Web bengali.cri.cn   
সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি
  2013-09-16 18:52:21  cri
বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১১০তম স্থানে। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ১১৮তম – এবারের আট ধাপ নিচে।

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের শীর্ষ ব্যক্তিখাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ সপ্তাহে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তবে সিপিডি বলছে, আফ্রিকার কিছু দেশ এই তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ অবস্থানগত দিক থেকে সামনে এগিয়েছে; প্রকৃত অগ্রগতি খুব বেশি হয় নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির অবকাঠামো, সরকারি-বেসরকারি‍ উদ্যোগ, বিদ্যুত্, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি হয়েছে।

তবে একই সঙ্গে এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আগের তুলনায় এবার দুর্নীতি বেড়েছে, বিনিয়োগ পরিবেশ খারাপ হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে অবনতি হয়েছে, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক খারাপ হয়েছে, তথ্যমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে এবং উচ্চ সুদের কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম প্রতিবছর এ প্রতিবেদন তৈরি করে। বাংলাদেশে সিপিডি তাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা করে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সার্বিকভাবে সক্ষমতা বাড়লেও পাঁচ বছর আগের তুলনায় দুর্নীতি বেড়েছে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও তা সন্তোষজনক নয়। দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈশ্বিক অর্থনীতির সক্ষমতা প্রতিযোগিতার সমীক্ষায় অংশ নেয় বাংলাদেশ। এটি এই ফোরামে বাংলাদেশের নবম বারের মতো অংশগ্রহণ। ফোরামের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ৭১ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনা করে সিপিডি। অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে তাদের অভিমত ফোরামের কাছে পেশ করে এ গবেষণা সংস্থা।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ীদের দেওয়া মতামত ও বিশ্ব পেক্ষাপটের আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং সেটি সিপিডির নিজস্ব কোনো গবেষণা প্রতিবেদন নয়। এ সূচক তৈরিতে সিপিডি কেবল বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামকে সহযোগিতা করেছে।

এবারের সক্ষমতা সূচকে বিশ্বে শীর্ষ তিনটি স্থান পেয়েছে যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ফিনল্যান্ড।

সিপিডি জানায়, বাংলাদেশ এই রেংকিংয়ে কাঙ্খিত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তাদের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ভৌত অবকাঠামোগত অবস্থান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রশাসনিক দক্ষতা, ব্যবসায়িক পরিবেশ ও শ্রমিকদের দক্ষতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ রেংকিং করে।

এবারের রেংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে ভারত। বিশ্ব রেংকিংয়ে তাদের অবস্থান ৬০তম। বাংলাদেশের প্রতিবেশি পাকিস্তানের অবস্থান ১৩৩ তম। প্রথম সারির দেশগুলো নিজেদের অবস্থান মোটামুটি আগের জায়গায় অপরিবর্তিত রেখেছে।

সিপিডি আরও জানায়, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ জানার জন্য তারা ১০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন এমন ৭১ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলে তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো হলেও ব্যাংক সুদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। ব্যবসায়ীদের মতে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে খুব খারাপ পরিবেশ তৈরি হয় যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সিপিডি আরও জানায়, ব্যাংকগুলো ভালো অবস্থায় থাকলেও নতুন বিনিয়োগে তারা তেমন অবদান রাখেনি। হলমার্কের মতো ঘটনার কারণে আর্থিক খাতে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়লেও ব্যাংকগুলো বাণিজ্যের চাহিদা সম্পূর্ণরূপে মেটাতে পারেনি। অধিকন্ত ঋণ খেলাপির অনেক বড় বড় অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।

সিপিডি জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা, সুশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো ছিল না। সব মিলিয়ে অগ্রগতি কিছুটা ভালো হলেও যতটুকু ভালো হবার কথা ছিলো তা হয়নি।(এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক