Web bengali.cri.cn   
চলুন বেড়িয়ে আসি "ছাং দে" থেকে
  2014-06-18 16:38:22  cri


প্রিয় শ্রোতা বন্ধু, আপনারা শুনছেন সুদূর পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আজকের "চলুন বেড়িয়ে আসি" অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি জান্নাতুন নাহার।

বন্ধুরা এর আগে আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম হ পেই প্রদেশের "পেই তায় হ" সমুদ্র সৈকতে। আজ আমরা হ পেই প্রদেশের আরেকটি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য, ছাং দে থেকে বেড়িয়ে আসবো।

আর আজ আমাদের সাথে আছেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের মাননীয় পরিচালক ম্যাডাম ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দি। তিনি কিছুদিন আগে বেড়িয়ে এসেছেন আমাদের আজকের ভ্রমণ গন্তব্য "ছাং দে" থেকে। ম্যাডাম, আপনাকে স্বাগতম আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে।

তো বন্ধুরা ছাং দে সম্পর্কে জানতে এবং ম্যাডাম আনন্দির সাথে গল্প করতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

হ্যাঁ বন্ধুরা পেইচিং এর উত্তর পূর্বদিকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে হ পেই প্রদেশে অবস্থিত এই ছাং দে শহর। এর প্রাচীন নাম ছিল "রে হো"। যার মানে হচ্ছে "উষ্ণ নদী"।এটি হ পেই প্রদেশের প্রাদেশিক শহর ,এর অবস্থান উত্তর ও উত্তরপূর্ব চীনের সংযোগ স্থলে। দক্ষিণ- পশ্চিমে এটি পেইচিং এবং দক্ষিণে থিয়েঞ্চিন শহরের সাথে সংযুক্ত। এর প্রতিবেশি শহরগুলোর মাঝে আছে ছিন হুয়াং তাও ও থাং শান সমুদ্র তীরবর্তী শহর এবং চাং চিয়া খউ শহর। এই ছাং দে শহরটি চীনের প্রথম সারির উন্মুক্ত শহরগুলোর মাঝে একটি। চীনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এই শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায় চল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই শহরে প্রায় ৩৫০০০০০ (পয়ত্রিশ লাখ) মানুষের বসবাস।এখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৬ ভাগই হচ্ছে চীনের প্রায় ৪৪ টি সংখ্যালঘু জাতি। তাই এ অঞ্চলকে বিভিন্ন সংখ্যা লঘু জাতিগুলোর বর্ণিল সংস্কৃতির এক মিলন মেলা বলা যায়।

পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধ এই ছাং দে শহরে আছে পৃথিবী বিখ্যাত অনেক কিছু। যেমন, এখানে আছে পৃথিবীর বৃহত্তম রাজকীয় বাগানবাড়ী – গ্রীষ্মকালীন পাহাড়ি অবকাশ যাপন কেন্দ্র; আছে বিশ্বের বৃহত্তম রাজকীয় মন্দির কমপ্লেক্স – অষ্ট মন্দির;এছাড়া ,এখানকার পু নিং মন্দিরে আছে পৃথিবীর বৃহত্তম কাঠের বুদ্ধ; আছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম নদী- রো হো; আছে চীনের মহাপ্রাচিরের ভগ্নাবশেষ- চীন শান লিন মহাপ্রাচির ইত্যাদি।

এখানে দর্শনীয় স্থান গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে "ছাং দে পাহাড়ি অবকাশ যাপন কেন্দ্র"। এটি ছিল ছিং রাজাদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন কেন্দ্র। চীনের রাজপ্রাসাদ "নিষিদ্ধ নগরী"তে গাছপালা কম থাকায় গরমকালে সেখানে বসবাস করা ছিং রাজার জন্য কষ্টকর হতো। তাই এই গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাজা এই "ছাং দে পাহাড়ি অবকাশ যাপন কেন্দ্রে বসবাস করতেন এবং এখানে থেকে অনেক রাজকার্য পরিচালনা করতেন।

এই "পাহাড়ি গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপন কেন্দ্র" এবং তার পার্শ্ববর্তী মন্দিরগুলো চীনের প্রধান দশটি দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে একটি।১৯৯৪ সালে এই এলাকা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

হ্যাঁ বন্ধুরা , এই অবকাশ যাপন কেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু হয় ১৭০৩ সালে এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৭৯২ সালে। অর্থাৎ পুরো এলাকাটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় ৯০ বছর। ২১৮ বর্গ মাইল এলাকাজুড়ে অবস্থিত পুরো বাগানবাড়ি কমপ্লেক্সটি প্রাসাদ এলাকা, লেক এলাকা, সমতল এলাকা ও পাহাড়ি এলাকা এ চারটি অংশে বিভক্ত।

এই প্রাসাদ এলাকাটি প্রায় ২৫ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে আছে অনেকগুলো ভবন। প্রধান ভবনটিতে ছিং রাজপরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। এখানে উদযাপিত হতো নানা ধরণের উৎসব। রাজা তার রাজকার্য ও এখান থেকে পরিচালনা করতেন। এছাড়া আছে সম্রাটের পাঠ কক্ষ যেখানে সম্রাট পড়াশোনার পাশাপাশি রাজকার্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। প্রধান ভবনটি বর্তমানে জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়েছে।আর প্রাসাদ কমপ্লেক্সের উত্তর দিকে আছে ছোট বড় মিলিয়ে মোট আটটি হ্রদ।  

বন্ধুরা, লেক এলাকা থেকে আরও উত্তরে গেলে আমরা পৌঁছে যাবো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত "সমতল এলাকা"য়।এই বিশাল সমতল এলাকাটি সবুজ ঘাসে আবৃত। এছাড়া এখানে আছে প্রচুর গাছপালা। এখানে চাইলে আপনারা ঘোড়ায় চড়ে পুরো এলাকাটি ঘুরে দেখতে পারেন। এই সমতল এলাকার উত্তর দিকে আছে কিছু মন্দির।

তবে পুরো অবকাশযাপন কেন্দ্রের ৮০ ভাগই হচ্ছে পাহাড়ি এলাকা।এখানকার সবুজ পাহাড় আর স্বচ্ছ লেকের পানি, এই মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনার মনকে করবে প্রশান্ত।

"পাহাড়ি অবকাশ যাপন কেন্দ্র"র উত্তর পূর্বে আছে "ওয়াই পা মিয়াও" বা অষ্ট মন্দির। এখানে মূলত১২ টি মন্দির ছিল। যার মাঝে ৬টি এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এখানকার মন্দির গুলোর নির্মাণ শৈলীতে হান নির্মাণ শৈলীর পাশাপাশি তিব্বতীয় ও মঙ্গোলীয় বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়। কারণ, তত্কালীন ছিং সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মজবুত করার উদ্দেশ্যে এখানে বিভিন্ন জাতির নির্মাণ শৈলী ব্যবহার করেন। "পাহাড়ী অবকাশযাপন কেন্দ্র"র পাশাপাশি এই মন্দিরগুলোও ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এবারে এ শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ছাং দে শহরে আছে দূর পাল্লার বাস স্টেশন, যেখানে পেইচিং ও হ পেই প্রদেশের শি চিয়া চুয়াং শহর থেকে দ্রুতগামী সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে।ট্যুরিস্ট সিজনগুলোতে পেইচিং ও থিয়েঞ্চিন থেকে ছাং দে পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা হয়। এছাড়া, সারা বছর জুড়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক দূর পাল্লার বাস সার্ভিস তো আছেই।

আর প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাতটি ট্রেন ছাং দে থেকে পেইচিং যাওয়া আসা করে।ট্রেনভেদে যাতায়াতে সময় লাগে চার থেকে নয় ঘণ্টা। বন্ধুরা, ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে ছাং দে বিমান বন্দর নির্মাণের কাজ যা ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর ছাং দে শহরের অভ্যন্তরে ট্যাক্সি তে যাতায়াত ভাড়া শুরু হয় ৭ ইউয়ান থেকে।

যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে তো বিস্তারিত জানা হোল, তাহলে আর দেরি কেন বন্ধুরা, চলুন বেড়িয়ে পড়ি ছাং দে তে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে!

তো এবারে জানিয়ে দিচ্ছি ছাং দে শহরে বেড়াতে গেলে আপনারা স্যুভনির হিসেবে কি কি জিনিস কিনতে পারেন সে সম্পর্কে। এখানে আছে গ্রীষ্মকালীন পাহাড়ি অবকাশ যাপন কেন্দ্রের বিখ্যাত রেশম কাপড়ের তৈরি কারুকাজ করা বিভিন্ন উপহার সামগ্রী, কাঠের উপর খোদাই করা বিভিন্ন স্যুভনির ,চীনের ঐতিহ্যবাহী নকশা করে কাটা কাগজ এবং কাপড়ের উপর আঁকা নানা ধরণের চিত্রকর্ম।এছাড়া এখানে আসলে চেখে দেখতে পারেন পাহাড়ি বুনো সবজি ও কাঠ বাদাম দিয়ে তৈরি বাদাম দুধ, যা খুবই স্বাস্থ্যকর পানীয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040