Web bengali.cri.cn   
কুয়াংতুংয়ের স্থানীয় খাবার
  2013-06-17 19:55:31  cri


ইয়ু কুয়াং ইউয়ে

ইউয়ে রান্না শৈলী অর্থাত্ কুয়াংতুংয়ের স্থানীয় রান্না শৈলী হচ্ছে চীনের চারটি বিখ্যাত রান্না শৈলীর অন্যতম। এর ইতিহাস ছিন রাজবংশের সময় থেকে শুরু হয়। দক্ষিণ সোং রাজবংশের সম্রাটের বাবুর্চি কুয়াংচৌ শহরে গিয়েছিলেন। সে সময় থেকে ইউয়ে রান্না শৈলী দ্রুত বিকশিত হয়। আফিম যুদ্ধের পর বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন চালু করা চীনের প্রথম বন্দর হিসেবে কুয়াংচৌর মাধ্যমে ঘন ঘন বৈদেশিক বিনিময় শুরু হয়। তখন ইউয়ে রান্না শৈলীতে পশ্চিমা খাবারের কিছু বৈশিষ্ট্য সংমিশ্রিত হয়ে নিজস্ব স্বাদ সৃষ্টি হয় এবং সেটি দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করে।

ভৌগোলিক দিক থেকে ইউয়ে রান্না শৈলীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কুয়াংচৌর রান্না শৈলী, ছাও চৌর রান্না শৈলী এবং তুংচিয়াং রান্না শৈলী। তবে কুয়াংচৌ রান্না শৈলী হচ্ছে ইউয়ে রান্না শৈলীর প্রতিনিধি।

কুয়াংচৌ রান্না শৈলীতে নানা ধরনের উপকরণ ব্যবহার করে খাবারের নানা পরিবর্তন সৃষ্টি করা হয়। কুয়াংচৌ রান্না শৈলীর মূল উপায় ২১ ধরনের। খাবার তৈরির সময় রং, সুগন্ধ ও আকারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

চীনে একটি কথা আছে, মুরগি ছাড়া ভোজসভা হয় না। ফলে কুয়াংচৌতে এক সাধারণ মুরগি দিয়ে অনেক ধরনের রান্না করা যায়। যেমন, সস দিয়ে খাওয়া সেদ্ধ মুরগি, লবণ দিয়ে সেকা মুরগি, সয়া সস মুরগি, বাষ্প মুরগি ইত্যাদি।

সস দিয়ে খাওয়া সেদ্ধ মুরগি

দীর্ঘকাল ধরে ইউয়ে রান্না নিয়ে গবেষণাকারী চাং সিন সস দিয়ে খাওয়া সেদ্ধ মুরগি রান্নার পদ্ধতি বর্ণনা করেন, "মুরগি জবাই করে পরিষ্কার করার পর ফোটানো পানির মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। তারপর সে মুরগিকে তাড়াতাড়ি বরফ পানির মধ্যে রেখে দিন, যাতে সেটি দ্রুত শীতল হয়। এভাবে রান্না করলে মুরগির মাংস নরম এবং চামড়া মচমচে হয়। খেতে মজা লাগে। মুরগির মাংসের সঙ্গে কুচিকুচি করে কাটা আদা, লবন ও সয়া সসসহ নানা মসলা দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া হয়।"

ছাওচৌ রান্নার শৈলী আর কুয়াংচৌ রান্নার শৈলীর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ছাওচৌ রান্নার মধ্যে সামুদ্রিক খাদ্য, স্যুপ ও বিট সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

তুংচিয়াং রান্নার শৈলীকে হাক্কা রান্না শৈলীও বলা হয়। এ খাবারের মধ্যে মাংস, তেল ও লবণ বেশি ব্যবহার করা হয়।

আনুষ্ঠানিক রান্না ছাড়া, চা সংস্কৃতিও কুয়াংতুংয়ের খাবার সংস্কৃতির একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক। কুয়াংতুংয়ে চা খাওয়া আসলে কেবল চা পান করা নয়, বরং অন্য ধরনের খাবার খাওয়া। কুয়াংতুংয়ের বিভিন্ন রেস্তোঁরা ও হোটেলে চা-খানা আছে। সেখানে সকাল, দুপুর ও রাতে চা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। চা খাওয়া মানে ব্যবসা নিয়ে আড্ডা দেওয়া, গল্প করা আর বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করা।

কুয়াংচৌ ইউয়ে সিউ পার্কের পাশে একটি চা-খানা আছে। প্রতিদিন সকালে অনেকে ব্যায়াম করার পর এখানে এসে চা খান। কুয়াংচৌবাসী উসু সংবাদাতাকে বলেন, সকালে চা-খানায় চা খাওয়া তাঁর জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। তিনি বলেন, "আমি জ্যাসমিন চা খেতে পছন্দ করি। প্রতিদিন ভোরে বিছানা থেকে উঠি। আটটার আগে ব্যায়াম করি। আটটার পর চা খাই। চা খাওয়ার পর পার্কে গিয়ে সংবাদপত্র পড়ি।"

চিংড়ি ডাম্পলিং

চা খাওয়ার পাশাপাশি কুয়াংতুংয়ের নানা মিষ্টান্ন খাওয়া খুব মজার ব্যাপার। কুয়াংতুংয়ের মিষ্টান্ন নানা রকমের - দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। আপনি এক বার চিংড়ি ডাম্পলিং, হ্যাম বিস্কুট, জল বাদামি পুডিং খেলে আর ভুলবেন না।

চা খাওয়ার মতো স্যুপ খাওয়াও ইউয়ে খাবার সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। কুয়াংতুংয়ে একটি কথা আছে, 'খাওয়ার সময় সবজি না থাকলেও স্যুপ থাকতেই হবে।" কুয়াংতুংবাসীরা সাধারণত ভাত খাওয়ার আগে স্যুপ খায়। ভাত খাওয়ার আগে স্যুপ খাওয়া পাকস্থলী ও পেটের সুস্থতা রক্ষা এবং হজমের জন্য উপকারী। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে স্যুপও পরিবর্তিত হয়। যেমন গ্রীষ্মকাল ও শরত্কালে হালকা স্বাদের স্যুপ খেলে ভালো লাগে। শীতকাল ও বসন্তকালে ঘন স্বাদের স্যুপ খেলে ভালো লাগে।

কুয়াংতুংয়ে স্যুপ রান্না এক শিক্ষণীয় বিষয়। কুয়াংতুংবাসী ওয়াং সুন পাই সময় পেলে বাসায় স্যুপ রান্না করেন। তিনি বলেন,  'আমি সাধারণ মাটির পাত্রে স্যুপ রান্না করি। কারণ মাটির পাত্র ভারসাম্যের সঙ্গে তাপ গ্রহণ করতে পারে। পানি ও খাদ্য ভালোভাবে মিশতে পারে, খাদ্যের স্বাদ আস্তে আস্তে বের হয়। এভাবে রান্না করা স্যুপ বড় সুস্বাদু।'(এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক