লোছুয়ান আপেল চাষের একটি বড় জেলা ।এখানে কোনো শিল্প নেই ।কৃষকদের ৯৫শতাংশের আয় আপেল থেকে আসে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে,কৃষকদের গড়পরতা আপেল বাগানের আয়তনের দিক থেকে লোছুয়ানের স্থানও প্রথম । আপেল চাষের পর কৃষকদের জীবন ক্রমাগত উন্নত হয়েছে । আপেল চাষের উন্নয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে ।এর আকর্ষণে আশেপাশে এলাকার অধিক থেকে অধিকতর লোক লোছুয়ানে মজুরী করতে আসেন ।

এখন লোছুয়ান জেলার ৪০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আপেল চাষ করা হয় । আপেল চাষে উপকৃত হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে । কথা আছে যে,ধনী হতে চাইলে সর্বপ্রথমে রাস্তা তৈরী করতে হয় । এর অর্থ হল,পরিবহনের রাস্তা থাকলে যে কোনো দ্রব্য বাইরে থেকে এলে বিনিময় করা যায় । লোছুয়ান জেলা ও থানা সরকার যৌথ উদ্যোগে ফলবাগানগামী সকল রাস্তা পাকা করেছে ।এই সব রাস্তার মাধ্যমে লোছুয়ানের কৃষকেরা বাড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতে পারেন এবং পাশাপাশি লোছুয়ানের আপেল দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ছাড়াও কানাডা, থাইল্যান্ড, রাশিয়া ও বৃটেনসহ বিশ বাইশটি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানিও হয় ।

এখন লোছুয়ানের অধিবাসীদের মধ্যে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে । তাহল ধনী হতে চাইলে সবপ্রথমে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা দরকার ।এখন রাস্তা ছাড়া কৃষকেরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য পান ও আপেল বিক্রি করেন । এ সম্পকর্কে মিঃ ইয়াং সিফোং বলেন, এখন আমাদের নিজের ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে । এই ওয়েইবসাইটের মাধ্যমে সরকারের তথ্য প্রচারিত হয় এবং ফল-কৃষকেরা এর মাধ্যমে ফলের বিক্রি ও দাম সম্পর্কিত তথ্য পান ।

এখন লোছুয়ানের ৩৩হাজার হেক্টর আয়তনের আপেল বাগানের বার্ষিক উত্পাদন পরিমান প্রায় ৬ লাখ টন । আপেল বিক্রির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্যুয়ে হুয়ালিং বলেন,শুরুতে আমরা নিজেরাই বাজারে আপেল বিক্রি করতাম । এমনকি আমার স্বামী নিজেই কুয়াংচৌ ও সাংহাই গিয়ে বিক্রি করেছিলেন ।এখন আমাদের আর বাইরে যাওয়ার দরকার নেই ।ফল ব্যবসায়ীরা আমাদের এখানে আপেল কিনতে আসেন । আমাদের শুধু আপেলের গুণগতমান উন্নত করার কথা ভাবতে হয় ।

লোছুয়ানের আপেল আকারে সুন্দর , রঙ উজ্জ্বল,সুস্বাদু এবং নিরাপদ । এর প্রতিটি মানদন্ড বিশ্বের আপেলগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে । পেইচিং অলিম্পিক গেমস চলকালে বিভিন্নদেশের খেলোয়াড়, সরকারী কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট অতিথিরা যে আপেল খেয়েছেন তা সবই লোছুয়ানের । ইয়েনআন ফল গ্রুপ কোম্পানি আপেল রপ্তানি ও আপেলজাত দ্রব্য বিক্রির দায়িত্ব পালন করে । এ গ্রুপ কোম্পানির বিক্রি ব্যবস্থাপক চো সিয়াওহোং বলেন, আমাদের গ্রুপ কোম্পানি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ।এর একটি ৬ হাজার টনের হাওয়া নিয়ন্ত্রিত গুদাম , একটি ৬ হাজার টনের হিম গুদাম এবং প্রতি ঘন্টায় ২০টনের আপেল বাছাই করতে সক্ষম ইতালির দুটি স্বয়ংক্রীয় লাইন আছে । গ্রুপ কোম্পানির মাধ্যমে লোছুয়ানের আপেল চাষ ধাপেধাপে "অর্ডারি কৃষিতে" পরিণত হয়েছে ।

লোছুয়ানে আপেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামর্থ্য,বিশেষ করে লোছুয়ানের আপেলের গুণগতমান ও উত্পাদনের পরিমান উন্নত করার জন্য ২০০৩ সালে চীনের কৃষি মন্ত্রণালয় সেনসি প্রদেশের লোছুয়ানে আপেল উত্পাদনের জাতীয় মানদন্ডসম্পন্ন পরীক্ষামূলক বাগান প্রতিষ্ঠা করেছে ।
আপেল চাষ করায় লোছুয়ানের কৃষকরা দারিদ্র্য থেকে সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছেন । কৃষির নতুন উত্পাদন কাঠামোতে কৃষকেরা ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী । কৃষি সম্পর্কে সরকারের সুবিধাজনক নীতি কৃষকদের উত্পাদন উন্নয়নের আস্থাকে বাড়িয়েছে । 1 2 |