
১৯৬৯ সালে চীনের সিন চিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কা শি এলাকা পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য চালু করার পর, চীন-পাকিস্তান দু'দেশের সীমান্ত বাণিজ্য ইতোমধ্যেই ৪০ বছরের পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের পটভূমিতে বর্তমানে চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত বাণিজ্যের অবস্থা কেমন ? এ ধরণের সমস্যা নিয়ে আমরা একসাথে চলিয়ে আজকের " চীনকে জানুন" অনুষ্ঠান।
" চলতি বছরের ১ মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত চীন ও পাকিস্তানের নাগরিকদের গমনাগনের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া মাল আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০২ শতাংশ বেশি হয়েছে। এ কথা বলতে হয় যে ২০০৯ সালে চীন ও পাকিস্তানের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের ওপরই প্রভাব পড়েনি"।
এটি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানের শুধুমাত্র একটি স্থলবন্দরের 'হোং ছি লা ফু' শুল্ক বিভাগের মহাপরিচালক সিন চিয়ান মিনের কথা। তিনি অবহিত করেছেন যে, চীন ও পাকিস্তানের 'হোং ছি লা ফু' শুল্ক বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয় পক্ষের কাছে উন্মুক্ত হওয়ার পর, চীন ও পাকিস্তানের আর্থ-বাণিজ্যের সুষ্ঠু উন্নয়ন হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ২০০৬ সালের পর, চীন ও পাকিস্তানের বাণিজ্য বিনিময়ে দু'পক্ষের পণ্য সরবরাহ এবং পর্যটক গমনাগনের পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সালের জুলাই মাস থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে " চীন ও পাকিস্তানের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি" দু'পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়নের একটি উপযুক্ত নীতিমালাও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

২০ বছর ধরে সীমান্ত বাণিজ্যকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের ব্যাবসায়ী সফরুল্লাহ বোগ্ এ ব্যাপারে তার গভীর অনুভুতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এবারের আর্থিক সংকট তার নিজের ব্যবসাকে কোনভাবেই প্রভাবিত করতে পারে নি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" চীন সরকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার পাকিস্তানী ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর নীতি প্রণয়ন করেছে। পাকিস্তান থেকে চীনে আসা ব্যবসায়ীরা সীমান্ত অঞ্চলে ৩ হাজার ইউয়ানের মত কর মৌকুফের সুযোগ লাভ করেন। আমি সত্যিকারভাবেই চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। চীনের সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি বিভাগ পাকিস্তানের ব্যাবসায়ীদের চাহিদার ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পাকিস্তান ও চীনের মৈত্রী পাহাড়ের চেয়েও উচুঁ এবং সমুদ্রের চেয়েও গভীর। ঠিক এ কারণেই আমাদের মধ্যে বিনিময় এতো সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে"।
এ ছাড়া এ কল্যাণকর নীতি চীনা ব্যবসায়ীদেরও অনেক প্রশংসা পেয়েছে। এ সম্পর্কে চীন ও পাকিস্তানের মৈত্রী বাণিজ্য বিষয়ক লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপক ইউয়ান ইয়ৌ চুন বলেন:

" এ কল্যাণকর নীতির সুবিধার কারণে কাছাকাছি অঞ্চলের অধিবাসীরা বেশ কম অর্থ নিয়ে সরাসরিভাবে ব্যবসা করতে সক্ষম। বাণিজ্যিক বিনিময়ে তারা সহজেই কয়েক শ' ইউয়ান উপার্জন করতে পারেন"।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত বাণিজ্যের দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। ব্যবস্থাপক ইউয়ান ইয়ৌ চুনের কোম্পানিকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় যে, ২০০২ সালে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় মাত্র ৪জন কর্মী ছিলো। তবে এখন এ কোম্পানির কর্মী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬জনে। বাণিজ্যের পরিমান থেকে দেখা যায় যে, ২০০৫ সালের শেষার্ধে এ কোম্পানির বাণিজ্যের পরিমান ছিল প্রায় ৪ কোটি মার্কিন ডলার। তবে ২০০৮ সালে এ কোম্পানির বাণিজ্যের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার।

আমদানি ও রপ্তানিকারী বাণিজ্যিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত উন্নয়ন মাতৃভূমি এবং স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সুবিন্যস্ত নীতির সাহায্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। জানা গেছে, চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত বাণিজ্য বিনিময়ে রেন মিন পি'র মীমাংসিত হিসাব ইতোমধ্যেই চীনের গণ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। এ সম্পর্কে ব্যবস্থাপক ইউয়ান ইয়ৌ চুন আরো বলেন:
" এখন দু'পক্ষের বাণিজ্য বিনিময়ের গতি অনেক দ্রুত হয়েছে অনেক বেড়েছে। প্রচুর পণ্য একদিনের মধ্যে পুরোপুরিভাবে বিনিময়ের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা যায়। পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট ব্যুরো চীনকেও অনেক সুবিধা প্রদান করেছে। দু'পক্ষের এ দু'টি স্থলবন্দরের সমন্বয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সামনে চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত দু'বছরে আমি পাকিস্তানে যাওয়ার প্রতি বেশ আগ্রহী। আমাদের কোম্পানির সকল ড্রাইভার পাকিস্তানে যেতে আগ্রহী"।
1 2 |