
শ্রোতাবন্ধুরা, একজন তিব্বতী নারী, যিনি তিব্বতে বড় হননি, তাহলে কী হবে, তিনি হান ভাষা তিব্বতী ভাষার চেয়েও আরও বেশি পরিশিলীত উচ্চারণে সুষ্ঠুভাবে বলতে সক্ষম। তিনি হচ্ছেন ওয়াং সি চুও মা। তবে ৪০ বছর বয়সী ওয়াং সি চুও মা হঠাত্ করে নিজের আইন পেশা ত্যাগ করে সি নান জাতিগত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিব্বতবিদ্যার ওপর গবেষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ থেকে তাঁর তিব্বতবিদ্যা গবেষণার জীবন তেজীয়ান হয়ে উঠেছে।

আসলে, একজন মানুষ তার একান্ত নিজের জাতির সাংস্কৃতিক এলাকা ছেড়ে দূরে চলে যাওয়ার পর, তার নিজের জাতির ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণের অনুভবে সবচে' বেশি জঞ্চিত হৃদয়কে নাড়া দিতে থাকে। ওয়াং সি চুও মার অভিজ্ঞতা ঠিক এমন ধরণের।

সিন চিয়াং উউগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি খামারে ওয়াং সি চুও মা জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তাঁর খেলা-ধূলার স্থায়ী ছিল অধিকাংশই কাজাখ জাতির শিশু। সেসময়, কাজাখ শিশুদের সাথে মিলেমিশে ওয়াং সি চুও মাও কিছু কিছু কাজাখ ভাষাও বলতে পারতেন। তবে ওয়াং সি চুও মা জানেন, তিনি একজন তিব্বতী অধিবাসী। এ সব শিশুদের চেয়ে ভিন্ন । কিন্তু তিব্বতী জাতি আসলে কেমন একটি জাতি সেসময় তিনি তা তত বেশ জানতে সক্ষম হননি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি গবেষণার আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠেছে।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন" আমি একটি তিব্বতী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি । তিব্বতী অঞ্চলে বড় না হলেও তিব্বতী সংস্কৃতির প্রভাব আমার নিত্য দিনের জীবনে বেশ আষ্টে পৃষ্ঠে জজিয়ে রয়েছে। সুতরাং, আমি এর প্রতিবেশ আগ্রহ অনুভব করি। আরেকটি কথা, হয়তো আমি তিব্বতী অঞ্চলে বেড়ে উঠিনি। তাই এ অঞ্চলের ওপর গবেষণা ও সবাইকে তা জানাতে বেশি পছন্দ করি।"

১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়াং সি চুও মা কেন্দ্রীয় জাতিগত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। সেসময় তিনি অনেক তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তাদের যোগাযোগে ওয়াং সি চুও মা তিব্বতী জাতির অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কোনো তিব্বতী উত্সব সংক্রান্ত উদযাপনী অনুষ্ঠানে তিনি তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের সাথে আনন্দের সঙ্গে সংগীতও নৃত্যে অংশ নিতেন।

এমন কি, বিদেশী ছাত্রছাত্রীরাও এতে যোগ দিয়ে সবাই মিলে একসাথে আনন্দে নাচতেন। এভাবেই ওয়াং সি চুও মা তিব্বতী ভাষা এবং তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ওপর গবেষণার আগ্রহ বেশ জোরালো হযে ওঠে। একই সময়, তিনি তিব্বতী জাতির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের অনেক বইপত্র পড়েন। ১৯৯৮ সালে তিনি নান চিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বতবিদ্যা বিষয়ক স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হন।

এ সম্পর্কে তিনি ম্মরণ করে বলেন:" ২০০১ সালে আমি পেইচিং আন্তর্জাতিক তিব্বতবিদ্যা সমিতির সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিব্বতবিদ্যা ক্ষেত্রের অনেক পন্ডিতগণও সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে তিব্বতের সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় আমি বুঝতে পারি যে, তিব্বতবিদ্যার গবেষণায় নিজের জানার পরিধি বেশ কম । এ ব্যাপারে নিজের আরও বেশি প্রচেষ্টা রাখা উচিত।"

যেমন ভাবা তেমনি কাজ, নিজের নিরলস প্রচেষ্টায় ওয়াং সি চুও মা চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের সি নান জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতিগতবিদ্যা বিভাগের প্রথম দফা ডক্টরেট ডিগ্রি-কোর্সে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেন। তবে এ ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন ওয়াং সি চুও মার জন্য এতো সহজ নয়। কারণ, সেসময় ৪০ বছরের ওয়াং সি চুও মা তাঁর কাজে ইতোমধ্যেই অনেক বেশি ব্যক্তিগত পর্যায়ের মর্যাদা লাভ করেছেন।
1 2 |