নয়া চীনের ইতিহাসে ১৯৭৮ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ষ। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বিশেষ প্রতীক হিসেবে চীনকে এনে দিয়েছে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের এক নতুন যুগ।
১৯৭৮ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এক বছর মধ্যে ৭০ বছর বয়সী চীনের নেতা তেং সিয়াও পিং পর পর মিয়ানমার, নেপাল, উত্তর কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ সফর করেছেন। এ ধারাবাহিক কূটনৈতিক তত্পরতা থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, প্রাচ্যের এ প্রাচীন দেশ চীন বিশ্বের কাছে দ্বার খুলেছে এবং ধাপে ধাপে বিশ্বের কাছে চলে আসছে।
৩০ বছরে চীন নানা আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, সংস্কার ও সমাজ সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা, সক্রিয়ভাবে নানা বহুপক্ষীয় রাজনৈতিক সংলাপ ও আঞ্চলিক সংলাপে এবং জাতিসংঘের নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপে অংশ নেয়ার মাধ্যমে রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় যোগদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। চীন বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী হয়েছে।
অর্থনীতি ক্ষেত্রে চীন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল ও সমঝোতার মাত্রা নিরন্তরভাবে গভীর হয়ে উঠছে। ১৯৭৮ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের মূল্য কেবল ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। তখন চীন ও বিশ্বের বাণিজ্যিক লেনদেনও প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। ২০০৭ সালে চীনের আমদানি ও রপ্তানীর মোট মূল্য ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের গভীরতা আর চীনের সার্বিক রাষ্ট্রীয় শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চীনের অর্থনীতি আর বিশ্বের অর্থনীতির বিনিময় দিনে দিনে ব্যাপক হয়েছে। ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের যোগদান প্রতীকমূলক ঘটনা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে যে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন উচ্চ মানে বিশ্বের সঙ্গে সমমাপে চলছে।
বৈদেশিক নীতি ক্ষেত্রে চীন আরো ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের আগে পাশ্চাত্য দেশের মানুষের চোখে চীন প্রান্ডিক শক্তি ছিল। কিন্তু বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এক প্রধান অবলম্বনীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমস্যায় চীন 'অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নের অন্বেষণ করার' ব্যবস্থাপনার কৌশল অনুসরণ করে। গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক ব্যাপারে চীন সক্রিয়, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ আর এশিয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি বৃহত্তম দেশের বৈশিষ্টময় ভূমিকা পালন করে।
চীন সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে নানা ধরনের আঞ্চলিক সংস্থায় যোগদান, বিশেষ করে নিকটবর্তী অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মেলামেশা ও অভিন্ন উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেয়। চীন হচ্ছে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দেশের অন্যতম এবং আসিয়ান অঞ্চল ফোরামের একনিষ্ঠ অংশগ্রহণকারী। চীন কোরিয় উপদ্বীপের পারমাণবিক সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠক আর ইরানের পারমাণবিক সমস্যা সংক্রান্ত ছ'দেশের সমন্বয় ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ২০০৩ সালের জুন মাস থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও পাশ্চাত্য আট দেশের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীন শিল্পোন্নত দেশ গোষ্ঠীর সঙ্গে সহযোগিতা করার গভীর কৌতুহল দেখিয়েছে।
1 2 |