২০০৮ সাল চীনাদের জন্য এক উজ্জ্বল, সাফল্যের অসাধারণ বছর। ২০০৮ সাল সারা বিশ্বে চীন বিশেষ অবদান রেখেছে। বিগত এক বছর চীনের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে ফিরে তাকালে বুঝা যায়, অসাধারণ ২০০৮ সালে বিশ্বের কূটনৈতিক মঞ্চে চীন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জবাব দিয়েছে।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকীর শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও 'সুষম বিশ্ব' ধারণা উত্থাপন করেন। চীন কেবল সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার প্রস্তাবক নয়, বরং এ তত্ত্বের দৃঢ় নির্বাহকও।
২০০৮ সালে মানবজাতি সামাজিক উন্নয়নের অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ সম্মুখীন হয়। চীনের কূটনীতি সবসময়ই 'সুষম বিশ্ব' তত্ত্ব অনুসরণ করে চলছে। বিশ্ব কূটনৈতিক মঞ্চে চীন মৈত্রীর বন্ধন ও সহযোগিতার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি চীন অন্যের বিপদের সময় একটি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশের দায়িত্বশীল মনোভাব প্রদর্শন করেছে। প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও বলেছেন, 'চীন সবসময় নিজের উন্নয়ন আর মানবজাতির অভিন্ন অগ্রগতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছে। চীনের উন্নয়ন অন্য কারো জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না এবং কারো ওপর হুমকি হয়েও দাঁড়াবে না, তা কেবল বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য অনুকূল হবে।'
২০০৮ সালে অলিম্পিক গেমস ও প্যারালিম্পিক গেমসের পবিত্র অগ্নি চীনের জাতীয় স্টেডিয়াম 'বার্ড নেস্টে' পর পর জ্বলে উঠেছে। অলিম্পিকের পাঁচ রিং পতাকার ছায়ায় পেইচিং আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ২০৪টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ক্রীড়া প্রতিনিধি দল আর ৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতা ২৯তম অলিম্পিক গেমসে এসেছেন। এক সাথে এতো বেশি বিদেশী নেতার পেইচিংয়ে সমিলিত হওয়া চীনের ইতিহাসে এবারই প্রথম। অভ্যর্থনা ভোজ সভায় চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও বলেছেন, 'পেইচিং অলিম্পিক গেমস চীনা জনগণের এবং বিশ্ব জনগণের।' অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতা পুরোদমে ও শৃঙ্খলভাবে আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সাক্ষাত্ও পুরোদমে চলছিল। অলিম্পিক গেমস চলাকালে চীনের নেতারা চীন সফররত বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে ১০০ বারেরও বেশি সাক্ষাত্ করেছেন এবং বহু ক্ষেত্রে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।
চীনের কূটনীতি ইনস্টিটিউটের উপ-মহাপরিচালক চাং ছি রোং বলেছেন, চীন যথার্থভাবে স্বাগতিক দেশের মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিক দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক তত্পরতার আয়োজন করেছে। চীন গভীর আগ্রহ, বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবস্থা দিয়ে চীনের বন্ধুত্বপুর্ণ সহযোগিতার ভাবমূর্তি প্রদর্শন করেছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। অলিম্পিকের মাধ্যমে চীনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির অনেক উন্নতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে চীনের কূটনৈতিক তত্পরতার উন্নয়নের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সবল ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।'
২০০৮ সালে চীন বার বার পরীক্ষা সম্মুখীন হয়েছে। ১৪ মার্চ লাসায় সংঘর্ষ, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘটনা থেকে ১২ মে সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ান ভয়াবহ ভূমিকম্প পর্যন্ত চীন ধারাবাহিক বেশকিছু আকস্মিক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। চীন ধীর স্থীর মন নিয়ে চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করে বিশ্বের কাছে একটি প্রবল আত্মবিশ্বাসী চীনের ভাবমুর্তি তুলে ধরেছে।
লাসায় সংঘর্ষ, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর চীন দৃঢ়ভাবে দালাই গোষ্ঠি ও আন্তর্জাতিক চীন বিরোধী শক্তির হস্তক্ষেপ ও বানচালের বিরুদ্ধে পাল্টা-উদ্যোগ নিয়েছে এবং ধৈর্যের সঙ্গে বিশ্বের কাছে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওসহ চীনের রাষ্ট্রীয় নেতারা ঘটনার সত্যতা ব্যাখ্যা করার জন্য সক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি ২৬টি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বহুবার টেলিফোন কথা বলেছেন। কয়েকটি দেশে চীনের দূতাবাস স্বল্প সংখ্যক 'স্বাধীন তিব্বত' পন্থীদের সহিংস হামলার শিকার হয়। চীনের কূটনীতিবিদরা বাস্তব তত্পরতার মাধ্যমে চীনের মর্যাদা এবং বিদেশে চীনের কূটনৈতিক সংস্থার শৃঙ্খলা রক্ষা করেছেন। এরপর ১৩০টি দেশ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা চীন সরকারকে সমর্থন করার অবস্থান গ্রহণ করে।
1 2 |