Web bengali.cri.cn   
দুজন তিব্বতি জাতির তরুণ
  2014-02-05 19:50:29  cri

সি থা তো জি


তিব্বতি সংস্কৃতির কথা যখন আসে, তখন বীর রাজা গেসারের মহাকাব্যর কথা বলাতেই হয়। রাজা গেসার তিব্বতি জাতির একজন বীর। কিংবদন্তি অনুযায়ী খ্রিস্টীয় ১১ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন গেসার। তিনি ভূত তাড়িয়ে তিব্বতি জাতির জনগণের জন্য সুখী জীবন আনেন। রাজা গেসারের মহাকাব্যে গেসারের গল্প বর্ণনা করা হয়েছে।

রাজা গেসারের মহাকাব্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ছি রেন পিং ছুও বলেন:

"রাজা গেসারের মহাকাব্য বিশ্বের একটি বৃহত্তম মহাকাব্য এবং তিব্বতি জাতির একটি বিশ্বকোষ। এ মহাকাব্যে রয়েছে প্রাচীনকালে তিব্বতি জাতির আচার-ব্যবহার ও রীতি-নীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। তাছাড়া রাজা গেসারের মহাকাব্য একটি জীবন্ত মহাকাব্য এবং এখনও এর পরিবর্তন ও উন্নয়ন হচ্ছে। অনেক আবৃত্তিকার এখনও রাজা গেসারের মহাকাব্য আবৃত্তি করছেন।"

তেইশ বছর বয়সী সি থা তো জি তিব্বতের ছাংতু অঞ্চলের বিয়ান পা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি সবচেয়ে তরুণ রাজা গেসারের মহাকাব্যের আবৃত্তিকার। নয় বছর বয়স থেকে আবৃত্তি ও অভিনয়ে তার সহজাত প্রতিভা দেখা যায়। সি থা তো জি বলেন, এ পর্যন্ত রাজা গেসারের মহাকাব্যের প্রায় ১২০টি অংশের খোঁজ পাওয়া গেছে এবং এগুলোতে শব্দসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। হোমারের মহাকাব্য ওডিসি ও ইলিয়াড এবং ব্যাসদেবের মহাকাব্য মহাভারতের মোট শব্দের চেয়েও রাজা গেসার মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা বেশি। সি থা তো জি বলেন:

"এখন আমি রাজা গেসারের মহাকাব্যের ৮০টি অংশ আবৃত্তি করতে বা গাইতে পারি। বয়স বেশি হলে এবং আরও বেশি শিখলে আমি আরও বেশি আবৃত্তি করতে বা গাইতে পারব।"

রাজা গেসারের মহাকাব্যে অনেক চরিত্র রয়েছে এবং তাদের ব্যক্তিত্ব ভিন্ন। সি থা তো জি বলেন:

"যেমন মহাকাব্যে রাজা গেসারের সেনাপতি ও শত্রুদের মধ্যে যুদ্ধের অংশটি ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কণ্ঠে আবৃত্তি করা উচিত্। কারণে তাদের চরিত্র ভিন্ন।"

বর্তমানে সি থা তো জি তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিব্বতি সংস্কৃতি বিষয়ে পড়ছেন। রাজা গেসারের মহাকাব্যের যেটুকু তিনি আবৃত্তি করছেন, সেটুকু তিব্বতি ভাষা ও হান ভাষায় লিখতে পারেন তিনি। তার লেখা রাজা গেসারের মহাকাব্য-সম্পর্কিত গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সি থা তো জি বলেন:

"বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অনেক শিখেছি ও জেনেছি এবং ওই জ্ঞানের সাহায্যে আমি রাজা গেসারের মহাকাব্য আরও বুঝতে পেরেছি। আমি তিব্বতি ভাষা থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ সম্পর্কে একটি কোর্স করেছি এবং অনুবাদে যে শিল্পরীতি আমি শিখেছি, তা নিয়ে আমি ভালভাবে রাজা গেসারের মহাকাব্য তিব্বতি ভাষা থেকে হান ভাষা অনুবাদ করতে পারি। এর ফলে আরও বেশি মানুষ রাজা গেসারের মহাকাব্যকে জানতে পারবে।"

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং রাজা গেসারের মহাকাব্যের সবচেয়ে তরুণ আবৃত্তিকার হিসেবে সি থা তো জি গত চার বছরে পরিবারের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করতে পারেনি। কারণ প্রতি নববর্ষ সময়ে রাজা গেসারের মহাকাব্য-সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয় তাকে। যদিও রাজা গেসারের মহাকাব্যের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন, তবুও তার মনে হয়, আরও অনেক কিছু করতে হবে। সি থা তো জি বলেন:

"আমি শুধু মৌখিক রাজা গেসারের মহাকাব্য করতে চাই না। আমি চাই রাজা গেসারের মহাকাব্য বই আকারে প্রকাশিত হোক। ভবিষ্যতে যদি কেউ আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেন, তাহলে তিনি হান ভাষায় রাজা গেসারের মহাকাব্য অনুবাদ করতে পারবেন এবং সেটা হবে আরও ভাল। তিব্বত সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক সাহায্য করে এবং রাজা গেসারের মহাকাব্যের গবেষণা সম্পর্কে কিছু সফলতা অর্জনের মধ্য দিয়ে তাদের সে সাহায্যের প্রত্যুত্তর দিতে চাই আমি।"

হান ও তিব্বতি ভাষায় রাজা গেসারের মহাকাব্য লেখা ছাড়াও সি থা তো জি নিজের কণ্ঠে আবৃত্তি করা রাজা গেসারের মহাকাব্য রেকর্ড করেন। বেতারের মাধ্যমে তিব্বতি জাতির মানুষ বা যাদের বাড়িতে টেলিভিশন নেই তারা রাজা গেসারের মহাকাব্য শুনতে পারেন।

সি থা তো জি বলেন:

"আমি আবিষ্কার করেছি যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পশুপালকরা রেডিওর মাধ্যমে রাজা গেসারের মহাকাব্য শুনতে পছন্দ করে। তারা বই পড়তে বা লিখতে পারে না এবং তাদের অধিকাংশের বাড়িতে টিভি নেই বলে বিশ্বকে জানার জন্য রেডিও তাদের একমাত্র মাধ্যম।"

তিব্বতের রাস্তায় রেডিওতে সবসময় প্রচারিত হচ্ছে সি থা তো জির আবৃত্তি করা রাজা গেসারের মহাকাব্য। আমরা বিশ্বাস করি, সি থা তো জির মতো তরুণ অভিনেতার প্রচেষ্টায় তিব্বতি জাতির সংস্কৃতির ভাণ্ডার রাজা গেসারের মহাকাব্য প্রজন্ম পরম্পরায় বজায় থাকবে।

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক