১. রাজস্ব আয় বাড়াতে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করলো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি
বাংলাদেশের আসন্ন বাজেটে করের আওতা বাড়াতে এবং টিআইএনধারীদের কাছ থেকে কর আদায় নিশ্চিত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে দেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোকের টিআইএন আছে। অথচ এদের মধ্যে মাত্র ১০ লাখ সরকারকে কর দেন। অনেক মানুষ এখনো করজালের বাইরে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের করের আওতায় আনার পাশাপাশি নতুন করদাতা সনাক্ত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে কমিটি। অর্থমন্ত্রী কমিটির প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
২. বাংলাদেশের কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে: এডিবি
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমলেও, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে তৈরি 'কোয়াটারলি ইকনোমিক আপডেট' প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে; তবে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলেও আভাস দিয়েছে এডিবি।
সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদেনে আরো বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে মোট তিন কোটি ৫৯ লাখ টন খাদ্য (তিন কোটি ৪৬ লাখ টন চাল এবং ১৩ লাখ টন গম) উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেমের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. জুলাইয়ে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে
আগামী জুলাই মাসে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে এ তথ্য প্রকাশ করেন। চলতি বছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হবে বলেও তিনি সংসদকে জানান। মন্ত্রী আরো জানান, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে ১৩০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং বর্তমানে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৩.৪ শতাংশ।
দেশের আমদানি-রপ্তানির চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত নয় মাসে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে ১৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে। আগামী ৪ বছরে দেশে নতুন প্রযুক্তি চালু করার ফলে ৯ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও তিনি দাবি করেন।
৪. পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ কর্ম-পরিকল্পনা ঘোষণা
গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যৌথ কর্ম-পরিকল্পনা সম্পর্কিত একটি সমঝোতা-চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। এ চুক্তির আওতায় দু'দেশ আগামী ৫ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করবে। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খুররম দস্তগির খান ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অ্যাম্বাসেডর মিখায়েল ফ্রোম্যানের নেতৃত্বে দু'পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত 'পাক-মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো চুক্তি (টিফা) ফোরাম'-এর বৈঠক শেষে এ চুক্তির কথা জানানো হয়। বৈঠকে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ানের ওপর একটি সমঝোতা-স্মারকেও দু'পক্ষ স্বাক্ষর করে।
যৌথ কর্ম-পরিকল্পনার আওতায় দু'দেশ যেসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে সেগুলো হচ্ছে: কৃষিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণ; মেধাস্বত্ব সংরক্ষণকে প্রমোট করা; বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার 'বাণিজ্য সুবিধা চুক্তি' বাস্তবায়ন করা; বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার 'গভর্নমেন্ট প্রকিওরমেন্ট এগ্রিমেন্টে' পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্তকরণ; দু'দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সংলাপ বৃদ্ধি ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের অক্টোবরে বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফ নিজ নিজ দেশের কর্মকর্তাদের একটি যৌথা কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
৫. বাজারে আসছে ভারতের খড়গপুরের আইআইটি-র সবুজ চা
অবশেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরের আইআইটি-র সবুজ চা বাজারে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির এই চা উত্পাদিত হচ্ছে সমতলে। সমতলের এই চা-ই নিজস্ব ব্রান্ডে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা, পাহাড়ের চায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজার মাতাবে সমতলের এই চা-ও।
যাঁর উদ্যোগে আইআইটিতে এই প্রকল্প বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে, আইআইটি-র সেই কৃষি খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক বিজয় ঘোষ আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেছেন, "পাহাড়ের চায়ের সঙ্গে সমতলের চায়ের গুণগত মানের তেমন কোনও ফারাক নেই। বাজারে গেলেই মানুষ তা বুঝতে পারবেন।"
আইআইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরাসরি নিজেরা কোনও ব্যবসা করতে পারে না। তাই এখানে তৈরি করা হয়েছে 'সায়েন্স এণ্ড টেকনোলজি আন্ট্রাপ্রেনিওরস পার্ক' বা 'স্টেপ', যার সদস্য আইআইটি-র ইচ্ছুক গবেষক, শিক্ষক, পড়ুয়ারা। প্রতিষ্ঠানের কৃষি, খাদ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকে পাস করা ছাত্র সৌমেন পালিত এই চা বাজারজাত করার ছাড়পত্র পেয়েছেন। তিনি জানালেন, প্রথমে সাধারণ সবুজ চা বা গ্রিন টি বাজারে ছাড়া হবে এবং পরে বিভিন্ন সুগন্ধযুক্ত গ্রিন টি বাজারে আনা হবে। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, আদা, জুঁই, তুলসি ও গোলাগ--এই চারটি সুবাসের 'গ্রিন টি' তৈরি করা হবে।
উল্লেখ্য, আইআইটি-র কৃষি, খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক বিজয় ঘোষ ১৯৯৭ সাল থেকে সমতলে চা চাষের পরীক্ষা শুরু করেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো রুক্ষ জায়গাতেও চা চাষ সম্ভব। প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি ছড়িয়ে দেওয়া, রোদ থেকে বাঁচতে চা গাছের মাঝে বড়-বড় গাছ লাগিয়ে দেওয়া, এবং বর্ষাকালে যাতে পানি দাঁড়িয়ে না-থাকে তার ব্যবস্থা করলেই হয়। আইআইটি-র মতে, জৈব পদ্ধতিতে করা এই চাষে ফলন কম হয় না, স্বাদেরও বিশেষ হেরফের ঘটে না। তাদের দাবি, এই চায়ের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি একশ শতাংশ জৈব; উত্পাদনের কোনো পর্যায়েই কেমিক্যালের ব্যবহার করা হয় না।
আগামী দু'তিন মাসের মধ্যেই এই চা বাজারে আসবে। বর্তমানে আইআইটিতে ১৫ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ধীরে-ধীরে চাষ বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে। বিশেষত, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে সহজেই চা চাষ সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। বিজয় ঘোষ জানালেন, তিনি চান অযোধ্যা পাহাড় থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত পতিত জমিতেই চা চাষ হোক। শুধুমাত্র গবেষণার উপরে আস্থা রেখে সহজে কেউ রাজি হচ্ছেন না। বাজারে চাহিদা থাকলে তবে সকলে উৎসাহিত হবেন। যে কারণে বিপণনে উদ্যোগী হয়েছেন তারা। সাড়াও পাচ্ছেন অনেক। সম্ভাব্য চাহিদা মেটাতে চাষ বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। (আলিম)
| ||||