উত্তর পূর্ব চীনের সানসি প্রদেশের লোছুয়ান জেলা " আপেলের দেশ" নামে পরিচত ।
 অক্টোবর মাস আপেলের মৌসুম। একটার পর একটা আপেল ক্ষেতের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা সড়ক পথে দাঁড়িয়ে চারপাশের লাল লাল আপেল দেখা যায় । পথের পাশের একটি আপেল বাগানে বুড়ো ওয়াং স্বামী-স্ত্রী দুজন ও তাদের ছেলে ও ছেলের বৌ ব্যস্ত ছিলেন ।গাছ ভরা আপেল দেখে বুড়ো ওয়াং আনন্দিত হয়ে ওঠেন । তিনি বলেন,আপেল চাষ করা ভাল । আপেলের উত্পাদনের পরিমান ও দাম বেশি । এখন আমাদের জীবন খুব স্বচ্ছল । বাড়িতে টেলিভিশন , ফ্রিজা , টেলিফোন ও মোবাইল ফোন সবই আছে ।

লৌএস মালভুমিতে অবস্থিত লোছুয়ান জেলায় পানির অভাব, জমি অনুর্বর । এখানকার কৃষকেরা যুগযুগ ধরে আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করে আসছেন । তবে তারা যুগযুগ ধরে নিজ নিজ বাড়িঘরের পেছনে বা সামনে আপেল গাছ লাগানোর ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছেন ।

চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর কৃষিও বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে । আপেলের আকার , রঙ এবং মিষ্টির কারণে লোছুয়ানের আপেল বাজারে সমাদর পেয়েছে । স্থানীয় সরকার সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করে কৃষকদের আপেল চাষ করতে উত্সাহ দেয় ।ঠিক এ সময় বুড়ো ওয়াং নিজের কিছু জমিতে আপেল গাছ লাগাতে শুরু করেন ।আপেল উত্পাদনের পরিমান ও বিক্রিমূল্য মন্দ নয় বলে তাদের জীবন দিন দিন উন্নত হয়ে উঠেছে ।

এখন তারা শুধু নতুন বাড়ি নির্মান করেছেন তা নয় মোটরসাইকেলও কিনেছেন । গত কয়েক বছরের পরিবর্তনের কথা স্মরণ করে বুড়ো ওয়াংয়ের ছেলে ওয়াং সিয়াওমিন বলেন, আগে আমরা শুধু খাদ্যশস্য চাষ করতাম । আপেল চাষের পর আমাদের আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে । ফল কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী আমরা নানা জাতের আপেল চাষ করি ।

লোছুয়ানের আপেল চাষ সম্পর্কে লোছুয়ান জেলার আপেল উত্পাদন পরিচালনা অফিসের উপপ্রধান ইয়াং সিফোং বলেন,লোছুয়ানের আপেল উত্পাদনের পরিমান বেশি এবং গুণগতমান উন্নত । কারণ লোছুয়ানের গড়পরতা সামুদ্রিক উচ্চতা, মাটির গড়পরতা ঘনত্ব এবং আবহাওয়া সহ নানা প্রাকৃতিক অবস্থা আপেল চাষের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । ১৯৭৪ সালে বিদেশে রপ্তানি করা আপেল নির্বাচনে লোছুয়ানের আপেল সমাদর পেয়েছে ।যুক্তরাষ্ট্রের আপেলের তুলনায় লোছুয়ানের আপেল মন্দ নয় এমন কি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও ভাল ।

তাছাড়া জেলা ও থানার স্থানীয় সরকার কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য নানা ব্যবস্থাও নিয়েছে । এ সম্পর্কে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির ইয়েনআন কমিটির কর্মকর্তা চাং চিয়েনরু বলেন,এখন কৃষককে আপেল চাষে কোনো ফি দিতে হয় না এবং আপেল বিক্রির যে আয় হয় তা কৃষকদের নিজের হয় এবং সরকারকে এক পয়সার করও দিতে হয় না । পরন্তু যাতে কৃষকদের আপেল বিক্রি করতে সুবিধা হয় সেজন্য সরকার তাদের ফল বাগান পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করে দিয়ে তাদেরকে ফল চাষের কৌশল শেখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পাঠিয়েছে ।

1 2 |