0918xi.m4a
|
নামাস্তে, সবাই ভালো আছেন। ভারতের ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ারস্ কাউন্সিলের আমন্ত্রণে এখানে সবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। শুরুতেই চীন সরকার ও জনগণ এবং আমার পক্ষ থেকে ভারতের মহান জনগণের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দীর্ঘ দিন ধরে চীন-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের প্রতিও আমাদের সম্মান ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
১৯৯৭ সালে আমি ভারত সফর করেছিলাম। তখন আমি চীনের একটি প্রদেশে প্রশাসনিক কাজ করতাম। সে সফরে ভারত আমার মনে খুব সুন্দর ছাপ ফেলেছিলো। ১৭ বছর পর যখন আবার এ উচ্ছল ভূমিতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় জনগণের উজ্জ্বল অগ্রগতি দেখছি এবং ভারতীয় জনগণের পরিশ্রমের মর্ম উপলব্ধি করছি। এখন ভারতের উন্নয়নকে সত্যিকারের 'ইনক্রেডিবল' বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত একটি রহস্যময় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। এটি কয়েক হাজার বছরের সভ্যতার জন্মস্থান। দীর্ঘ ও জটিল পথ অতিক্রম করে ভারত এখন উজ্জ্বল ও উন্নয়নের পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতে এসে যেন ইতিহাসের একটি রঙিন করিডোরে ঢুকেছি, যার গতকাল ছিলো মহান আর আজ উত্তেজনাময় এবং আগামীকাল প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনগণ ভবিষ্যতের ব্যাপারে আস্থাশীল। আন্তর্জাতিক সমাজও ভারতের ওপর অনেক ভরসা রাখে। এবারের সফরে আমি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছি এবং ব্যাপক ঐকমতে পৌঁছেছি। দু'দেশের কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে এবং অংশীদারি সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে আমরা একমত হয়েছি।
চীনের সাবেক নেতা তেং শিয়াও ফিং বলেছিলেন, 'কেবল চীন ও ভারত উন্নত হলে প্রকৃত এশীয় শতাব্দী বাস্তবায়িত হবে'। ভারতের সাবেক নেতা জওহরলাল নেহেরুও বলেছেন, 'ভারত ও চীন এক হলে তা হবে, এশিয়া তথা বিশ্বের জন্য একটি বড় ব্যাপার'। এশিয়ার দুটো বৃহত্তম দেশ হিসেবে এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রে দু'দেশের ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে।
ভদ্র মহোদয়া ও মহোদয়গণ, বন্ধুরা,
প্রাচীনকাল থেকে দু'দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশ অভিন্ন সমস্যা থেকে বের হয়ে এসেছে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, 'চীন ও ভারত একই সমস্যার অংশীদার, একই সঙ্কটের পথে চলা পথচারী'। ব্রাজিলের ফোর্তালেজায় প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাকে বলেছিলেন, চীন ও ভারত হলো দু'টো দেহে এক আত্মা। এ সব কথা দিয়ে চীন ও ভারত দুটি সভ্যতার শান্তিগামী মর্মের আন্ত:সংযোগ প্রকাশিত হয়েছে।
চীন ও ভারতের দু'হাজার বছরের সম্পর্কের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। 'বুদ্ধ মুখী মন পশ্চিম দিকে, বৌদ্ধ ধর্ম পূর্বে চলে আসে" এ কথাটিতে চীন ও ভারতের জনগণের যোগাযোগের ইতিহাসের রঙিন বৌদ্ধ ধর্মের বিনিময় বর্ণনা করা হয়েছে। খ্রিস্টাব্দ ৬৭ সালে ভারতের প্রখ্যাত ভিক্ষু কাসয়াপা মাতাঙ্গা ও ধর্মরত্না চীনের লোইয়াংতে এসে গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তাঁদের অনূদিত '৪২ অধ্যায়ের সূত্র' হচ্ছে চীনের বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের সর্বপ্রথম অনুবাদ গ্রন্থ। এরপর হিউয়েন সাং পশ্চিমাভিযান চালিয়ে সাদা ঘোড়ায় করে ভারতের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় গ্রন্থ চীনে নিয়ে আসেন। চীনের বিখ্যাত নৌ অভিযাত্রী চাং হোয়ের সাত বারের সমুদ্র অভিযানে ছয় বার ভারতে গিয়ে চীনের মৈত্রী পৌঁছে দেন। ভারতের নাচ গান, জ্যোতির্বিদ্যা, বর্ষপঞ্জি, সাহিত্য, স্থাপত্য, চিনি উত্পাদনের প্রযুক্তি চীনে প্রবেশ করে। চীনের কাগজ তৈরি, রেশম সূতা, চীনামাটির বাসন, চা ও সংগীত ভারতে প্রবেশ করে। এগুলো হচ্ছে দু'দেশের জনগণের প্রাচীনকাল থেকে যোগাযোগ এবং পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের ঐতিহাসিক প্রমাণ।
| ||||