১২ মে সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ানের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর চীন সরকার মানুষের স্বার্থকে শীর্ষ স্থানে রেখে অবিলম্বে দুর্যোগের তথ্য প্রকাশ করেছে এবং অভুতপূর্ব উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে সর্বাধিক আকারের আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহণ করেছে।
ভূমিকম্পের উদ্ধার প্রক্রিয়ায় চীন প্রথমবার বিদেশী উদ্ধার দল এবং বিদেশী সামরিক বিমানে পাঠানো উদ্ধার সামগ্রী গ্রহণ করেছে। রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের ২৭০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক উদ্ধার কর্মীরা সবচেয়ে গুরুতর দুর্গত অঞ্চল ছিংছুয়ান, শিফাং ও মিয়ানচু গিয়ে উদ্ধার কাজ করেছেন। ১৫০টিরও বেশি দেশের সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা এবং ১০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা চীনকে নানা ধরণের সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদাযের দেয়া উদ্ধার সামগ্রীর পরিমাণ ও পৌঁছানোর গতির ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
চীন সরকারের দ্রুত প্রতিক্রিয়া আর কার্যকর সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি ইনস্টিটিউটের উপ-মহাপরিচালক ওয়াং ই চৌ বলেছেন, ২০০৮ সালে চীন সংকট মোকাবিলার সময় আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। এখন আমরা আর দরজা বন্ধ করে একা একা সমস্যার সমাধান করি না। আমরা আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করি। আন্তর্জাতিক সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে আমাদের বিপদ মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। অনেক দেশ এখান থেকে উপলব্ধি করেছে যে, চীনের কূটনৈতিক উপায় আগের চেয়ে অনেক নমনীয় হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গৌণ ঋণ সংকট থেকে দ্রুত অবনতিশীল বিশ্ব জুড়ে আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও জনগণের সংশয় জেগে উঠেছে। বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন নিজের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে এবং ইতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে পেইচিংয়ে সারা বিশ্ব চীনের অবিচল কণ্ঠ শুনতে পেয়েছে, 'আস্থা হচ্ছে স্বর্ণ ও মুদ্রার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।' সপ্তম এশিয়া ও ইউরোপের শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পর চীনে অনুষ্ঠিত আরেকটি কূটনৈতিক মহা সম্মিলনী। সম্মেলনের আগে স্বাগতিক দেশ চীন আন্তর্জাতিক আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে এবারের সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়ে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এশিয়া ও ইউরোপের ৪৫টি সদস্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিগণ পেইচিংয়ে সম্মিলিত হয়ে 'সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সবার পারস্পরিক কল্যাণ অর্জন' এ প্রসঙ্গ নিয়ে বর্তমান আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটসহ বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জ আর এশিয়া ও ইউরোপের আঞ্চলিক সহযোগিতা গভীরতর করার বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন। সম্মেলনে তিনটি দলিল অনুমোদিত হয়েছে এবং ১৭টি সহযোগিতার প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়েছে।
নভেম্বর মাসে ওয়াশিংটনে ২০টি রাষ্ট্র গোষ্ঠীর নেতারা আর্থিক বাজার ও বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও 'যথাসাধ্য সহযোগিতায় যৌথভাবে কঠিন সময় অতিক্রম করা' নামে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, চীন ন্যায়সংগত, সহিষ্ণু ও শৃঙ্খল আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রের নতুন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। চীন অব্যাহতভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশে থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের আর্থিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।
ডিসেম্বর মাসে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতৃবৃন্দ জাপানের তিন দেশের সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক আর্থিক সমস্যা এবং অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে জড়িত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। তিন দেশের নেতারা প্রথম বার "১০+৩' নেতাদের সম্মেলন ব্যবস্থার বাইরে এককভাবে অধিবেশনের আয়োজন করেছেন এবং 'তিন দেশের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতি' প্রকাশ করেছেন।
২০০৮ সালের দিকে ফিরে তাকালে আমরা চীনের নেতাদের পরিশ্রমের কথা ভূলতে পারবো না। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে ২০০৮ সালে চীনের নেতাদের পদচিহ্ন পড়েছে। ২০০৮ সালেই বিশ্ব একটি প্রাচীন ও নবীন চীনকে জানতে পেরেছে। চীন পৃথিবীতে নিজের স্থান ও তার দায়িত্ব আরো স্পষ্টভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) 1 2 |