারেননি। একবার তিনি পেইচিংয়ে ভাষণ দেন। লাসা থেকে পেইচিংয়ে যাওয়ার পথে ট্রেন লানচৌ স্টেশনে দশ মিনিট থামে। তাঁর বাবা-মা তখন স্টেশনে এসেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার ভয় ছিল তাঁরা আমাকে দেখে কাঁদবেন। সেজন্য আমি তাঁদের সঙ্গে দেখা করার পরপরই দ্রুত আবার ট্রেনে উঠে পড়ি।'

এক বছর আগে থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিব্বতে এসেছিলেন ৬০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ছাংদু এলাকায় যান এবং বাকিরা লাসায়। কিন্তু দেং ইউজুয়ান এসেছেন আলিতে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

(রে ৪)

'আসলে আলি আসার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে আমার। আমি শুনেছি, এখানে লোকসংখ্যা মাত্র ৯০ হাজার। আমি মনে করি, যেখানে লোকসংখ্যা কম, সেখানে কাজ বেশি। আমি এখানে অবদান রাখতে চেয়েছিলাম। আমার এ সিদ্ধান্তের জন্য আমি কখনও অনুতাপ করিনি। আমি জানতাম না যে চীনে এতো দরিদ্র এলাকা রয়েছে। কিন্তু আমি এখানে আসার দু'দিনের মধ্যেই এখানকার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছি।'

আলি এলাকা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত। আলি নেপাল, ভারত ও কাশ্মিরের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। আলির আয়তন ৩.৪ লাখ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। আলি'র জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক কম। আলির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৪৩০০ মিটার উঁচুতে। এখানকার আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও শুষ্ক। বছরে বৃষ্টি হয় খুবই কম। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধানও অনেক। শীতকাল অনেক লম্বা।

এ সম্পর্কে দেং ইউজুয়ান বলেন,

(রে ৫)

'আলি এলাকায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বাড়িতে তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। আমরা ঘর গরম রাখার জন্য নিজেদের উদ্যোগে কয়লা জ্বালাই। কিন্তু আমার ঘরের ঠাণ্ডা এতে কাটে না। কয়লা জ্বললেও ঘরে ঠান্ডা লাগে। তা ছাড়, কয়লা জ্বালানো হলে ঘরও অনেক নোংরা হয়। এখানে মাত্র জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘরে কয়লা না-জ্বালালেও চলে। জুন মাসেও এখানে তুষারপাত হয়। আলিতে গ্রীষ্মকাল বলে কিছু নেই।'

দেং ইউজুয়ান জানান, এখানে সূর্যের আলোতেও বাইরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয় পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন,

(রে ৬)

'এখানে আমার ঠাণ্ডা লাগে। কারণ, এখানকার আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও শুষ্ক। মালভূমিতে অক্সিজেন কম। সেজন্য অনেকের সবসময় ঠাণ্ডা লাগে। আমি সপ্তাহে মাত্র একবার গোসল করি। একবার গোসল করতে খরচ হয় ২০ ইউয়ান রেনমিনপি। আগে আমার চুল অনেক লম্বা ছিল, কিন্তু এখন আমি কেটে ছোট করেছি।'

দেং ইউজুয়ান সুন্দরী, ফর্সা। কিন্তু আলিতে আসার এক বছরের মাথায় তাঁর চেহারা অনেক কালো হয়েছে। তাঁর মাও তাঁকে দেখে যেন ঠিক চিনেন না। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

(রে ৭)

'এখানে আমাকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তারপরও আমি এখানেই কাজ করে যেতে চাই। দুই বছর স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করার পর আমি এখানে স্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবো। আমি আলি পছন্দ করি। কারণ, এখানকার মানুষ শান্ত ও সরল; এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর। আমি নিজের আগ্রহেই এখানে কাজ করি।'

দেং ইউজুয়ানের স্কুল আলি এলাকার গেএর জেলার শিছুয়ানহে থানায় অবস্থিত। এখানে আকাশ নীল। এখানকার মানুষ তাকে তাদের নিজেদের মেয়ের মত ভালবাসেন। স্কুলে কর্মী মোট ২৩ জন। এর মধ্যে তিব্বতী জাতির ১৭ জন। দুই-তিন জন সহকর্মী তাঁর চেয়ে কয়েক বছর বড়। বাকি সহকর্মী তাঁর বাবা-মার বয়সী। সেজন্য সবাই তাঁকে মেয়ের মতো দেখেন। তিনি প্রতিদিন দুপুরে স্কুলের ক্যান্টিনে খান। রাতে সহকর্মীদের বাড়িতে খান।

(রে ৮)

'সাম্প্রতিক কালে আমি প্রায় প্রতিদিন আমাদের স্কুলের উপ-প্রাধানের বাড়িতে ডিনার খেয়েছি। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মত দেখেন।'

দেং ইউজুয়ান হাসিখুশি একটি মেয়ে। বলা হয়, হাসিখুশি মেয়ের ভাগ্য সবসময় ভালো হয়। আমরা তার সাফল্য ও সুখ কামনা করি।

1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040