v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' প্রকাশের পিছনের কথা
2009-03-02 18:16:45

সিন ছুন ইং

    ২৮শে ফেব্রুয়ারী সকালে চীনের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা – জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি ভোটদানের মাধ্যমে 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এ আইনটি তিন বছরের মধ্যে চার বার পর্যালোচনা করার পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এ বছরের পয়লা জুন তা কার্যকর হবে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ আইনের খসড়া আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হওযা থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারীতে অনুমোদন পাওয়া পর্যন্ত মোট ১৫ মাস সময় লেগেছে। এর মধ্যে 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' এর খসড়ায় বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে এবং সর্বাধিক সংখ্যায় সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মতামত ও প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আইনের বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি পরিক্ষা ব্যবস্থা, অনিরাপদ খাদ্যকে ফেরত আনার ব্যবস্থা, খাদ্যের সংযোজনের বস্তু অনুমোদন ব্যবস্থাসহ ধারাবাহিক ব্যবস্থা।

    এ আইন অনুমোদনের পর চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির আইন বিষয়ক কমিটির উপ-মহাপরিচালক রেন ছুন ইং তথ্য মাধ্যমকে বলেছেন, 'এ আইন প্রণয়ন করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছে। কারণ এ আইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। এখান থেকে খাদ্য নিরাপত্তা কাজের ওপর পার্টি ও দেশের সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।'

    তিনি ঠিকই বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা সত্যি সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ খাবার হচ্ছে জনগণের আকাশ। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় পরিষদের ৫৯তম স্থায়ী অধিবেশনে খাদ্য নিরাপত্তার কাজ আরো জোরদার করা এবং 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রীয় পরিষদের আইন প্রণয়ন কার্যালয় সংশোধনের কাজ শুরু করে। তারা বিভিন্ন পক্ষের মতামত গ্রহণ করে, গবেষণা ও তদন্তের ভিত্তিতে আইনের সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু সুসম্পন্ন করেছে। তিন বছর সময় ধরে আইন প্রণয়নের মৌলিক কাজ মোটামুটি শেষ করেছে।

    এর আগে ১৯৯৫ সালে কার্যকর 'খাদ্য স্বাস্থ্য আইন' ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা গোটা বিশ্বের সমস্যায় পরিণত হওয়ার প্রেক্ষাপটে চীনে যথাক্রমে খাদ্যের মানদন্ড ভিন্ন, আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা দুর্বল, খাদ্য পরীক্ষানিরীক্ষাকারী সংস্থা নিয়মমাফিক নয়-এ ধরনের নানা সমস্যা দেখা গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা আইন সংশোধন কাজের পাশাপাশি ঝুঁকির পর্যালোচনাসহ সব ক্ষেত্রের পরিচালনা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা অতীতের 'খাদ্য নিরাপত্তা' মানে 'খাদ্য স্বাস্থ্যের' ধারণা অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে।

    সে জন্য নতুন 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' প্রণয়ন করা নাকি বিদ্যমান 'খাদ্য স্বাস্থ্য আইন'কে সংশোধন করা এই বিষয় নিয়ে তিন বছর ধরে তর্কবিতর্ক চলে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও স্বাক্ষরিত 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' এর খসড়া প্রথম বারের মতো জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য দাখিল করা হয়েছে। তখন থেকেই নির্ধারিত হয়, এ নতুন আইনের নাম 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন'।

    উল্লেখ্য, বিংশ শতাব্দীর ৯০'র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বৃটেন, রাশিয়া ও জাপানসহ নানা দেশ পর পর 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' প্রণয়ন করেছে।

    'সানলু গুড়ো দুধ ঘটনা' উদ্ঘাটনের পর খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জনসাধারণের দৃষ্টিতে আসে। আইন প্রণয়নকারী সংস্থা খুব দ্রুত এ গুরুতর ঘটনা নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা শুরু করে। এরই পটভূমিতে ২০০৮ সালের অক্টোবরে 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন'-এর খসড়া একাদশতম জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির পঞ্চম অধিবেশনে তৃতীয় বার পর্যালোচনা করা হয়। চীনের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় গণ কংগ্রেসে তৃতীয় দফা পর্যালোচনা করার পর আইনের খসড়ায় গুরুতর কোন সংশোধন আনা হয় নি। কেবল কিছু ধারায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে, তারপর ভোটাভুটির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

    কিন্তু 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' এর তৃতীয় দফা পর্যালোচনার আটটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, সানলু গুড়ো দুধ ঘটনার জন্য ছ'টি ক্ষেত্রের সংশোধন করা হয়েছে। বলা যায়, 'সানলু গুড়ো দুধ ঘটনা থেকে দেয়া ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার জন্য এবার খাদ্য নিরাপত্তা আইনে অনেক নতুন ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

    যেমন খাদ্যে সংযোজনের বস্তু 'মেলামাইন' হচ্ছে গুড়ো দুধ ঘটনার মূল অপরাধ। খাদ্য নিরাপত্তা আইনে সবচেয়ে উন্নত ধারণা গ্রহণ করা হয়েছে, তা হলো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা না থাকলে খাদ্যে সংযোজনের বস্তু ব্যবহার করা যাবে না। এই আইনের ৪৩ থেকে ৪৬ ধারায় খাদ্যে সংযোজনের বস্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কড়া তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে। অর্থাত্ অনুমোদন ছাড়া অক্ষত হলেও সংযোজনের বস্তু ব্যবহার করা যাবে না। অনুমোদন পেতে চাইলে প্রথমে ঝুঁকি পর্যালোচনার পর্যায় পার হতে হয়। তা নাহলে এটা বেআইনী হবে।

    'সানলু গুড়ো দুধ ঘটনা' থেকে সাম্প্রতিক দশ বছরে চীনের পরীক্ষা মুক্ত ব্যবস্থার বিরাট ছিদ্র উদঘাটিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পরিষদ 'খাদ্য নিরাপত্তা আইন' দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খাদ্যের তত্ত্বাবধানহীন ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

1 2
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China