বিয়ের ভোজসভা শুরু হয় বিকেল থেকে । ভোজসভায় জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ছিল । ফুং বাড়ির সামনের দিক এবং গ্রামের বাস্কেটবল খেলার মাঠও ভোজসভা আয়োজনের জন্য ব্যবহৃত হয় । ভোজসভায় আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবে পরিপূর্ণ ছিলো । বরের চাচা অতিথিদের স্বাগত জানানের কাজ পরিচালনা করেন । ভাতিজার আড়ম্বরপূর্ণ বিষয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে ফুং হোং চিয়াং বলেন ,
বর বধূর বিয়ের অনুষ্ঠানে অভিনন্দন জানানোর জন্য অতিথিরা ২০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি নগদ উপহার দিয়েছেন । ভোজসভায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার । বর্তমানে গ্রামবাসীরা অনেক সচ্ছল হয়ে উঠেছেন । তারা বিয়ের অনুষ্ঠানের ভোজসভার খরচ বহন করতে পারেন । ফুং হোং চিয়াংয়ের বয়স ৪০ বছরেরও বেশি । তিনি গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বিয়ে করেছেন । তখন সবাই দরিদ্র ছিলেন । বিয়ের অনুষ্ঠানও সহজ সরল ছিল ।
আগে বিয়ের ভোজসভা হিসেবে মাংস বিশেষ করে বেশি চর্বিসহ মাংস ভিত্তিক তরকারী রান্না করা হতো । তখন গ্রামবাসীরা গরীব ছিলেন । খাদ্যাভাব তাদের একটি বড় কথা । সুতরাং বেশি চর্বিসহ খাবার তাদের পক্ষে খুবই প্রয়োজন ছিল । এখন গ্রামবাসীরা বেশি আয় করেছেন , সচ্ছল হয়ে উঠেছেন । তাদের জন্য সবজি ভিত্তিক খাবারের আরো প্রয়োজন ।
ফুং হোং চিয়াং বলেন , চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রথম দিক থেকে চিন সুই হো গ্রামে কলা চাষ শুরু হয় । এখন রাবার ও কলা বাগান গ্রামবাসীদের উপার্জনের একটি প্রধান উত্স হয়ে দাঁড়িয়েছে । খাওয়ার কোনো সমস্যা নেই । তারা বেশ কিছু উন্নত মানের বৈদ্যুতিক প্রয়োজনীয় পণ্যও কিনেছেন ।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর জনসাধারণ সচ্ছল হয়ে উঠেছে । বেশির ভাগ গ্রামবাসী রাবার ও কলা চাষের মাধ্যমে বেশি আয় করেছেন । তাদের রাবার ও কলা চাষের জন্য বিদেশী পুঁজিও ব্যবহার করা হচ্ছে । সীমান্তের ঐ পারে ভিয়েতনামী নাগরিকরাও সীমান্ত বাণিজ্য শুরু করেছে । কেনা কাটা , ব্যবসা বা চাকরি করার জন্য চীনের সীমান্ত নাগরিকরা ভিয়েতনামেও যেতে পারছেন ।
তাই জাতির গ্রামবাসীরা পরিশ্রমী এবং সাশ্রয়ী । বিয়ের সময় বর কন্যাকে প্রদত্ত ধন থেকে তাদের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে ।
আগে কন্যাকে বর নিজের বোনা কাপড় চোপড় দিতো । এখন যৌতুক হিসেবে কানের সোনার দুল ও রূপোর হাতে চুড়িসহ বর কন্যাকে মোটর সাইকেল , রিফ্রিজারেটর , সৌর শক্তি চালিত হিটার ও টিভি সেটও উপহার দেয় ।
ফুং হোং চিয়াং বলেন , তাই জাতির আচার ব্যবহার অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দু'পক্ষের পরিবার পরিজনকে এক সাথে আলোচনা করতে হতো । যৌতুক ব্যবস্থার জন্য বর পক্ষকে কন্যাকে উপযুক্ত নগদ অর্থ দিতে হতো । এখন গ্রামবাসীরা সচ্ছল হয়ে উঠেছে । যৌথুক ও নগদ দেয়ার পরিমাণও বেড়েছে ।
অন্ধকার ঘনিয়ে এল । খেলার মাঠে বিয়ের ভোজসভা শেষের দিকে চলছে । সবাই গল্প করছিলেন । তারা কৃষি জমিতে কলা ও রাবার চাষ এবং এ বছরের বাম্পার ফসল সংগ্রহের বিষয়ে বথাবার্তা বলছিলেন । অবশ্যই বেশির ভাগ গ্রামবাসী এ দিনের বর-বধূ , যৌতুক ও বিয়ের অনুষ্ঠানের কথাও বলছিলেন । বরের বাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণ ও সুন্দর সংগীত শোনা যাচ্ছিল । তাই জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী দু'পক্ষের গান গাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয় ।
বধূ পক্ষের লোকজন গানের মধ্য দিয়ে বধূ এবং তার স্বজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ।
বর পক্ষের লোকজন গানের মধ্য দিয়ে তার পরিবার পরিজন বধূকে ভালভাবে দেখাশুনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । তারা বর-বধূ আজীবন ভালবাসবেন বলে শুভকামনা করেছেন ।
ফুং হোং চিয়াং অবিরামভাবে অতিথিদের মদ খেতে দেন । বর বধূ বলেন , চাকরি করার জন্য যখন তারা বাইরে যান , তখন তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরস্পর পরিচিত হন । অল্পবয়সীরা এখন নেট যুগে প্রবেশ করেছেন ।
বর বধূ বলেন , বিয়ের পর তারা গ্রামে কৃষি কাজ করবেন । কলা ও রাবার চাষ করবেন । এখন কলা ও রাবারের দাম বেড়েছে । সুতরাং চাকরি করার জন্য যারা শাংহাই ও পেইচিংসহ বিভিন্ন উন্নত অঞ্চলে গিয়েছিলেন , তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন । (থান)
1 2 |