Web bengali.cri.cn   
রঙিন ইউন্নান প্রদেশ
  2014-06-11 20:18:15  cri


প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা , আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন চলুন বেড়িয়ে আসি অনুষ্ঠান।সঙ্গে আছি আমি জান্নাতুন নাহার। বন্ধুরা গেল সপ্তাহে আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ইউন্নান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংশহরে। আর গতো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে শুনেছিলাম ইউন্নান প্রদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থান সম্পর্কে। খুনমিংশহরের পর তাই আজ আমরা বেড়াতে যাবো ইউন্নান প্রদেশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে।

বন্ধুরা,ইউন্নান প্রদেশের নাম বললে রাজধানী খুনমিংএর পর প্রথম যে নামটি আমাদের মনে আসে তা হচ্ছে ¡¡ã সি শুয়াং পান না। এই সি শুয়াং পান না, তাই  সংখ্যা লঘু জাতি অধ্যুষিত বিশেষায়িত এলাকার অবস্থান ইউন্নান প্রদেশের দক্ষিণে। তাই জাতিগোষ্ঠীর জনগণের কাছে সি শুয়াং পান না, একসময় মং পা লা না সি  নামে পরিচিত ছিল, যার মানে হচ্ছে স্বপ্ন ও রহস্যময়ী আনন্দভুমি।এর ঘন বনভূমির উষ্ণ মণ্ডলীয় আবহাওয়া এবং এখানে বসবাসরত প্রায় ৪৪ টি সংখ্যা লঘু জাতির বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য এই অঞ্চল সারা পৃথিবীর পর্যটকদের খুবই প্রিয় একটি গন্তব্য। এটি চীনের ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত শহরগুলোর মাঝে অন্যতম। সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় এখানে সারা বছর এই জাতি গোষ্ঠী গুলোর নানা ধরণের বর্ণিল ও ঐতিহ্যবাহী উত্সব উদযাপিত হয়ে থাকে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে এপ্রিল মাসে উদযাপিত  জলকেলি উব। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত।  তাই জাতির নতুন বছর উদযাপনের এই উৎসবে সব বয়সি মানুষ মেতে উঠে দারুণ আনন্দময় জলকেলিতে।এ সময় তারা নদীতে নেমে একে অন্যের গায়ে পানি ছিটিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাই বন্ধুরা সুযোগ হলে এই সময়টিতে ঘুরে আসতে পারেন সি শুয়াং পান না  থেকে আর অংশ নিতে পারেন এই দারুণ আনন্দময় পানি ছোঁড়া উৎসবে।এছাড়া হানি, চিনো এবং ইয়াও সংখ্যালঘু জাতির নানা ঐতিহ্যবাহী উৎসবও খুব আকর্ষণীয়।

এই অঞ্চলের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা পাহাড়- পর্বত ঘেরা। আর এখানে আছে লান ছাং নদী। এই লান ছাং নদী লাওস , থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় বিখ্যাত মেকং নাম ধারন করে।

এই সি শূয়াং পান না বিশেষায়িত অঞ্চলটি শীতকাল বিহীন আনন্দভুমি হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রধানত দুটি ঋতু। মে থেকে অক্টোবর হচ্ছে বর্ষাকাল , আর নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। এখানে বাত্সরিক গড় তাপমাত্রা ১৮-২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাই এই অঞ্চল সারা বছরই ভ্রমণের উপযুক্ত। এই অঞ্চলটি চীনের একমাত্র প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষিত উষ্ণ মণ্ডলীয় বনভূমি অঞ্চল। আর চীনের মুল ভূখণ্ড থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় এই অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখনো সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত আছে।তাই এখানকার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আপনার মনকে করবে পরিশুদ্ধ।

বন্ধুরা, এবারে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এ অঞ্চলের কিছু প্রধান দর্শনীয় স্থানের সাথে।

প্রথমেই আমরা যেতে পারি একটি গাছ নিয়ে গঠিত বনভূমি দেখতে। খুব অবাক হচ্ছেন , তাই না! একটি গাছ নিয়ে আবার বনভূমি হয় নাকি! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও আপনি সি শুয়াং পান না'র তা লুও শহরে এই অভাবনীয় ব্যপারটি দেখতে পাবেন। হ্যাঁ বন্ধুরা , এখানে আছে নয়শ বছরের পুরনো একটি বটগাছ যা ১২০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত। দু'শ তিরিশ ফিট উঁচু এই গাছটিতে আছে তিরিশটি পৃথক শেকড় সহ কাণ্ড। এই গাছটি একাই যেন তৈরি করেছে একটি বনভুমি!খুব অবাক করা ব্যাপার, তাই না!সি শুয়াং পান না বেড়াতে আসলে এই অভাবনীয় বনভুমি দেখা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না যেন।

এরপর আমরা যেতে পারি বন্য হাতির ভ্যালি দেখতে। শুধুমাত্র মং ইয়াং সংরক্ষিত বনভূমি অঞ্চলের বন্য হাতির ভ্যালিতে চীনের বন্য হাতি দেখা যায়।এখানে পর্যটকদের জন্য নদীর পাড়ে গাছের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ছোট ছোট কেবিন। এখান থেকে আপনারা নিশ্চিন্ত মনে উপভোগ করতে পারবেন বন্য হাতির জীবনযাত্রা। দেখতে পাবেন ছোট ছোট হাতি শিশুদের নদীর পানিতে খেলা করার অসাধারণ দৃশ্য।

বন্ধুরা, এরপর আপনারা যেতে পারেন মান ফেই লোং বৌদ্ধ মন্দির। এখানে আছে নয়টি বিভিন্ন আকারের মন্দির ভবন । এই মন্দির ভবনগুলো আবার সম্পূর্ণ সাদা রঙের, তাই এদের সাদা বুদ্ধমন্দির ও বলা হয়। প্রতি বছর জলকেলি উত্সবের সময় মান ফেই লোং গ্রামের অধিবাসীরা এই বুদ্ধ মন্দিরের সামনে একত্রিত হয়ে নববর্ষের উত্সব উদযাপন করে।

এছাড়া ও আপনারা ঘুরে আসতে পারেন মান তিয়েন ঝর্ণা,সি শুয়াং পান না জাতীয় সংস্কৃতি উদ্যান এবং ই উ প্রাচীন শহর থেকে।

বন্ধুরা এবারে রয়েছে আপনাদের জন্য কিছু ভ্রমণ টিপসঃ

১। খুন্মিং,লিচিয়াং ,তালিসহ চীনের প্রধান প্রধান শহর গুলো থেকে এখানে সরাসরি বিমান চলাচল রুট আছে। তাই আপনি খুব সহজেই এখানে ভ্রমণে আসতে পারবেন।

২। আর বিমান বন্দর এলাকার বাসস্টেশন থেকে আছে সি শুয়াং পান না'র বিভিন্ন জেলা ও শহরে যাওয়ার বাস। তাই আপনি এই বাস গুলোতে চড়ে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে।

৩। চিং হোং শহরে আছে তিনটি পাবলিক বাস রুট , যাতে করে আপনি শহরের সব দর্শনীয় স্থান গুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে যদি নিজের মতো করে শহরটি ঘুরে দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান ,তবে ভাড়া করতে পারেন একটি বাইসাইকেল আর মনের সুখে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারেন পুরো শহরটি।

তো, বন্ধুরা, সি শুয়াং পান না'র পর এবারে আমি আপনাদের বেড়াতে নিয়ে যাবো ইউন্নান প্রদেশের আরেকটি জনপ্রিয় গন্তব্য তালি শহরে।

তালিঃ

ইউন্নান প্রদেশের উত্তর পশ্চিমে ,ইউন্নান প্রদেশের রাজধানী খুনমিং এর ৩০০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত তালি শহর, এটি হচ্ছে তালি পাই স্বায়ত্তশাসিত এলাকার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র । এটি পূর্বে, পশ্চিমে ও দক্ষিণে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এবং এর মাঝে রয়েছে আরহাই হ্রদ। এই অনন্য সুন্দর প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এলাকায় বাস করে চীনের ২৫ টি সংখ্যালঘু জাতি গোষ্ঠীর মানুষ। তাদের বর্ণিল সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আপনাকে নিয়ে যাবে ভিন্ন এক জগতে।

ছাং শান পাহাড় এবং আরহাই হ্রদ এই তালি শহরের প্রধান পর্যটন এলাকা।জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন, প্রজাপতি ঝর্ণা, তিন প্যাগোডার ছোং সং মন্দির এই দুটো এলাকার মাঝেই অবস্থিত।এখানে চীনের সংখ্যালঘু জাতি গুলো যুগ যুগ ধরে বসবাস করছে। তবে এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ হচ্ছে পাই সংখ্যালঘু জাতি। এই জাতিগোষ্ঠী গুলোর নানারকম প্রথা ও ঐতিহ্য বেশ বৈচিত্র্যময়। বসন্ত কালে তাদের নানা রকম ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপন শহরকে করে তোলে প্রাণবন্ত। এই উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করলে আপনি তাদের আদি ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

প্রায় ৪০০০ বছর আগে পাই জাতি এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে এই অঞ্চলটি হান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনামলে আসে। এই অঞ্চল একসময় প্রাচীন চীনের সাথে ভারত হয়ে অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। এখনও 'থাই হ ' শহর ও 'প্রাচীন তালি শহর' হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। সি চৌ শহর ও চৌ ছং গ্রাম এলাকায় পাই সংখ্যা লঘু জাতির দৈনন্দিন জীবনের নানা রকম ঐতিহাসিক প্রথা দেখার ও উপলব্ধি করার জন্য আদর্শ।

লি চিয়াংঃ

বন্ধুরা আপনারা প্রাচীন তালি শহর থেকে ট্রেনে করে চলে আসতে পারেন এই লি চিয়াং প্রাচীন শহরে। ভাড়া মাত্র ৩৩ ইউয়ান। আর যদি খুনমিং থেকে লি চিয়াং বেড়াতে আসতে চান তবে সে ব্যবস্থাও আছে।এক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে মাত্র ৯০ থেকে ২২৭ ইউয়ান পর্যন্ত। এছাড়া , লি চিয়াং শহরে একটি বিমান বন্দর ও আছে।আপনি পেইচিং, সাংহাই , গুয়াংচৌ, শেঞ্চেন সহ চীনের অনেক শহর থেকে বিমানে সরাসরি পৌঁছে পারেন লিচিয়াং শহরে। আর খুনমিং থেকে বিমানযোগে পৌছাতে চাইলে সময় লাগবে ৫০ মিনিট। আর ভাড়া ৯৫০ ইউয়ান।

ইউন্নান প্রদেশের লিচিয়াং শহর পর্যটক দের অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য। চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এই শহর তার দীর্ঘ ইতিহাস, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এটি হচ্ছে চীনের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত শহরগুলোর মাঝে অন্যতম একটি প্রাচীন শহর যা এখনও তার আদি বৈশিষ্ট্য সহ ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে। এখানে চীনের বেশকিছু সংখ্যা লঘু জাতির বসবাস হলেও মূলত না সি জাতির জনগণ সংখায় বেশি। এখানকার দোংপা সংস্কৃতি খুবই আকর্ষণীয়। আর এই সংস্কৃতিতে তিব্বতীয় সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষণীয়। এই স্থানীয় দোংপা হায়ারোগ্লিফিক বা দোংপা লিপি সমৃদ্ধ নানা ধরণের স্যুভনির স্থানীয় এবং বিদেশী পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।

আমাদের বন্ধুদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, কি কি আছে এই লি চিয়াং এ? এখানে বেড়াতে আসলে কি কি দেখতে পাবো?

হ্যাঁ বন্ধুরা, এখানে বেড়াতে আসলে আপনারা প্রথমেই যেতে পারেন, পুরনো লিচিয়াং শহরে।এই পুরনো লিচিয়াং শহর একসময় শহরের প্রাণকেন্দ্র ছিল এবং এখানে আসলে এখনও সেই প্রাচীন সময়ের স্থানীয় জীবন ব্যবস্থার, প্রাচীন গুচ্ছভবন, এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বাদ গ্রহণ করা যায়।এই প্রাচীন শহরের রাস্তাগুলো দিয়ে যখন আপনি হেঁটে বেড়াবেন, মনে হবে যেন আপনি ফিরে গিয়েছেন শত শত বছর আগের সেই প্রাচীন সময়ে।এখানকার চারপাশের শান্তিময় পরিবেশ এক অন্যরকম মুগ্ধতায় ভরিয়ে তুলবে আপনার মন।এখানকার প্রাচীন হোটেলগুলো থেকে অথবা স্থানীয় কৃষক দের বাড়ি থেকে সূর্যাস্ত উপভোগ করা সত্যি এক অনন্য অভিজ্ঞতা।১৯৯৭ সালে এই পুরনো লিচিয়াং শহর ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষিত হয়।

লিচিয়াং পুরনো শহরে আসলে যে জায়গাটি পরিদর্শন না করলেই নয় তা হচ্ছে  মু ফু। বলা হয়ে থাকে মু ফু পরিদর্শন না করলে লি চিয়াং ভ্রমণ ই বৃথা। এই  মুফু  প্রাসাদ এলাকাকে চীনের রাজপ্রাসাদের সাথে তুলনা করা হয়। বলা হয় উত্তরে যেমন আছে নিষিদ্ধ নগর দক্ষিণে তেমনি আছে মু ফু।

বন্ধুরা আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, প্রাচীন চীনের শহর গুলো প্রাচীর দেয়াল থাকতো। চীনের প্রাচীন শহরগুলোর মাঝে দুটি শহরের এই প্রাচীর নেই। তার মাঝে একটি হচ্ছে এই লিচিয়াং পুরোনো শহর। আর এই পুরনো শহর থেকে বের হলেই আপনারা দেখতে পাবেন নতুন শহর। শহরের আশেপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চমত্কার কিছু দর্শনীয় স্থান আছে যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।যেমন, আপনারা যদি একটু অন্যরকম অভাবনীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে চান তবে যেতে পারেন ইয়ু লোং পাহাড়ে । এই পাহাড়টি পুরনো লিচিয়াং শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এর ইংরেজি নাম হচ্ছে, জেড ড্রাগন স্নো মাউন্টেন। বরফে আচ্ছাদিত এবং কুয়াশার চাদর পরা এই পাহাড়টি দেখে যেন মনে হয় জেড পাথরের তৈরি একটি ড্রাগন মেঘের কোলে ঘুমিয়ে আছে। তাই এর নাম জেড ড্রাগন স্নো মাউন্টেন। এখানে অনেক রোমাঞ্চ প্রিয় পর্যটকরা ,স্কি করতে, পাহাড় বাইতে আবার অনেকে স্রেফ এখানকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে বেড়াতে আসেন।

আপনারা যারা একটু অন্য ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান তারা চলে যেতে পারেন লিচিয়াং এর ৫০ কিলোমিটার উত্তরে নয়নাভিরাম লু কু হ্রদ এলাকায়। এখানকার ঝকঝকে নীল আকাশ, লেকের সবুজ পানি ছবির মতো সুন্দর। এখানে নেই কোন কোলাহল , নেই কোন দূষণ। এখানকার শুদ্ধ বাতাসে আপনি প্রানভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। আর এমনই এক চমত্কার পরিবেশে বাস করে মো সুও জাতি গোষ্ঠীর জনগণ। এই মো সুও জাতির বসবাসের এই অঞ্চল কে বলা হয় পৃথিবীর সর্বশেষ নারী সাম্রাজ্য। আমাদের বন্ধুরা হয়তো অবাক হয়ে ভাবছেন ,একটা জাতির বসবাসের এলাকাকে নারী সাম্রাজ্য বলা হয় কেন? এখানে কি শুধু নারীরা বাস করে! না বন্ধুরা , এখানে নারী পুরুষ সবাই বসবাস করতে পারে। তবে এখানে পরিবারের সকল ক্ষমতা থাকে নারীদের হাতে।এখানকার সমাজ ব্যবস্থা আমাদের দেশের মাতৃ প্রধান গাড়ো আদিবাসি থেকে ভিন্ন। খুব অবাক করা ব্যপার হচ্ছে এখানে নিজের ছোট এবং বড় বোনদের ছেলেমেয়েদের পরিবারের নারী সদস্যরা নিজের সন্তানের মতোই দেখেন। এবং ছেলেমেয়েরাও সবাইকে মা বলেই সম্বোধন করে।পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক নারী সদস্যের নেতৃত্বে পরিবারের সবাই একসাথে বসবাস করে। কখনোই আলাদা হয় না। আর পরিবারের সকল অর্থ সম্পদ একসাথে সংরক্ষন করা হয়। পরিবারের সদস্যরা যে যা উপার্জন করে তা একজায়গায় রাখা হয়। আবার কারো অর্থের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে নিয়ে খরচ করতে পারে। কারো মাঝে যেন কোন লোভ,লালসা, হিংসে, বিদ্বেষ নেই। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের মতোই যেন এই মানুষ গুলোর মন নির্মল , বিশুদ্ধ। তাই বন্ধুরা সুযোগ হলে ঘুরে আসতে পারেন এই লু কু হ্রদ এলাকা থেকে, অনুধাবন করতে পারেন মো সুও জাতির সহজ সরল জীবন ব্যবস্থা।

বন্ধুরা এবারে আপনাদের জন্য আছে লিচিয়াং এ বেড়াতে যাওয়ার কিছু টিপস।

১। লিচিয়াং এ রাত এবং সকালের সাথে দুপুরের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক। তাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।

২। এখানে বেড়াতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে এপ্রিল, মে এবং সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস।

৩।জুলাই এবং আগস্ট মাস বর্ষাকাল হওয়ায় এসময় ভ্রমণ করাটা খুব একটা সুবিধাজনক নয়।

৪। এ এলাকার খাবার পানি সংগ্রহ করা হয় সাধারণত ঝর্ণার পানি থেকে, তাই এই পানি খুবই ঠাণ্ডা। সল্প সময়ের জন্য বেড়াতে এসে এই পানি পান করলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই এখানে বেড়াতে আসলে বোতলজাত পানি খাওয়াটাই ভালো।

৫। লিচিয়াং এর প্রাচীন শহর এলাকায় আছে স্থানীয় নাসি জাতির নানা ধরণের হস্তজাত ও কুটিরজাত সামগ্রীর সমারোহ। যা হতে পারে আপনার প্রিয়জনদের জন্য চমৎকার উপহার।

৬।আর সন্ধেবেলায় প্রাচীন শহর এলাকায় আয়োজিত নাসি জাতির গানের উৎসব উপভোগ করতে ভুলবেন না যেন।

  

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040