Web bengali.cri.cn   
সিনচিয়াংয়ে ঈদ উত্সবে বিদেশি আলোকচিত্রশিল্পীরা
  2013-08-23 15:53:22  cri


আট আগস্ট চীনের মুসলমানরা উদযাপন করে তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উত্সব ঈদ-উল-ফিতর। ওই দিন চীন আন্তর্জাতিক বেতার এবং সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকারের তথ্য কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে "আমার ক্যামেরায় সিনচিয়াং-২০১৩ এবং সুন্দর সিনচিয়াং" শীর্ষক আলোকচিত্র গ্রহণ কার্যক্রম আয়োজিত হয়। এ কার্যক্রমের লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি আলোকচিত্রশিল্পীদের জন্য সিনচিয়াংকে দেখা এবং স্থানীয় লোক-রীতি জানার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। আলোকচিত্রশিল্পীরা মনোহর হোবুখেসাইআর মঙ্গোলীয় স্বায়ত্তশাসিত জেলায় স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে উত্সব উদযাপন করেন। এবারের কার্যক্রমে বেশ কয়েকটি দেশের আলোকচিত্রশিল্পীরা সিনচিয়াংয়ের পরিস্থিতি আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করার পাশাপাশি সেখানকার বিভিন্ন জাতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান দেখেন। এখন শুনুন এ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন।

প্রিয় শ্রোতা, এখন আপনারা শুনছেন হোবুখেসাইআর জেলার মসজিদের ইমাম আবুলাতি হ্যারি হাজির বয়ান। হোবুখেসাইআর জেলার প্রায় ৩ শতাধিক মুসলমান মিলিত হয়ে তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উত্সব ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেন। ওই দিন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মিশরের আলোকচিত্রশিল্পীরা এবং সিআরআই'র সাংবাদদাতা সেখানে স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে এ গুরুত্বপূর্ণ উত্সবটি উদযাপন করেন। আবুলাতি হ্যারি হাজি দেশি-বিদেশি আলোকচিত্রশিল্পী এবং সাংবাদদাতাদের কাছে হোবুখেসাইআর জেলা মসজিদ-সম্পর্কিত বিষয় ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন,

"হোবুখেসাইআর জেলায় প্রায় ২০ হাজার মুসলমান আছে। তারা যথাক্রমে উইগুর, কাজাখ, তাতার, উজবেক, সালা ও পাও আন জাতিসহ ৮টি জাতির সদস্য। সারা জেলায় মোট ৬টি মসজিদ আছে। হোবুখেসাইআর জেলা মসজিদ ১৯৩১ সালে নির্মিত হয়। এটা স্বায়ত্তশাসিত পর্যায়ের নিরাপদ মসজিদ। এখানকার সাধারণ পরিস্থিতি ভালো। জাতীয় ও ধর্মীয় ক্যাডাররা সবসময় শুভেচ্ছা জানান। বিভিন্ন উত্সব উপলক্ষ্যে জেলার নেতারাও এখানে এসে শুভেচ্ছা জানান এবং সময় মতো জীবন-ভাতা দেন।

ইমাম আবুলাতি হ্যারি হাজির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বিভিন্ন জাতির জনগণের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতির মানুষদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়। সম্প্রতি হোবুখেসাইআর জেলা মসজিদটি সংস্কার করেছে স্থানীয় সরকার। দরিদ্র্য মুসলমান পরিবারের জন্য স্থানীয় সরকারের বিশেষ সুবিধার নীতিও আছে। যেমন স্বল্প ভাড়ার বাড়ি ব্যবস্থা করা, সর্বনিম্ন জীবনযাত্রার নিশ্চয়তায় অন্তর্ভূক্ত করা এবং শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা। চলতি বছর সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার ঈদ-উল-ফিতরকে সারা সিনচিয়াংয়ের বিধিবদ্ধ উত্সব হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন জাতি একসাথে উত্সব উদযাপন করার মাধ্যমে মুসলমান জনগণ যেমন আনন্দ উপভোগ করেছে, তেমনি তাদের ধর্মীয় আচারের প্রতি সরকারের সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টি প্রতিভাত হয়েছে।

মালয়েশিয়ার আলোকচিত্রশিল্পী নরজুজিলাওয়াতি বিনতে সুলাইমান স্থানীয় মুসলিম জনগণের প্রার্থনা দেখে খুব চমত্কৃত হন। তিনি বলেন, চীনা মুসলিম ভাই-বোনেদের হাসি-খুশির ভিতর দিয়ে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন এবং তাদের সুখ-শান্তি দেখে তাঁর খুব আনন্দ লেগেছে। তিনি বলেন,  

"আমি আবিষ্কার করেছি যে, এখানকার পরিবেশ মালয়েশিয়ার মতো। স্থানীয় মুসলমানেরা মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় এবং উত্সব উদযাপন করেন। এই মাত্র ইমাম দোয়া করার সময় আমিও চুপি চুপি আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করলাম। চাকরির কারণে আমি তাঁদের কাছে থাকতে না পারলেও আমি আশা করি, তারা সুস্থ আছে এবং আনন্দের সাথে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করছে। পাশাপাশি আমি খুব মুগ্ধ ও চমত্কৃত হয়েছি। কারণ এখানকার মুসলমান জনগণ খুব সুখে-শান্তিতে এবং সম্প্রীতিময় পরিবেশে এক সঙ্গে থাকে।"

সিনচিয়াং সফরকালে অনেক বিদেশি আলোকচিত্রশিল্পী চীন সরকারের জাতীয় নীতিকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারেন। স্থানীয় সরকার সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার পাশাপাশি তাঁদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। ই লি নামক একটি এলাকায় স্থানীয় সরকার অর্থবরাদ্দ দিয়ে খা জান ছি লোক-রীতি ও সংস্কৃতি পর্যটন গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছে। উইগুর জাতিসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই দর্শনীয় স্থানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, উইগুর জাতির নারি গুলিনিশা বলেন,

"আমাদের দর্শনীয় স্থান প্রতিষ্ঠিত হবার পর এখানকার সবাই, সেটা কাপড়ের দোকান হোক বা হস্তশিল্পী হোক, অথবা অভিনেতা-অভিনেত্রী হোক, দর্শনীয় স্থান থেকে কল্যাণ অর্জন করেছে। পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয় বাড়ছে। সুতরাং জনসাধারণ এটাকে বিশেষভাবে সমর্থন করে। সবাই খুব আনন্দিত।"

একথা শুনে পাকিস্তানি আলোকচিত্রশিল্পী ও দেশটির টেলিভিশনের সৃজন কেন্দ্রের সহকারি পরিচালক মুহাম্মাদ আজহার হাফিজ বলেন,

"চীন একটি খুব ভাল জায়গা। বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের জন্য একই ধরনের সুযোগ ও সমতা-ভিত্তিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয় এখানে। আমরা চীনা সংখ্যালঘু জাতির জাদুঘর ও ঘর দেখেছি। দেখেছি তারা সুন্দরভাবে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনযাপনের প্রণালী বজায় রাখছে। বিভিন্ন জাতি সম্প্রীতিময় সহাবস্থান করে। তাদের জীবন হাসিখুশিতে ভরপুর। এটা শুধু চীনের নয়, সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের মানুষের সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের নমুনা হয়ে উঠেছে।"

মার্কিন আলোকচিত্রশিল্পী সিনথিয়া উইলসন বলেন, সিনচিয়াং হচ্ছে বহু জাতিঅধ্যুষিত এলাকা। সেখানে বহুমুখী সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যময় ধর্মবিশ্বাস এবং জীবনযাপনের প্রণালী আছে। এটা সিনচিয়াং উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,

"যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের শক্তির উত্সগুলোর অন্যতম হচ্ছে বৈচিত্র্য। আমরা প্রত্যেককে স্বাগত জানাই। যদিও এ ধরনের বৈচিত্র্যে মাঝেমাঝে মতভেদ হয়। তবুও এটা আমাদের শক্তিশালী হওয়ার মূল। আমি এখানে একই ধরনের শক্তি দেখেছি।"

মন্তব্য
লিঙ্ক