৩০ বছর আগে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের শুরু থেকেই শুরু হয়েছে চীনের সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মকান্ড।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে আধুনিক চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তাত্পর্যপূর্ণ অধিবেশন – চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অধিবেশনে তেং সিয়াও পিংয়ের নেতৃত্বে নয়া চীনের দ্বিতীয় নেতৃগ্রুপ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব উন্নয়নের সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়ে চীনা জাতির ভবিষ্যত ও নিয়তির কথা বিবেচনা করে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চীন তার আগের 'শ্রেণী সংগ্রাম'-এর ধারণাকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের গুরুত্বকে সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়নের নির্মাণকাজের ওপর ছেড়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক নির্মাণ কাজকে দেশ উন্নয়নের মূল কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তখন থেকেই চীন আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।
ইয়ান হোং ছান
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন আয়োজনের প্রায় একই সময় পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের ফাংইয়াং জেলার সিয়াও কাং গ্রামের একটি কুটিরে ইয়ান হোং ছান দশ বারো জন কৃষককে নিয়ে একটি কাগজে আঙুলের ছাপ নিয়ে গ্রামের জমি বিভিন্ন কৃষক পরিবারকে বন্টন করে ঠিকা ব্যবস্থা শুরু করে। অর্থাত্ কৃষকরা জমি ঠিকা নেয়ার পর কী চাষ করবে বা কীভাবে চাষ করবে তা নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ফসল কাটার পর দেশ ও গোষ্ঠিকে প্রাপ্য অংশ দেয়ার পর বাকি অংশ নিজের কাছে রেখে দেবে। এ ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে চীনের গ্রামের উত্পাদন শক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু এ ব্যবস্থা তখনকার চীনের আইন ও নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। ইয়ান হোং ছান তখনকার কথা স্মরণ করে বলেন, 'চুক্তিতে আমি লিখেছি, প্রতি বছর কৃষক পরিবারকে নিয়ম অনুযায়ী সরকারকে ফসল দিতে হবে। সবাইকে নিয়ে আলোচনা করার পর আরেকটি কথা সংযুক্ত করেছি, কারণ আমরা ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করছি। যদি ক্যাডারদের এর জন্য জেলখানায় যেতে হয় বা প্রাণ হারায়, তাহলে গ্রামের অন্য সদস্যর ক্যাডারদের সন্তানদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালন করবে।'
এ সাহসিক কর্মকান্ড চীনের সংস্কারে অগ্নিস্ফুলিংগের মত কাজ করেছে। এরপর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চীনের গ্রাম থেকে শহর, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে সামাজিক জীবনের প্রায় সর্ব ক্ষেত্রে চালু হয়েছে।
উ শু ছিং
১৯৮০ সালে চীন শেনচেন, সিয়ামেন, চুহাই ও শানথো এই চারটি অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চলে পশ্চিমা অর্থ, প্রযুক্তি ও পরিচালনা পদ্ধতি প্রয়োগ আকর্ষণ করে। একই বছর সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীনের প্রথম দেশি-বিদেশি যৌথ শিল্পপ্রতিষ্ঠান --- পেইচিং বিমান খাদ্য লিমিটেড কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিদেশী বিনিয়োগকারী --- হংকংয়ের নামকরা নারী শিল্পপতি উ শু ছিং স্মরণ করে বলেন, 'তখন আমি উহান থেকে ট্রেনে করে কুয়াংচৌ শহরে গিয়েছি। কুয়াংচৌ পৌঁছার পর আবার ট্রেনে হংকং ফিরে যাই। উহান থেকে কুয়াংচৌ যাওয়ার পথে আমি ট্রেনের বেতার সম্প্রচার শুনেছি, মিঃ তেং সিয়াও পিং বলেন, এখন আমাদের দেশ বিদেশীদের জন্য বৈদেশিক উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা বাইরের ব্যবসায়ীদের চীনে এসে বিনিয়োগ করতে স্বাগত জানাই।'
সংস্কারের অগ্রগতির পাশাপাশি চীনারাও ধাপে ধাপে উপলব্ধি করেছে যে, চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা আর বাজার অর্থনীতির মধ্যে দ্বন্দ নেই। গণমালিকানা অর্থনীতি বাস্তবায়নের জন্য নানা পদ্ধতিতে চেষ্টা করা যায়। ১৯৯২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৪তম কেন্দ্রীয় কমিটির অধিবেশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তখন থেকেই নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর চালু হওয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চীনের অর্থনৈতিক মঞ্চ থেকে উধাউ হয়েছে।
1 2 |