২০০৮ সালের ৮ আগস্ট ২৯তম অলিম্পিক গেমস চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০৪টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা খেলোয়াড়রা সম্মিলিত হয়েছেন এবং বিশ্বের কয়েকশ' কোটি লোক একসাথে ক্রীড়ার সৃষ্ট আনন্দ উপভোগ করেছেন।
১৬ দিন পর অলিম্পিক গেমসের পবিত্র অগ্নি মশাল প্রধান স্টেডিয়াম – বার্ড নেস্টে নিভেছে। পেইচিং অলিম্পিক গেমস সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে। সমাপনি অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাক রগে এবারের অলিম্পিক গেমসের ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'এবারের অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে বিশ্ব চীনকে আরো বেশি জেনেছে। চীনও বিশ্বকে আরো বেশি বুঝেছে। এবার হচ্ছে একটি সত্যিকার অতুলনীয় অলিম্পিক গেমস।'
এ ১৬ দিন ১৩০ কোটি চীনাদের কাছে চিরস্মরনীয় দিন। অলিম্পিক গেমস আয়োজন করার কিছু নির্দিষ্ট পরিবেশ দরকার। পেইচিং অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম নির্মাণ, বুনিয়াদী ব্যবস্থার সংস্কারসহ নানা ক্ষেত্রে চীন ৩১০ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি ব্যয় করেছে। অতীতে অলিম্পিক গেমসের জন্য চীনের এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা মোটেই সম্ভব ছিল না।
১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সময় দীর্ঘদিন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের অবস্থা। তখন মাথাপিছু জি.ডি.পি ছিল কেবল ৫০ মার্কিন ডলার। এখন ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা লিউ কুই সিয়ান শুধুমাত্র 'গরীব' এ কথা বলে তাঁর তত্কালীণ জীবনের বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, 'তখন খুব গরীব। আমার সন্তান বেশি, আয় কম। এক বেলা ভাত খেলে জানতাম না পরের বেলার ভাত কোথায়। শীতকালে হাড়কাঁপানো শীত সহ্য করা যায় না। পরিবারের সাত জন সদস্যের কেবল দু'টি লেপ ছিল।'
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে চীনারা শিল্পায়নের আদর্শ নিয়ে একশ'টিরও বেশি বিরাট বুনিয়াদী প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে কেন্দ্রীভূত থাকতেন। এ প্রকল্পগুলো চীনের সার্বিক জাতীয় শক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ভালো ভিত্তি স্থাপন করেছে। কিন্তু এ প্রকল্পের বেশির ভাগ ছিল ভারি শিল্পের, ফলে তখন থেকে দীর্ঘদিন গোটা চীনের জীবনযাপনের সম্পদ সরবরাহে অপেক্ষাকৃত ঘাটতি ছিল।
তখন চীন পরিকল্পনা অর্থনীতির যুগে ছিল। শহরাঞ্চলে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু ছিল। মোটা কাপড়সহ নানা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস সবই বিশেষ টিকিট দিয়ে কেনতে হতো এবং সরবরাহের সীমাবদ্ধতা ছিল।
১৯৭৮ সালে চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরন শুরু করে। তখন থেকে দেশের উন্নয়নের গুরুত্ব অর্থনৈতিক গঠনের ওপর দেয়া হয়। চীনের আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ দিনে দিনে দ্রুততর হয়।
১৯৮০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পটকা ফাটানোর আওয়াজে বৃদ্ধা লিউ কুই সিয়ান পেইচিংয়ে নয়া চীনের প্রথম ব্যক্তিগত রেস্তোরাঁ খোলেন। এ ছোট রেস্তোরাঁ লিউ কুই সিয়ানের জন্য স্বপ্নের ভালো জীবন বয়ে এনেছে। এখন তিনি আর তাঁর স্বামী পেইচিংয়ের উপকন্ঠে একটি চক মেলানো বাড়ী কিনেছেন এবং সুখী অবসর জীবন কাটাচ্ছেন।
1 2 |