ইয়াংসি নদীর তিন গিরিখাত হচ্ছে চীনের ১০টি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান ও মনোরম দৃশ্যাবলীর মধ্যে অন্যতম। তিন গিরিখাতে রয়েছে ছুই থাং গিরিখাত, উ গিরিখাত এবং সিলিং গিরিখাত। তিন গিরিখাতে নৌকায় ভ্রমণের সময় সারিসারি অসংখ্য পাহাড় এবং দূরবর্তী নদীর আঁকাবাঁকা দৃশ্য সব সময় হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে। আসলে দু'তীরের উপত্যকার মাঝখানে আরো অনেক অনেক সুন্দর দৃশ্য লুকিয়ে রয়েছে। হু পেই প্রদেশের ই ছাং শহরের সি লিং গিরিখাতে অবস্থিত 'তিন গিরিখাত পরিবার' দর্শনীয় স্থানটি এর মধ্যে অন্যতম। বন্ধুরা, আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের নিয়ে 'তিন গিরিখাত পরিবারে' বেড়াতে যাবো।
দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে দূর থেকে থুচিয়া জাতির গান কানে ভেসে আসবে। সাধারণত থুচিয়া জাতির মানুষ অতিথিদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর সময় এ ধরনের সঙ্গীতের মাধ্যমে তাদের হৃদয়ের আনন্দ প্রকাশ করেন। সঙ্গীতের সুরের দিকে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন ছোট ছোট নৌকায় দাঁড়ানো থুচিয়া জাতির ছেলেমেয়েরা গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরের পর্যটকদেরকে হাত নেড়ে স্বাগত জানাচ্ছে। এ ধরনের দৃশ্য সুন্দর একটি গতিবিধিসম্পন্ন ভূখণ্ডচিত্রকেই সবার কাছে তুলে ধরবে।
'তিন গিরিখাত পরিবার' দর্শনীয় স্থানে ছোট্ট ও সরু একটি ঝরণা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। এটা হচ্ছে লোং ছিং ঝরণা। এর বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ ঝরণার নানা রকমের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। মাঝেমাঝে তা রেশমের মত স্থির, মাঝেমাঝে তার স্রোত খুব প্রচন্ড গতির। কোন কোন জায়গায় ঝরণার স্রোত খুব ধীরে ধীরে বয়ে যায়। কোন কোন জায়গায় তা জলপ্রপাতের মতো মনে হয়। এ ঝরণার নামের কথা উল্লেখ করলে এর সমাপ্তির অংশের একটি বিরাট পাথরকে দেখতে যেতে হবে। পথপ্রদর্শক ওয়াং চিন ইয়ান বলেন,
এর চূড়ার পাথরগুলো দেখতে খুব সরু। দেখতে একটি ড্র্যাগনের দক্ষিণ তীরের ঝরণায় ঝাঁপ দেয়ার মত। এই পাথরের কারণে লোং ছিং ঝরণা এই নামটি পেয়েছে।
ছবির মতো সুন্দর দৃশ্য ছাড়াও 'তিন গিরিখাত পরিবার' দর্শনীয় স্থানের সত্যিকারের বৈশিষ্ট্য হলো থুচিয়া জাতির লোকজনের রীতিনীতির সংমিশ্রণ। 'তিন গিরিখাত পরিবার' দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের প্রক্রিয়ায় আপনি ঝরণার তীরে থুচিয়া জাতির মেয়েদের গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাপড় ধোয়ার পাশাপাশি গিরিখাতের জনসাধারণের ছিপ দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্যও দেখতে পাবেন। এ সব কিছু উপভোগের পাশাপাশি আপনি থুচিয়া জাতির মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারবেন।
হু পেই প্রদেশের সিয়াও কান শহরের পর্যটক থিয়ান শৌ ইয়ুং বলেছেন, এমনিতেও তিনি জাতীয় সংস্কৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং এর উপর গবেষণা করেন। তিনি মনে করেন, থুচিয়া জাতির বিয়ের অনুষ্ঠান ও রেওয়াজ বৈশিষ্ট্যময়। পরিবেশনায় অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পর্যটকরা সরাসরিভাবে থুচিয়া জাতির লোকজনের রীতিনীতিকে অনুভব করার পাশাপাশি এ ধরনের জাতীয় সংস্কৃতিকে পর্যটনের সাথে মিশে যেতে পারবেন। এ এক অনাবিল আনন্দ। অপর দিকে সংস্কৃতির আরো ব্যাপক প্রচারও পাওয়া যায়। থিয়ান শৌ ইয়ুং বলেন,
এ সব দৃশ্যের সাংস্কৃতিক দিকের সঙ্গে মিশে গিয়ে ভ্রমনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব হবে। পর্যটকরা ভ্রমণের সময় অনেক কিছুই দেখতে ও বুঝতে পারবেন। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংস্কৃতির তাত্পর্য।
নানা রকম আদী লোকজনের রীতিনীতি ছাড়া, ঝরণা বেয়ে বেয়ে নির্মিত টংঘরগুলোও পুরোপুরিভাবে 'তিন গিরিখাত পরিবারের' জীবনযাপনের আমেজকে অনুভবে সহায়তা দেবে। টংঘর হচ্ছে থুচিয়া জাতিসহ অনেক সংখ্যালঘু জাতির মানুষের ঐতিহ্যবাহী বসতবাড়ি। এটা হচ্ছে এক ধরনের কাঠের কাঠামোর স্থাপত্য। সাধারণত ২ থেকে ৩ তলা পর্যন্ত তৈরী করা হয়। সবচেয়ে ওপরের তলা হচ্ছে গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার তলা। মাঝখানের তলা হচ্ছে বসবাসের জন্য এবং নিচের তলা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য রাখার জন্য। 'তিন গিরিখাত পরিবারের' টংঘরগুলোতে প্রাচীন তিন গিরিখাত মানুষের দ্রব্য ও যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে, যাতে পর্যটকরা গিরিখাতের জনসাধারণের জীবনযাপনকে অনুভব করতে পারেন।
1 2 |