অপরূপ সুন্দর সাংহাই সমৃদ্ধ ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত। সেখানকার অর্থনীতি উন্নত হওয়ার পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানও কিন্তু খুব দৃষ্টিনন্দন ও সহায়ক। সারা শহর জুড়েই রয়েচে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য। যদি ২০১০ সাল সাংহাই বিশ্ব মেলা চলাকালে আপনার সাংহাইয়ে আসার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আমি আজ আপনাকে সাংহাইয়ের নিকটবর্তী এবং ভ্রমণের আরেকটি ভালো জায়গা—চিয়াং সু প্রদেশের ছাংচৌ-এ নিয়ে যাবো।
সাংহাইয়ের নিকটবর্তী প্রতিবেশী হিসেবে ছাংচৌ ও সাংহাই'র মধ্যেকার দূরত্ব হচ্ছে ১৫৬ কিলোমিটার। 'চায়না রেলওয়ে হাই-স্পীড' বিশেষ ট্রেনে যেতে প্রায় এক ঘন্টা লাগবে। যাতায়াত খুব সহজ।
ছাংচৌয়ের আরেকটি নাম হলো—লোং ছেং অর্থাত্ ড্রাগন নগর। কিংবদন্তী অনুযায়ী, ৬টি ড্রাগন ছাংচৌ-এ এসেছিল। বসন্ত ও শরত সময়পর্ব থেকে এখন পর্যন্ত ছাংচৌয়ের রয়েছে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস। ছাংচৌ হচ্ছে চিয়াং সু প্রদেশের ১৩টি প্রাদেশিক –শাসিত বিভাগীয় শহরের মধ্যে অন্যতম। শহরটি ইয়াংসি নদীর বদ্বীপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সাংহাই ও নানচিং দুটোই মহাননগর থেকে এর দূরত্ব একই। ছাংচৌ সুচৌ ও উ সি শহরের সঙ্গে মিলে সুসিছাং নগর সমৃদ্ধ এলাকা গঠিত হয়েছে। দক্ষিণ চিয়াং সু প্রদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাশাপাশি উ সংস্কৃতির প্রধান উত্স স্থানগুলোর মধ্যে এ অঞ্চলটি অন্যতম।
ইয়ান ছেং শহরের ধ্বংসাবশেষ
গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও সংস্কৃতির পাশাপাশি ছাংচৌয় রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও দৃশ্যাবলী। ৩শ' হেকটরের ওপর বসন্ত ও শরত সময়পর্বের ইয়ান ছেং শহরের ধ্বংসাবশেষ আজ থেকে আড়াই হাজার বছরের পুরানো। এটা হচ্ছে বসন্ত ও শরত সময়পর্ব থেকে এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে সম্পূর্ণ ও প্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষ। প্রাচীন পেইচিং-হাংচৌ বৃহত্তম খাল ছাংচৌয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইয়াংসি নদীর দক্ষিণাঞ্চলের খালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত অংশ ছাংচৌ শহরের পরিবর্তন যেন আকাশচুম্বী। 'দক্ষিণ-পূর্বের প্রথম বন' সুনাম থাকা থিয়ান নিং মন্দির হচ্ছে চীনের বৌদ্ধ ধর্মের বিখ্যাত স্থান এবং তীর্থ স্থানের মধ্যে সবচে' দর্শনীয় স্থান। ছিং রাজবংশের সম্রাট ছিয়ান লোং দক্ষিণ চীন ভ্রমণ করার সময় তিনবারের মত থিয়ান নিং মন্দিরে এসেছিলেন এবং মন্দিরের জন্য কিছু লিখে অলংকৃত করেছেন।
২০০৭ সালের ৩০ এপ্রিল চীনের বর্তমান সবচেয়ে উঁচু ও বড় বৌদ্ধ স্তূপ, চীনের প্রথম বৌদ্ধ প্যাগোডা—থিয়ান নিং প্যাগোডা ৬ বছরের নির্মাণ কাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে। ১০৮জন দেশী-বিদেশী বৌদ্ধ পন্ডিত প্যাগোডার পবিত্রকরণ করেছেন। থিয়ান নিং প্যাগোডা লিমিটেড কোম্পানির ডেপুটি মহা ব্যবস্থাপক তেং চুন ব্যাখ্যা করে বলেন,
২০ কোটি ইউয়ান ব্যয়ে নির্মিত প্যাগোডাটি ১৩ তলা পর্যন্ত উঁচু। তা প্রায় ১৫৩.৭৯ মিটার উঁচু। এর আয়তন ২৭ হাজার বর্গমিটার। প্যাগোডার উচ্চতা চীনের ৪ হাজারেরও বেশি প্যাগোডাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। উত্তর চীনের ইয়ুন কাং বুদ্ধ, মধ্য চীনের লোং মেন বুদ্ধ, পশ্চিম চীনের লে শান বুদ্ধ, পূর্ব চীনের লিংশান বুদ্ধ এবং হংকংয়ের থিয়ান থান অর্থাত স্বর্গ মন্দির বুদ্ধের সঙ্গে থিয়ান নিং প্যাগোডার তুলনা করা যায়।
অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান ও দৃশ্যাবলী ছাড়াও ছাংচৌ'র অধিবাসীরা তাদের জ্ঞান এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি 'কেনাকাটার স্বর্গ' তৈরী করেছেন। ছাংচৌয়ের নানা রকমের হস্তশিল্পজাতদ্রব্যের ওপর ঐতিহাসিক ছাপ রয়েছে। যা চোখ ধাধানোর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে। আপনারা ছাংচৌ'র চিরুনি, সূচিশিল্প ও বাঁশ খোদাইসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্যের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের ভারী ওজন অনুভব করার পাশাপাশি কার্টুনের অতিকায় সরীসৃপ ধাতুর ওপর মিনার কারুকাজ করা হস্তশিল্পের ছবি এবং খোদাইকৃত রঙিন 'অতিকায় সরীসৃপ ডিম'-এর মাধ্যমে ছাংচৌ পর্যটনের নতুন প্রাণশক্তিকে দারুণভাবে অনুভব করবেন।
1 2 |