
বন্ধুরা, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুয়াং সি প্রদেশের চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হচ্ছে চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে সবচে' বেশি লোকসংখ্যা অধ্যুষিত প্রদেশ। এ প্রদেশে চীনের চুয়াং , হান, ইয়াও এবং মিওসহ ১২টি জাতির অধিবাসীরা বসবাস করছে। এখানে আমরা কেবল চুয়াং জাতির প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর পাশাপাশি সংগীত ও নৃত্য উপভোগ করতে পারি তা নয়, একই সঙ্গে তা চিং জাতির সুন্দর সুন্দর বাদ্যযন্ত্রের মধুর শব্দও শুনতে পারি।

স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতিক রক্ষা কর্মকান্ড পুরোপুরিভাবে সারা জাতির সংহতির কথাই প্রতিফলিত হয়েছে । বন্ধুরা, আজকের " চীনকে জানুন" অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয় নিয়েই আপনাদেরকে পরিচয় দেবো।

আপনারা এই মাত্র শুনলেন চীনের কুয়াং সি প্রদেশের ছুং চুও শহরের তা সিন জেলার পাও সু থানার পান চিয়া গ্রামের একটি স্থানীয় সুন্দর গান। পান চিয়া হচ্ছে কুয়াং সি প্রদেশের তা সিন জেলাগুলোর মধ্যে রীতি-নীতির দিক থেকে সবচে' বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি গ্রাম। চুয়াং জাতির একটি শাখা জাতি হিসেবে স্থানীয় গ্রামীণ অধিবাসীর পোশাক নিকটবর্তী গ্রামের অন্যান্য অধিবাসীদের মত একই নয়। তাদের নিজেদের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি রয়েছে।

৬৮ বছর বয়সী নুং থিং সিং হচ্ছেন পান চিয়া গ্রামের একটি পরিবেশনা দলের প্রধান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নুং থিং সিয়ের উদ্যোগে পান চিয়া গ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতির উন্নতির পাশপাশি ধাপে ধাপে তা দেশি-বিদেশীর মানুষকেও জানতে সক্ষম হয়েছেন। স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষা ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় সরকারের অনেক বেশি সাহায্য পেয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

" সরকার জাতিগত কাজের ওপর বেশ যত্নবান । বিশেষ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ছুং জুও শহরের স্থানীয় কমিটি এবং তা সিন জেলার জাতি ব্যুরোর ব্যাপক সহায়তা পেয়েছি। তারা আমাদের দলকে আর্থিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন "।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ছুং জুও শহরের স্থায়ী উপ-মেয়র চিয়াং লিয়ান শেং অবহিত করেন, এ শহরের জুয়াং জাতির লোকসংখ্যা মোট লোকসংখ্যার ৮৮.৫ শতাংশ হয়েছে। স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি রক্ষা কর্মকান্ড তিনটি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

" প্রথমতঃ চীন সরকারের কেন্দ্রীয় জাতিগত নীতি এখানে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করা হয়েছে। যেমন কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় অঞ্চলে অনেক ভর্তুকি দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ স্থানীয় সরকারের সংখ্যালঘু জাতির রীতি-নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন। তৃতীয়তঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনামসহ আসিয়ানের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্প্রীতিময় সম্পর্কের উন্নয়ন। যা সীমান্ত অঞ্চলে একটি খুবই উপযুক্ত উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে"।

আসলে চীনের কুয়াং সি প্রদেশের সংখ্যালঘুজাতির সংস্কৃতি রক্ষা কর্মকান্ড ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসাধারণের দৃঢ়তার সঙ্গে জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষার চেতনাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সু ছুন ফা হচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন বিখ্যাত উত্তরাধীকারী। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে তাঁর উদ্যোগেই স্থানীয় সংগীত রক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ পর্যন্ত তাঁর কল্যাণে মোট ২ শ'রও বেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়েছে।

এর মধ্যে সবচে' ছোট্ট ছাত্রছাত্রীর বয়স মাত্র পাঁচ বছর এবং সবচে' বড় ছাত্রছাত্রীদের বয়স হয়েছে ৮০ বছরেরও বেশি। সু ছুন ফা বলেন, তাঁর এ সব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেবল যে চিং জাতির মানুষ রয়েছেন তা নয়, তার মধ্যে হান ও চুয়াংসহ অন্যান্য জাতির সংগীতানুরাগীরাও রয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

" আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মিয়াও এবং ইয়াও জাতিসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুজাতির মানুষও রয়েছেন। কোন একটি জাতির মানুষ আমার কাছে শিখতে আসলে আমি সর্বোতভাবে তাদেরকে উত্সাহ সহকারে শিখাই"।
অবশ্যই, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশের ইতিহাস ও উন্নয়নের একটি লিপিবদ্ধদলিল। চীন সরকার সমসময় সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতালির সংবাদদাতা গিয়াকোমো দ্য আজেলিস বলেন, তিনি কুয়াং সিতে সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় দেখতে পান যে, স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতিরাও নিজেদের জাতির ঐতিহ্যবাহী রীতি-নীতি বজায় রেখেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

" কুয়াং সি হচ্ছে চীনের সবচে' সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে রয়েছে অনেক সংখ্যালঘুজাতির মানুষ । স্থানীয় সংখ্যালঘুজাতির অধিবাসীদের নিত্য দিনের জীবন আমার মনে প্রগাঢ় ছাপ ফেলেছে। তারা খুবই আনন্দিত। কারণ তারা নিজের জাতির ঐতিহ্যকে সম্মান করে। যা সামজিক ও বৈজ্ঞানিক উন্নন হলেও নিজেদের রীতি-নীতির পরিবর্তন করবে না"।
1 2 |