v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে অর্জিত কূটনৈতিক সাফল্য
2009-06-01 19:08:18

    ১৯৫৫ সালে বান্দুং সম্মেলনে চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ও প্রথম পররাষ্ট্র মন্ত্রী চৌ এন লাই বলেছেন, 'আমরা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা সবসময় সাহস করে বলি, আমরা সাম্যবাদে বিশ্বাস করি এবং মনে করি যে সমাজবাদী ব্যবস্থাই উত্তম। কিন্তু এ সম্মেলন ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা ও বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রচারের মঞ্চ নয়। চীনের প্রতিনিধি দলের এখানে আসার উদ্দেশ্য হলো সম্প্রীতির অন্বেষণ করা, অমিল সৃষ্টির জন্য নয়।'

    ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসের বান্দুং সম্মেলন হচ্ছে নয়া চীনের অংশগ্রহণ করা প্রথম বড় আকারের বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে চীনের উত্থাপিত পরস্পরের ভূভাগ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, পরস্পরের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব পোষণ না করা, পারস্পরিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা, এই পাঁচটি মৌলিক নীতিকে আরো বেশি দেশকে অবহিত করা। এখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি সর্ব স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সর্ম্পকের মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে।

    আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চীন সবসময়ই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতির দৃঢ় অনুসরণকারী। এটা হচ্ছে চীনের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরো বেশি সম্প্রসারিত করা, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বের সংখ্যা বৃদ্ধিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে পাশ্চাত্যের বড় বড় দেশগুলো চীনকে ভিন্ন চোখে দেখতো। তথন কেবলমাত্র দশ বারোটি দেশ চীনের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আর এখন পর্যন্ত ১৭১টি দেশ চীনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

    নয়া চীন প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় দিন অর্থাত্ ১৯৪৯ সালের ২ অক্টোবর সোভিয়েট ইউনিয়ন সবার আগে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়া চীনের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। কিছু দিন আগে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও লন্ডনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। দু'পক্ষ চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক ত্বরান্বিত করণ, যৌথভাবে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করাসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছান।

    ৯০ বছর বয়সী রুশ বৃদ্ধ টিখভিনস্কি পেইচিংয়ে সোভিয়েট ইউনিয়নের কন্সুলার জেনারেল ছিলেন। তিনি দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া নিজ চোখে দেখেছেন। ২০০৮ সালের অক্টোবরে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও মস্কো সফরকালে টিখভিনস্কির সঙ্গে সাক্ষাত্কালে বলেছেন, '৬০ বছর আগে আপনি পেইচিংয়ে সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের কন্সুলার জেনারেল এবং নয়া চীন প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। চীন ও রাশিয়ার জনগণের মৈত্রী সুদীর্ঘকালের, তা কোন দিন ব্যাহত হবে না। যদি আপনার শরীরের অবস্থা ভালো থাকে, তাহলে দু'দেশের 'ভাষা বর্ষ' আয়োজনের সময় আমি আপনাকে আবার পেইচিং সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।'

    গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০'র দশকে প্রবেশের পর চীন ও পাশ্চাত্য দেশগুলোর সম্পর্ক সহজ ও সাবলীল হয়ে উঠে। এ সময়েই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

    গত শতাব্দীর ৬০'র দশকের শেষ দিক থেকে ৭০'র দশকের শেষ দিক পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশ নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে চীনের প্রতি তাদের নীতি সুবিন্যস্ত করে। বিখ্যাত 'টেবিল টেনিস কূটনীতি' দিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিশ বছরেরও বেশি দিন বন্ধ থাকা দ্বার খুলে যায়। ১৯৭১ সালে হেনরি কিসিংগার গোপনে চীন সফর করেন। এরপর রিচার্ড নিক্সন চীন সফরে আসেন এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্ত ইস্তেহার প্রকাশ করেন। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারী মাসে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

    কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে দু'দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যিক মূল্য ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারেরও কম ছিল। এখন এ সংখ্যা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লন্ডনে সাক্ষাত্কালে একবিংশ শতাব্দীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক ইতিবাচক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছান এবং দু'দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা নেন।

1 2
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China