জা সি পিং ছুও
বিদ্যা অর্জনের পর জা সি পিং ছুও ২০১২ সালে জন্মস্থান লাসায় ফিরে আসেন এবং শহরের পুরাতন অঞ্চলে 'পুরাতন গলি' নামে একটি বার খোলেন। লাসার পুরাতন সড়কে হ্যাভি মেটাল বা ব্রিটিশ রক শুনতে পাওয়া যায়, যেটি খুব মজার একটি ব্যাপার।
বারের মাঝখানে অবস্থিত একটি মঞ্চে একজন লম্বা চুলের তরুণ গিটার বাজিয়ে একটি চীনা রক গান গাইছেন। হ্যাঁ তিনিই জা সি পিং ছুও।
লাসায় জন্মগ্রহণকারী জা সি পিং ছুও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে লেখাপড়ার জন্য লাসা থেকে বিদায় নেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আবার লাসায় ফিরে আসেন এবং একজন সরকারি কর্মকর্তা হন। তবে কয়েক মাস পর তিনি আবিষ্কার করেন যে, সংগীত তার প্রিয় বিষয় এবং এ ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তিনি আবার লাসা ছেড়ে পেইচিংয়ে যান। অবশেষে তিনি নিজের জন্মস্থানে ফিরে আসেন এবং এই বার খোলেন। জা সি পিং ছুও বলেন:
"আমি রক সংগীত পছন্দ করি এবং পছন্দ করি তিব্বত জাতীর ঐতিহ্যবাহী সংগীতও। আমি জানতে চাই, রক সংগীত ও তিব্বতি সংগীতের সংমিশ্রণ করলে কী রকমের সংগীত সৃষ্টি হতে পারে।"
জা সি পিং ছুও চীনের অনেক জায়গায় ছিলেন এবং তিনি মনে করেন, বেশি মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কারণে বেশি সংস্কৃতি জানতে পেরেছেন বলে তিনি নানা সংগীত রীতিও বুঝতে পারেন। চীনের অন্য শহরে লেখাপড়া ও সংগীত শেখার দশ বছরে সেখানকার মানুষ জা সি পিং ছুও ও তার সংগীতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন:
"তিব্বত আমার জন্মস্থান এবং প্রথমে তিব্বতের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান সঞ্চয় করতে পেরেছি। চীনের অন্য বড় শহরের চেয়ে লাসার গতি ধীর এবং জীবনযাপনের সেটি জন্য উপযুক্ত।"
গত ১০ বছরে তিব্বতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জা সি পিং ছুও মনে করেন, কিছু বিষয়ে তার জন্মস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন:
"বস্তুগত অবস্থা ও জীবনযাপনের রীতিসহ নানা বিষয়ে লাসা উন্নত হয়েছে। পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তিব্বতি মানুষ, বিশেষ করে তরুণতরুণীরা, নতুন রীতিতে জীবনযাপন করছে। তবে অনেক বিষয়ে যেমন ধর্মবিশ্বাসে তাদের কোনও পরিবর্তন হয়নি।"
তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম সেখানকার মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোটবেলা থেকে তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম জা সি পিং ছুওর মূল্যবোধের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন:
"ধর্ম আমার পথনির্দেশক, সংগীতও। তাদের নির্দেশনায় আমি নিজের পথ খুঁজে পাই।"
জা সি পিং ছুওর জন্য সংগীত কেবল একটি স্বপ্ন নয়; বরং সেটা তার জীবনও। তিনি বলেন:
"অনেক বন্ধু বলে যে, আমার স্বপ্ন আছে। তবে আমার জন্য সংগীত স্বপ্ন নয়। এটা আমার জীবনের একটি অংশ এবং আমার জীবনের রীতি।"
জা সি পিং ছুও বলেন, তিনি রক সংগীত বিষয়ে লেখাপড়ার জন্য বিদেশ, বিশেষ করে ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। কারণ সেখানে রক সংগীতের জন্ম। জা সি পিং ছুও আশা করেন, ওখানে লেখাপড়ার পর আরও বেশি সংগীত সৃষ্টি করতে পারবেন তিনি।
আমার মনে হয়, সি থা তো জি এবং জা সি পিং ছুও – এ দু তিব্বতি তরুণ ভিন্ন পরিবেশে বড় হলেও শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের অনুভূতি একই। তাদের গল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি আধুনিক তিব্বতি জাতির তরুণদের প্রকৃত রূপ ও মনোবল। আশা করি, এ দুই তরুণ সংস্কৃতিক পথ ধরে দৃঢ়ভাবে চলবেন এবং নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন।