Web bengali.cri.cn   
পরীর চুমু
  2013-04-08 11:01:39  cri

আর মঞ্জুতো গর্তে পড়ে গিয়ে একদিকে ব্যথার যন্ত্রণা অন্যদিকে গর্ত থেকে উঠে আসতে না পেরে এবার সে ভয় পেয়ে হু হু করে কাঁদতে লাগলো। সে ভাবছে যে, 'এখান থেকে তো ‌আর উঠে আসতে পারবো না। তাহলে বাড়িতে যাবো কিভাবে। অনেক্ষণ মা তাকে না দেখলে সেও তো কত দুঃশ্চিন্তা করবে আর সারা বনময় আমাকে খুঁজে বেড়াবে। ক্রমে রাত্রি নেমে আসবে, অন্ধকার হবে চারদিক। আমি যতই চিত্কার করি কেউ আমার কথা শুনবে না। মাগো, মাগো আমার ভয় করছে! মা আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো মা.... মাগো"।

ভয়, কান্না আর ক্লান্তিতে এরপর মঞ্জু সেই গর্তের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু একটি অদ্ভুদ কণ্ঠ শুনে হঠাত তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে সে দেখতে পেলো এক অপরূপ সুন্দর একটি মেয়ে তারদিকে চেয়ে আছে। মঞ্জু মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে যায়, সে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না যে কি বলবে। এরপর সে আস্তে করে মেয়েটিকে বলল-

মঞ্জু: তুমি! তুমি কে, কি নাম তোমার?

পরী: আমি পরী (করুন ভঙ্গী করে)

মঞ্জু: তুমি পরী! কি বলছো তুমি, সত্যি তুমি পরী?

পরী: সত্যি পরী, এই দেখো আমি উড়ে এসে তোমার পাশ দাঁড়ালাম, এখন বিশ্বাস হচ্ছে?

মঞ্জু: ও মা! তুমি উড়তেও পারো!

পরী: হ্যাঁ—তুমিতো এই গর্ত থেকে উঠে আসতে পারছো না, এসো আমিই তোমাকে গর্ত থেকে উপরে নিয়ে যাচ্ছি। এসো আমার হাত ধরো, কই ধরো?

এরপর পরী মঞ্জুর হাত ধরে গর্তের উপরে নিয়ে আসে। উপরে এসে মঞ্জু পরীর সাথে বনময় ঘুরে বেড়াতে লাগলো। পরীর সাথে ঘুরে বেড়াতে ভীষণ ভাল লাগছে। তাই হঠাত্ সে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো-

মঞ্জু: তুমি চলে গেলে আমি কার সঙ্গে খেলা করবো? তুমি এতোদিন আসো নি কেনো?

পরী: আমারও তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা, তুমি আমার সাথে আমাদের দেশে চলো, সেখানে আমার মতো আরও অনেক খেলার সাথী পাবে, আর আমাকেও আর কখনো ছেড়ে যেতে হবে না।

মঞ্জু: আমি তো মানুষ, উড়তে পারিনা, তোমাদের চাঁদের দেশে যাবো কেমন করে?

পরী: এটাতো খুব সহজ একটা কাজ। আমি তোমার পিঠে এক্ষুনি দুটো ডানা বানিয়ে দিতে পারি আর তুমি পরী হয়ে উড়ে যেতে পারবে আমার সাথে।

মঞ্জু: কি করে! এও কি সম্ভব?

পরী: আমি যদি তোমাকে একটা চুমু খাই, তাহলেই তুমি পরি হয়ে যাবে, আমার মতো তোমারও ডানা হয়ে যাবে।

মঞ্জু: যাও! তুমি ঠাট্টা করছো, তা কি কখনো হয় নাকি! মা তো আমাকে প্রতিদিন ঘুমানোর সময়ে চুমু খান, কই আমার তো পাখনা গজায় না।

পরী: আচ্ছা, আমার কথা বিশ্বাস না হলে এই দেখো তোমাকে এক্ষুনি প্রমাণ করে দিচ্ছি। দেখো আমি ঐ যে বুনো ফুল ফুটে আছে ওটাতে চুমু দিচ্ছি।... (বাহ!) দেখলে তো ফুলটি ডানা হয়ে রঙিন প্রজাপতি তরতর করে উড়ে যেতে লাগলো। বলো, তুমি কি পরী হবে, যাবে আমার সাথে?

মঞ্জু: (মনে মনে- পরী হতে তো খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু পরী হওয়ার পর যদি মার কাছে আর যেতে না পারি, তাহলে মা তো আমার জন্য কাঁদবেন আর মঞ্জু মঞ্জু করে সারাক্ষণ আমাকে ডাকতে থাকবে, না মার এই কষ্ট কিছুতেই আমি সহ্য করতে পারবো না। কিন্তু পরী হবার ইচ্ছাটাও তো ছাড়তে পারছি না।) আচ্ছা আমি যদি পরী হই, তাহলে কি আমি মার কাছে আর থাকতে পারবো?

পরী: উ হু, না। তোমাকে তখন পরীর দেশে গিয়ে থাকতে হবে। পরীদের মানুষের সাথে কথা বলা নিষেধ। তুমিতো ছোটো তাই তোমার সাথে কথা বলা যায়।

মঞ্জু: (মনে মনে- কি করি, পরী হলে ওর মতো সুন্দর খেলা সাথী পাবো। কিন্তু তাতে তো মাকে হারাতে হবে। না আমি সব কিছু হারাতে রাজি কিন্তু মাকে হারাতে চাই না। (দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে), 'না, আমি কখনো পরী হবো না, আমি মার সাথে থাকবো'।

পরী: (মন খারাপ করে, কান্না জড়িত কন্ঠে) আমরা রোজ রাতে চাঁদ উঠলেই এই বনে মধ্যে খেলা করতে আসি। চাঁদ হচ্ছে আমাদের বাড়ি-সেখানেই থাকি আমারা। কালরাতেও আমারা এসেছিলাম, খেলছিলাম বনের ভিতরে, খেলতে খেলতে লতার ফাঁকে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে যাই। এদিকে চাঁদ অস্ত গেলে আমার সখীরাও চলে যায় আর আমি একা বনের মধ্যে পড়ে আছি (কাঁদতে কাঁদতে)।

মঞ্জু: পরী, এই দেখো তোমার হাতদুটো ধরে আমি আদর করে দিচ্ছি, কিন্তু তুমি আর কেঁদো না। আমার একটিও খেলার সাথি নেই। আজ থেকে তুমি আমার সাথি হলে। সন্ধ্যাবেলা আমরা দু-জনে বাড়ি ফিরে যাব, এক বিছানায় শুয়ে ঘুমুব—মা তোমায় ভীষণ আদর করবে দেখো- তারপর সকালবেলা এখানে এসে আবার খেলা করবো। কেমন?

পরী: না আজ রাতে চাঁদ উঠলে পরীরা ফিরে আসবে আর আমি তাদের সাথে চলে যাব।

1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক