

খং সান রেনের প্রাক্তন বাসভবন
১৬৮৪ সালে যখন তার বয়স ৪০ বছর, তখন তিনি আবার রাজদরবারের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন। কিন্তু সে-বারও তিনি অকৃতকার্য হলেন। এতে তিনি অত্যন্ত বিষণ্ণ হলেন; মনে মনে ভাবলেন, তার ভাগ্য অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু ঠিক সে-সময় একটি ভাল সুযোগ তার সামনে এলো। সে বছরের বসন্তকালে ছিং রাজবংশের রাজা খাংশি দক্ষিণ চীন পরিদর্শন করতে এলেন। অনেক জায়গা পরিদর্শন করার পর রাজা রাজপ্রাসাদে ফিরে যাওয়ার পথে কনফুসিয়াসের ভবনে পূজা করতে গেলেন। কনফুসিয়াসের ভবন তার জন্মস্থান ছিয়েফুতে। তখন এমন একজন ব্যক্তি খুব দরকার ছিল যে রাজাকে কনফুসিয়াস সম্পর্কে ভাল বর্ণনা দিতে পারবে। কনফুসিয়াস ভবনের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার মনে পড়লো খং সান রেনের কথা। কারণ, খং সান রেন একমাত্র মানুষ যিনি কনফুসিয়াস সম্পর্কে ভালভাবে জানতেন। তিনি অনেক বছর ধরে কনফুসিয়াস নিয়ে গবেষণা করেছেন। খং সান রেন এ-খবর শুনে মহাখুশী হলেন। তিনি রাত জেগে প্রস্তুতি নিলেন। পরের দিন তিনি রাজা খাংশির কাছে কনফুসিয়াস সম্পর্কে নানা তথ্য উপস্থাপন করলেন। কনফুসিয়াস সম্পর্কে জেনে রাজা খুবই খুশি হলেন। তিনি বললেন: 'তোমার বর্ণনা চমত্কার। রাজপ্রাসাদের কর্মকর্তারা তোমার মতো বর্ণনা করতে পারে না।' এরপর রাজা খাংশি কনফুসিয়াসের সমাধি ও মন্দির পরিদর্শন করলেন। খং সান রেন গাইড হিসেবে কাজ করলেন। রাজা খাংশি খং সান রেনকে জিজ্ঞেস করলেন: 'তোমার বয়স কতো? তোমার কোনো ছেলে আছে?' খং সান রেন রাজার প্রশ্নের উত্তর দিলেন। রাজা আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন: 'রাজদরবারের কর্মকর্তা হবার আগ্রহ তোমার আছে কি?' খং সান রেন উত্তর দিলেন: 'আমার জ্ঞান কম এবং যোগ্যতাও কম। আমি কেমন করে কর্মকর্তা হতে পারি?' রাজা তখন কিছু বললেন না। কিন্তু কিছুদিন পর রাজা খাংশির নির্দেশে খং সান রেন রাজপ্রাসাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরীক্ষকের পদে নিয়োগ পেলেন। খং সান রেনের জন্য সেটা ছিল একটা চমত্কার সুযোগ। কারণ, নিয়োগ-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না-হয়েও তিনি রাজদরবারের কর্মকর্তা হতে যাচ্ছেন। রাজপ্রাসাদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরীক্ষক হওয়ার পর, তিনি মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে শিক্ষামূলক বক্তৃতা দিতেন। রাজধানীর অনেক পন্ডিত তার বক্তৃতা শুনতে আসতেন। অল্প সময়ের মধ্যে খং সান রেনের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। একজন সাধারণ মানুষ হয়েও, রাজদরবারের একজন কর্মকর্তা হয়েছেন বলে খং সান রেন খুব খুশি ও উত্তেজিত ছিলেন। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, রাজদরবারের কল্যাণে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবেন। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, তার প্রতিদিনকার কাজ ছিল কেবল অন্যদের লেখা নিবন্ধ সংশোধন করা। পরে জানা গেল, আসলে রাজা খং সান রেনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে চাননি। খং সান রেন দমে গেলেন। তখন থেকে রাজদরবারকে ঘিরে তার উচ্চাভিলাষও দূর হয়ে গেল।




